শুক্রবার, ২৮ জুন, ২০১৩

আমি দেখেছি খালের ঘোলা জল ...আলি প্রান


আমি দেখেছি খালের ঘোলা জল
জলে পুঁটির নাচ
সেই চোখে দেখে নাও তুমি
অপেরার নৃত্য-কাচ
আমার কোচরে মাছের নৃত্য
আমার কোচরে শাক
তোমার ভুবনে ফুল আর ফল
প্রজাপতি রং থাক
বাবুই আমার বড় ভালো লাগে
আমি পাপিয়া খুঁজি
মায়ের আঁচলে মুখ মুছে আমি
তার কোলে চোখ বুজি
তুমি দেখি নাও কম্পিউটার
কল্পনা হার মানা
ঘুমাও তুমি তাপানুকূলে
কোন কাজে নেই মানা

আমার ঘুড়ি আমার নাটাই
আমার বাবুই বাসা
আমার কোচর ভাইত্যা কিংবা
শিয়াল-মুতিতে ঠাসা
কাচা পাকা ধান গমের নৃত্য
খেসারি সরিষার হাসি
কাঁচা মটরের মিষ্টি-দানা
সবচেয়ে ভালো বাসি
তোমার চারপাশ কাচের দেয়াল
খাঁচায় বন্দি পাখি
তোমার চোখে হাজার স্বপ্ন
সপ্নকথক আঁখি

আমার দুচোখ শিশিরে ধোয়া
কাকের মত চোখ
আমার চোখে স্বপ্ন ভালোবাসা
আমার চোখে শোক
আমার চোখে খরস্রোতা নদী
দুখের ভাঙ্গা ভেলা
আমার চোখে বিজলী চমক
হাসি কান্নার খেলা
এই চোখ দেখে সব সুন্দর
তোমার হৃদয়ে বসে
এই চোখ সব অজানাকে জেনে
বাঁকা হাসি ফের হাসে

আমি যা পারিনি ভুলেও দেখিতে
কল্পনাও করেনি সাহস
তোমাতে আমার দৃষ্টি রাখিয়া
উড়িয়েছি হৃদয় সারস

আমার দুচোখ আঁধার গুছাবে
দেখাবে কাউকে আলো
অন্যের চোখে বেঁচে রব আমি
এর চেয়ে বলো কি ভালো? —

বুধবার, ২৬ জুন, ২০১৩

আজই পাকা হবে কথা। আতীক কাজী।




কাহিনী ২/
আতীক কাজী।

আজই পাকা হবে কথা।
ঘর ছাড়বে ঘরের সবচেয়ে দামি আদরটি।
পর যদিও হয়ে যাবে না
নিজেরও থাকবেনা কেবলই।

সেই প্রথম আমাকে
প্রশান্তের বিশালতায় আর
মারিয়ানা ট্রেঞ্চের গভীরতায়
পিতৃত্বের কাব্য-সুখ জানিয়েছিলো।
অচিরেই সে ছেড়ে যাবে ঘর।

বাধবে নিজের ঘর।

অথচ, যেদিন প্রথম কেঁদেছিলো সে
অনাবিল আনন্দে হেসেছিলাম আমি
আবারও কাঁদবে সে জানি
এবার কাঁদবে সবাই এখোনই কাঁদছি আমি।

খুব দূরে কোথাও নয়।
একই শহরেই থাকবে, তদুপরি
যখোন খুশী দেখতে পাওয়া যাবে,
কেবল আমি যখন ফিরবো নিজের ঘরে
বিছানার পাশে বসিয়ে আদরে
সারাদিনের ফিরিস্তি শুনা হবে না, আর
আদরের হাত ঠকবে না কপালে।

এখোনই আসবে ওরা
ঘরে ফিরার তাড়ায় তাই
একটু আগেই অফিস আজ।
কথাবার্তা পাকা হবে আজই
আমার সবচেয়ে যে প্রিয় কবিতাটি
স্বত্ব সহই চলে যাবে অচিরেই।

আমার নিজেরই রক্তে লেখা
কবিতাটি আমি লিখিনি একা,
লিখেছেন বিধাতা, লিখছি আমি
আর লিখছে তার মা।

অতঃপর, তিনটি প্রাণী রয়ে যাবো পিছনে
গল্পটিও আছে এই সাথে
অন্য কোনও কবির প্রিয় কোনো কবিতায়
একদিন হয়তো পূর্ণ হবে আমার এ শুন্য ঘরখানি
তবু হৃদয়ের সব শূন্য কি কখোনো পুর্ন হয়ে যায়?

অবোধ ইচ্ছেদের নিযুত অনুনয়
তবু, এইতো কাহিনিটা আমার
অনায়াস কবিতাটি আর গল্প সমুদয়।

(নিউ ইয়র্ক ২৬ জুন ২০১৩)
(আমার মেয়েটির জন্য সবার কাছে দোয়া চাইছি)

কাহিনী/ কাজী আতীক। নিউ ইয়র্ক ২৬ জুন ২০১৩


কাহিনী/
কাজী আতীক। 

গোপন প্রণয় হেঁটে পৌছে যায় আয়োজনে 
অতঃপর অধরে আদর জমা হলে 
নিঃশ্বাস ভারি পায়ে হেঁটে যায়,
লোহিত কণারা আড়মোড়া ভেঙে
জেগে ওঠে হৃদয়ের পাচিল টপকায়।
ডিপ ডিপ হার্ট বিট ঘড়ির দোলক
খসে পড়ে লজ্জার নোলক।

এ ভাবেই শুরু সেই কাহিনী।

তারপর ভালোবাসা বসত শুরু
একে একে দুটো ঘর বাড়ে
পায়ে পায়ে বয়সী আয়েসও আসে
সাথে আনে আনকোরা বোধ
ডিপ ডিপ হার্ট-বিট ক্ষতিতে ভূলোক
পেয়ে বসে নস্টালজিয়া পুলক।

এ ভাবেই এগোয় সেই কাহিনী।

অচিরেই তৈরি হবে নতুন কাহিনী বলয়
বেড়ে যাওয়া দুটো ঘরের একটি যদি
অনায়াস কবিতা, অন্যটি কাহিনী সমুদয়।

(নিউ ইয়র্ক ২৬ জুন ২০১৩)

১.সংশ্লেষ ২.এসো হোমওয়ার্ক করি / রাহুল রায়চৌধুরী


সংশ্লেষ
রাহুল রায়চৌধুরী
.....................

নিদাঘ ক্লান্তি । শর্ত বিহীন । নিদ্রা ।
তুমি অচেতন । পথ ভোলা নদী । দিকভূল ।

সময় কঠিন । সঠিক বেঠিক । চিহ্ন ।
ফালাফালা মন । চিন্তারা সব । ঝংকার ।

স্তব্ধ দুপুর । সৃষ্টি বিহীন । রৌদ্র ।
মানবিক মন । শঙ্কিত বোধ । সংকট ।

ভেসে চলা সুখ । দ্বীপ ভেবে ভুল । সন্ধ্যা ।
মেঘলা আকাশ । ছাতা নেই হাতে । চুপ্পুস ।

নির্ণীত পথ । নির্বাধ আজি । ব্যপ্তি ।
ব্যাকরণচ্যুতি । নির্বাণ লাভ । সংশ্লেষ ।
.....................
২৪/৫/২০১৩


এসো হোমওয়ার্ক করি
রাহুল রায়চৌধুরী

এসো আজ ভিতরের বোধটাকে ছোট্ট হোমওয়ার্ক করাই ~
তুমি চশমা এনেছো তো, সঙ্গে ?

শক্ত করে ধরো অমাবস্যাটাকে । একটু প্যাঁচ কষো দেখি ।
কি এলো হাতে ? সন্দেশ, না জিভেগজা ?

এবার উঠে পড় ~
সটান দৃষ্টিতে ভেদ করে ফ্যালো তো দেখি, এঁদো গলির ঐ টয়লেট দরজাটাকে !
দ্যাখো, ভিজে চুল মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসা অদ্ভুত ঐ জীবটাকে ~

ওকে দেখেই না ঠোঁট চেটেছো এতকাল !
নির্লজ্জ লজ্জাটাকে শরবৎ বানিয়ে ফ্যালো তবে ~

দু’পায়েই হাঁটছে ............

বোধের স্নায়ু কি আজ হ্যাঁচকা টান দিল ভিতরের মানুষটাকে ?

চশমা পকেটে ভরে ফ্যালো ।
এবার তুমিও হাঁটবে দু’পায়ে ~

সোমবার, ২৪ জুন, ২০১৩

সারাদিন বৃষ্টিতে / ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী ২৫.০৬.২০১৩ / বেলা ১১.০৭


সারাদিন বৃষ্টিতে আমি অস্তব্যাস্ত
অসময়ে এলো ফোন টা তাই ব্যাস্ত
ভ্যাপসা গরমে জদিও অভ্যস্ত
ঠান্ডা জল খাওয়াতে জীবন আস্যস্ত 
সংসারের চাপে জীবন ভারা ক্রান্ত
আমি হয়েযাচ্ছি দিন দিন রোগাক্রান্ত
টেন সন্ সাম্লে হচ্ছি পরিশ্রান্ত
তোবুও আছি , থাকবো ; ধীর শান্ত !!

রবিবার, ২৩ জুন, ২০১৩

তালি / শর্মিষ্ঠা ঘোষ




তালি / শর্মিষ্ঠা ঘোষ

কষটে ঠোঁটে সিগার গুঁজে
ঊরু জঙ্ঘার আদিম ভাঁজে
অমনিভোরাস কোপন মতি
শিল্প তালুক গাড়েন

শাবাশ , তিনি বিধিমতে আঁতেল

চালচিত্তির উলটপুরাণ
চামচে জানে ছটাক সমান
পেন্ডুলামের লজ্জা সনদ
দোলাচলে ইতস্তত থামেন

আমেন , তিনি অবিমৃশ্য আঁতেল

যৌনপিছল শব্দশকট
উল্টানো চোখ বিশদ প্রকট
অলিগলি দুরভিসন্ধি
সুগারকোটেড প্যাঁচপয়জার কষেন

আহা , তিনি অবিনশ্বর আঁতেল

প্রশস্তি গান নগদ খসান
হাওয়া মোরগ দিব্য নিদান
আপনা রাজ্যে চরিত্রবান
জুতাসেলাই চণ্ডীপাঠে ঢাকেন

( তালি ) , তিনি ট্রেনডসেটার আঁতেল

শনিবার, ২২ জুন, ২০১৩

বর্ষা কালে বন্যা, শ্রাবনে নামে ঢল / আবু জফর


বর্ষা কালে বন্যা, শ্রাবনে নামে ঢল,
হৃদয়মাঝে কান্না, চোখে নামে জল।
ঝির ঝির বৃষ্টি, শিরশির করে মন,
মৃদুমন্দ হাওয়া ছুঁয়ে যায় সারাক্ষণ।
ভালবাসা সর্বনাশা আমার জীবনে,
কেন যে প্রেম জাগে হৃদয়ের গহীনে।
বৃষ্টির ফোটায়, ভেজায় কদম ফুল,
উত্তাল ঢেউয়ে নদী ভাঙ্গে তার কূল।
চক্ষে আমার তৃষ্ণা,মনে আছে বাসনা,
হৃদয়ে উঠেছে ঝড় কে দিবে শান্তনা।
নিঃস্ব করেছ আমায় কি নিঠুর ছলনায়,
তুমি হীনা এ জীবন একাকী অসহায়।
কেন দূরে অকারণ মায়াবী বাঁধন ছিঁড়ে,
ফিরে এসো বন্ধু ওগো এই সুখের নীড়ে।

শুক্রবার, ২১ জুন, ২০১৩

দুটি প্রাণ মিলেমিশে হলো একাকার


দুটি প্রাণ মিলেমিশে হলো একাকার

প্রেমে, পরিণয়ে হলো প্রণয় বিহার ।

 
নয়নে নয়নে মিলে চিন পরিচয়,

 
একে অপরেতে লীন হলো যে হৃদয় ।

 
দুটি মন দুটো দিক হতে ছুটে এসে,

 
অভিন্ন হয়ে এক বিন্দুতে মিশে ।


অভিন্ন রুপ রঙ্গ করে কি প্রকাশ,


একেতে দুজনার হলো যে বিকাশ ।


এভাবেই যাক কেটে প্রতিটি প্রহর,


দু-জনাতে দোল তুলে সূখেরী লহর । 

একটি উজ্বল ষাঁড় / পূর্নেন্দু পত্রী



চিরদিনের কবিতা
একটি উজ্বল ষাঁড় / পূর্নেন্দু পত্রী

একটি উজ্বল ষাঁড় লিফটে চেপে ঊর্ধে উঠে যান,
তখনই বন্দনা গান গেয়ে ওঠে একপাল কৃতার্থ ছাগল ।
জুলিয়াস সিজারের মতো তিনি, মিশরের ফারাও-এর মতো
যেন এই শতাব্দীর তরুণ বয়সী এক নবতম আলেকজান্ডার
পাতলা ক্রীমের মতো মহান হাসি তাঁর মুখে
চেঙ্গিজ খানের মতো চোখ বহুদূর
স্বপ্নের রক্তাক্ত সিঁড়ি, যেন জেনে গিয়েছেন তিনি
ভূমধ্য সাগর এসে পায়ে পড়ে হবে পুষ্করিনী ।

প্রভু, কোন দৈববাণী দেবেন কি আজ ?
কোন ধন্য সার্কুলার ? অথবা সুসমাচার টাইপরাইটারে ?
বিশ্বস্ত বাদুড় বৃন্দ এইভাবে নিজেদের ল্যাজের চামরে
নিভৃতে আরতি করে যায় ।

একটি উজ্বল ষাঁড় মেহগনি কাঠের মস্ত সিংহাসনে, একগুচ্ছ চাবি
খুলে যান সারি সারি ড্রয়ার, ফাইল, খোপ-ঝোপ
যুদ্ধের ম্যাপের মতো দেগে যান রণক্ষেত্র আর আক্রমণ
তূরী-ভেরী-জগঝম্প বাজে টেলিফোনে ।

আমি চাইনা লালকালি দিয়ে কেউ কবিতা লিখুক
আমি চাইনা কারো ঘাড়ে আলোক শিখার মতো দর্পিত কেশর ।
ধ্রুবতারা ভালোবেসে, ভালোবেসে বেহুলার ভেলা
গাছের শিকড় থেকে খোলা হাওয়া পেড়ে আনে যারা,

যাদের হৃৎপিণ্ড জুড়ে জেগে আছে সমুদ্রের শাখ,
আমি চাইনা তারা ইঁদুরের গর্তে বসে খঞ্জনী বাজাক ।
একটি উজ্বল ষাঁড় এইভাবে পেয়ে গেছে তুরুপের সবকটি তাস ।
শুনেছি এবার তিনি নক্ষত্র মন্ডলে
সত্তর বিঘের মতো জমি কিনে করবেন আলু-কুমড়ো-পটলের চাষ ।

‘রাজকাহিনী’ – বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়


সত্তরের কবিতা
‘রাজকাহিনী’ – বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

মহান দেশের মহান রাজা
চারদিকে তোর দারুণ মজা
জমে উঠেছে বন্যা, দাঙ্গা মহামারীর নাটক ।
তুই পুণ্যশ্লোক । -

লঙ্গরখানার খিচুড়ি দেশকে বলিস, খাও !
কোথাও কোন বেরাল-ছানা শব্দ করলে ম্যাও ! –
অমনি ডাকিস পুলিশ
করিস তাকে নালিশ !
জমে উঠেছে নাটকঃ

দেশ জুড়ে আজ ন্যাংটো খোকার জন্য জেলের ফাটক
মহান দেশের মহান রাজা
দারুণ মজা !...

বৃহস্পতিবার, ২০ জুন, ২০১৩

কবিতার প্রাথমিক ছন্দ/ শেখ জলিল

কবিতার প্রাথমিক ছন্দ/ শেখ জলিল

প্রথমেই বলতে হয় আমি ছন্দ বিশারদ নই কিংবা বাংলার ছাত্রও ছিলাম না। কবিতা লিখতে গিয়ে যতটুকু শিখেছি, তার বেশি জানি না। হাতের কাছে তেমন বইও নেই যা পড়েছিলাম আগে। সেই যে মাহবুবুল আলম-এর বাংলা ছন্দের রূপরেখা, ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের-এর বাংলা কবিতার ছন্দ কিংবা কবি আব্দুল কাদির-এর ছন্দ সমীক্ষণ কোনো বই-ই নেই এখন আমার কাছে। তাই ভুল হলে প্রথমেই ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

কবিতার প্রাথমিক ছন্দ মূলত তিনটি- স্বরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত এবং অক্ষরবৃত্ত। আবহমানকাল ধরে এই তিন ছন্দেই ছড়া, কবিতা, গান বা গীতিনাট্য লেখা হয়ে আসছে। তাই এই তিন ছন্দের প্রাথমিক ধারণাই আজ দেবো।

স্বরবৃত্ত বা লৌকিক ছন্দ এসেছে মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি থেকে। এই ছন্দ নাকি মানুষের ভেতর আপনাআপনি খেলে। তাইতো খনার বচন, আদি ছড়া এই ছন্দে সমৃদ্ধ। শ্বাসাঘাত বা একবারে উচ্চারিত অংশই এর একক মাত্রা। একটি ছড়ার লাইন দিয়ে একে বোঝানো যেতে পারে-

আয় ছেলেরা/ আয় মেয়েরা/ ফুল তুলিতে/ যাই
১+৩/১+৩/১+৩/১
ফুলের মালা/ গলায় দিয়ে/ মামার বাড়ি/ যাই
২+২/২+২/২+২/১
এখানে শ্বাসাঘাত বা একবারে যাতোটুকু উচ্চারিত হয়েছে তাতোটুকুকে একমাত্রা ধরা হয়েছে। অর্থাৎ মাত্রাবিন্যাস দাঁড়িয়েছে এমন-
৪/৪/৪/১
৪/৪/৪/১
অথবা আর একটি ছড়া-
ঐ দেখা যায় তাল গাছ
১+২+১/১+২ (ব্যতিক্রম-এখানে গাছ-কে ২ মাত্রা ধরা হয়েছে)
ঐ আমাদের গাঁ
১+৩/১
ঐ খানেতে বাস করে
১+৩/১+২
কানা বগীর ছা
২+২/১
অর্থাৎ মাত্রাবিন্যাস দাঁড়িয়েছে এমন-
৪/৩, ৪/১, ৪/৩, ৪/১......এভাবেই চলে আসছে কবিতায় স্বরবৃত্ত ছন্দের খেলা।
এবার আসি মাত্রাবৃত্ত ছন্দের কথায়। মাত্রাবৃত্ত ছন্দে লেখা কবিতাগুলো একটু টেনে টেনে পড়লেই ছন্দটা কানে বাজে বেশি। যারা গান করেন তাদের বুঝতে সুবিধা হবে- স্বরবৃত্ত যদি চলে কাহারবা বা ঝুমুর তালে তবে মাত্রাবৃত্ত চলবে দাদরা বা তেওড়া তালে। বেশ আগে থেকেই কবিরা এ ছন্দে কবিতা লিখে আসছেন। আধুনিক অনেক ছড়াকাররাও এ ছন্দ নিয়ে বেশ খেলছেন।

সন্ধি বিচ্ছেদে যেমন শব্দকে ভাঙতে হয়, তেমনি এ ছন্দেও শব্দকে ভেঙ্গে মাত্রার একক নির্ণয় করতে হয়। যারা স্বরধ্বনি বা ব্যঞ্জনধ্বনি বোঝেন তাদের জন্য এ ছন্দ বুঝতে সুবিধা হবে। যেমন- সন্ধান=সন্+ধান=২+২=৪ মাত্রা, অভিধান=অ+ভি+ধান=১+১+২=৪ মাত্রা বা মৃত্যু=মৃত্+তু=২+১=৩ মাত্রা, শৈত্য=শৈত্+ত=২+১=৩ মাত্রা অথবা ল=লক্+খ=২+১=৩ মাত্রা, 
আব= আ+বক্+খ=১+২+১=৪ মাত্রা বা কবিতা=ক+বি+তা=১+১+১=৩ মাত্রা, সুচরিতা=সু+চ+রি+তা=১+১+১+১=৪ মাত্রা। অর্থাৎ সংযুক্ত বর্ণের সংযোগ অংশের একবারে উচ্চারিত অংশ বা ধ্বনিকে সব সময় ২ মাত্রা ধরা হয়। যেমন একটি কবিতায়-

এইখানে-- তোর/ দাদীর --কবর
২+১+১--২/ ১+২--১+২=৬+৬
ডালিম --গাছের/ তলে
১+২--১+২/ ১+১=৬+২
তিরিশ বছর/ ভিজায়ে-- রেখেছি
১+২--১+২/ ১+১+১--১+১+১=৬+৬
দুই --নয়নের/ জলে
২--১+১+২/ ১+১=৬+২
অর্থাৎ মাত্রাবিন্যাসটা এ রকম--৬+৬, ৬+২, ৬+৬, ৬+২।

অথবা আর একটি কবিতায়-
আমাদের/ ছোট নদী/ চলে বাঁকে/ বাঁকে
১+১+২/১+১--১+১/১+১--১+১/১+১=৪+৪+৪+২
বৈশাখ/ মাসে তার/ হাঁটু জল/ থাকে
২+২/১+১--২/১+১--২/১+১=৪+৪+৪+২
অর্থাৎ মাত্রাবিন্যাসটা এ রকম--৪+৪+৪+২, ৪+৪+৪+২।

ছন্দের যাদুকর নামে খ্যাত কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত কেমন করে স্বরবৃত্ত ও মাত্রাবৃত্ত নিয়ে খেলেছেন, এমনকি একই কবিতায় দুই ছন্দের ব্যবহারও করেছেন- সে গল্প পরের লেখায় বলার ইচ্ছে রইলো।

আমাদের তৃতীয় প্রাথমিক ছন্দ হলো অক্ষরবৃত্ত। এই অক্ষরবৃত্ত ছন্দ নিয়ে আধুনিক কবিরা সবচেয়ে বেশি খেলায় মেতেছেন আজকাল। পয়ার থেকে চতুর্দশপদী, অমিত্রাক্ষর, মুক্তক, গদ্যছন্দ কতভাবেই না এই ছন্দ ভাঙছেন তাঁরা কবিতায়- তার ইয়ত্তা নেই। তবে বোঝার দিক দিয়ে এই ছন্দ সবচেয়ে সোজা। শুধুমাত্র অক্ষর গুণে গুণে এই ছন্দের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। একক অক্ষর বা সংযুক্ত অক্ষরকে ১ মাত্রা ধরা হয়। তবে কখনো কখনো সংযুক্ত অক্ষরকে ২ মাত্রাও ধরা হয়। সেটা নির্ভর করবে কবির লেখার বানান-রীতির উপর। আরও একটি সহজ নিয়ম হলো হসন্ত বর্ণ স্বরবৃত্তে ১ মাত্রা, মাত্রাবৃত্তে ২ মাত্রা, অক্ষরবৃত্তে শব্দের প্রথমে বা মাঝখানে ১ মাত্রা কিন্তু শেষে ২ মাত্রা হবে। এবার আসা যাক ছন্দ বিশ্লেষণে। পয়ার চর্চার যুগে পুঁথি সাহিত্যের একটি কবিতায়-


১.
লাখে লাখে সৈন্য মরে/ কাতারে কাতার
২+২+২+২/ ৩+৩
শুমার করিয়া দেখে/ চল্লিশ হাজার
৩+৩+২/ ৩+৩ অথবা


২.
ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ/ হাঁটিয়া চলিল
৩+৩+২/ ৩+৩
কিছুদূর গিয়া মর্দ/ রওনা হইল
৪+২+২/ ৩+৩
অর্থাৎ ছন্দবিন্যাসটা এ রকম-
প্রথমটির ৮/৬, ৮/৬ এবং দ্বিতীয়টিরও ৮/৬, ৮/৬

কিংবা মুক্তক ছন্দে রচিত জীবনানন্দ দাশের একটি কবিতায়-
অর্থ নয়, কীর্তি নয়,/ সচছ্লতা নয়-
২+২+২+২/ ৪+২
আরো / এক বিপন্ন বিস্ময়
২/ ২+৩+৩
আমাদের অন্তর্গত / রক্তের ভিতরে
৪+৪/ ৩+৩
খেলা করে
২+২
অর্থাৎ ছন্দবিন্যাসটা এ রকম- ৮/৬, ২/৮, ৮/৬, ৪

বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে কবিতাগুলোতো একটা অষ্টক রীতি বা ৮ মাত্রা মিলানোর প্রচেষ্টা রয়েছে সর্বদা। এটাই হলো পয়ারের রীতি। আর হ্যাঁ, যেখানে ৮ মাত্রা মেলেনি সেখানে কিন্তু জোড় মাত্রা মেলাতে হবে, বিজোড় নয় কখনো। এটাই হলো অক্ষরবৃত্তের প্রাথমিক নিয়ম।

** লেখাটি পূনরায় পোস্ট করা হলো।

লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): কবিতার ছন্দ ;
প্রকাশ করা হয়েছে: কবিতা বিষয়ক  বিভাগে । বিষয়বস্তুর স্বত্বাধিকার ও সম্পূর্ণ দায় কেবলমাত্র প্রকাশকারীর...

কবিতার ছন্দ, বাংলা একাডেমী, ১৯৯৭

কবিতার উৎকৃষ্টতার জন্যে ছন্দ একমাত্র উপজিব্য না হলেও এটি যে প্রধানতম একটি দিক তা অস্বীকার করার উপায় নেই। শিল্প সাহিত্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাধ্যম, কবিতা, সৃষ্টির আদিযুগ থেকেই তাল লয় সুর ইত্যাদির সংমিশ্রণে ভাষার মালা হয়ে মানুষের মনে দোলা দিয়ে আসছে। অক্ষর ও শব্দের নানামুখি চালে এই মালা তৈরীর প্রক্রিয়া বা নিয়মই আদতে ছন্দ।
কালের বিবর্তনে, অতিক্রান্ত সময়ের সদ্ধিক্ষণে উৎকৃষ্ট কবিতা নির্মাণের জন্য বিভিন্ন ভাবে পরীক্ষা পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে প্রায় সব ভাষার বিশিষ্ট কবিরা তৈরি করেছেন সুনির্দিষ্ট ও সুবিন্যস্ত নিয়ম। বাংলা কবিতাকেও অন্যান্য ভাষায় রচিত কবিতার মতো বাঁধা হয়েছে ছন্দের শৃঙ্খলে। আর এক পর্যায়ে ভেঙেও দেয়া হয়েছে সেই শৃঙ্খল, কিন্তু ভাঙার সেই প্রক্রিয়াও তৈরী করেছে নতুন ধ্বনি মাধুর্য।
ইট তৈরির কথা দিয়েই শুরু করা যাক। প্রথমেই প্রয়োজন উৎকৃষ্ট মাটির। মাটিকে আবর্জনা মুক্ত করে স্বচ্ছ পানি মিশিয়ে হাত দিয়ে বা মেশিনের সাহায্যে বারবার নেড়ে চেড়ে নরম করার প্রয়োজন পড়ে। তারপর এই মাটিকে ফর্মার মধ্যে ফেলা হয়। ফর্মায় মাটি ঠিক মতো পুরতে পারলেই মাটি আর মাটি থাকে না, ইটে পরিণত হয়। এখানেই শেষ নয়, এই নরম ইটকে শক্ত করার জন্য উচ্চ তাপে দগ্ধ করা হয়। লক্ষণীয় যে, নরম মাটিকে হাত দিয়ে পিটিয়ে বা মেশিনে নেড়ে চেড়েই ইটের রূপ দেয়া যায় না। দরকার একটি ফর্মা যা কিনা মাটিকে সুন্দর একটি ইটের আকার দিতে পারে।
কবিতার প্রসঙ্গেও একই রকম ভাবে বলা যায়, প্রথমেই প্রয়োজন সুন্দর একটা বিষয়। যদিও যে কোনো বিষয়েই উৎকৃষ্ট কবিতা তৈরীর প্রমাণ যথেষ্ট রয়েছে, তথাপি কবিতা লেখার শুরুর দিকে বা তরুণ কবিদের ক্ষেত্রে বিষয়ের গুরুত্ব অবহেলা করা যায় না। বিষয় স্পষ্ট হলে, তাকে ভাষায় রূপ দেয়ার জন্য দরকার শব্দ। বিষয় ও শব্দের একত্র মেলবন্ধনে গঠিত হয় কবিতার ভাব, যা ইট তৈরির পূর্বের ক্ষেত্রটি প্রস্তুত করে। এখন প্রয়োজন ফর্মার। কবিতার ক্ষেত্রে এই ফর্মাই হলো ছন্দ। বিষয় এবং শব্দকে যদি নির্দিষ্ট ছন্দের মধ্যে গ্রন্থিত করা যায় তবে অন্তত দগ্ধ করার আগে কাঁচা ইটের মতো মোটামুটি একটা কবিতা দাঁড়িয়ে যায়। তারপর একে পরিপক্ক করার জন্য প্রয়োজন হয় উপমা, অনুপ্রাস, চিত্রকল্প ইত্যাদির। তাই, প্রথমে অন্তত সাধারণ ভাবে একটা কবিতা দাঁড় করার জন্য ছন্দের প্রয়োজনীয় দিকের প্রতি দৃষ্টি দেয়া যাক।
ছন্দের ভেতরে প্রবেশের আগে জানা দরকার শব্দের শরীর। আবার শব্দের শরীর সম্পর্কে জানতে হলে সর্বাগ্রে জানা দরকার স্বর বা ধ্বনি। স্বর জানার পর শব্দের শরীর অনেকাংশে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
বাংলা স্বর বা ধ্বনিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
১. বদ্ধস্বর
২. মুক্তস্বর
বদ্ধস্বর:
যে সব ধ্বনি উচ্চারণের সময় জিভ মুখের প্রবহমান বাতাসকে আটকে দেয় তাদের বদ্ধস্বর বলা হয়। যেমন : কর, ধর, হায়, পাক, আঁক, ঝাঁক, থাক, দিন, বীন, হই, ইত্যাদি।
মুক্তস্বর:
যে সব ধ্বনি উচ্চারণের সময় মুখের প্রবহমান বাতাস জিভের কোনো বাধা ছাড়াই বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে তাদের মুক্তস্বর বলে। যেমন: হা, না, কা, চা, দি, দা, বা, বু ইত্যাদি।
এবার শব্দের শরীর প্রসঙ্গে আলোচনায় ঢোকার শুরুতেই বেছে নেয়া যাক “করলাম” শব্দটিকে। স্পষ্টত এটি দু’টি স্বর দিয়ে গঠিত। প্রথমটি ‘কর’ এবং দ্বিতীয়টি ‘লাম’। উপরে প্রদত্ত বদ্ধ এবং মুক্ত স্বরের সংজ্ঞানুসারে ‘কর’ এবং ‘লাম’ উভয়েই বদ্ধস্বর। তাহলে বলতে পারি “করলাম” শব্দটির শরীর দু’টি মাত্র বদ্ধস্বর দিয়ে গঠিত।
এবার “সঙ্গোপনে” শব্দটি গ্রহণ করা যায়। এ শব্দটি চারটি স্বর দিয়ে গঠিত সং, গো, প, এবং নে,। এটা স্পষ্ট, সং, বদ্ধস্বর এবং গো, প, ও নে এরা প্রত্যেকটিই মুক্তস্বর। অর্থাৎ সং উচ্চারণের সময় জিভ মুখের প্রবহমান বাতাসকে আটকে দেয় কিন্তু গো, প এবং নে উচ্চারণে জিভ সেটা করতে পারে না, ফলে মুখের ভেতরের বাতাস অনায়াসে বেরিয়ে আসে।
ছন্দের মূল আলোচনায় আসার আগে আরো একটি দিকে লক্ষ্য করা প্রয়োজন। তা হলো “মাত্রা”। স্বর জানার পর মাত্রা সম্পর্কে মোটামুটি জ্ঞান অর্জন সহজতর হবে।
বাংলা কবিতার সব ছন্দেই একটি মুক্তস্বর, সে যে অবস্থানেই থাকুন না কেনো, একটি মাত্র মাত্রা বহন করে।
কিন্তু সমস্যা হলো বদ্ধস্বর নিয়ে। একটি বদ্ধ স্বর কখনো একটি আবার কখনো দু’টি মাত্রা বহন করে। অতএব পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনার মাধ্যমে বুঝে নেয়া দরকার বদ্ধস্বর কোন অবস্থায় একটি এবং কোন অবস্থায় দু’টি মাত্রা বহন করে। অবশ্য তার আগে জানা চাই ছন্দের প্রকার ভেদ।
বাংলা কবিতার ছন্দ প্রধানত তিন প্রকার।
১. স্বরবৃত্ত ছন্দ
২. মাত্রাবৃত্ত ছন্দ
৩. অক্ষরবৃত্ত ছন্দ
স্বরবৃত্ত ছন্দ:
স্বরবৃত্ত ছন্দে বদ্ধস্বর এক মাত্রা বহন করে। কোনো অবস্থাতেই এ ছন্দে বদ্ধস্বর দু’মাত্রা বহন করতে পারে না। তাছাড়া মুক্তস্বরের মাত্রা এক।
কবিতার পঙ্ক্তি দিয়ে বিবেচনা করা যাক।
১. মামার বাড়ি আর যাবো না আর খাবো না মামীর গাল,
কথায় কথায় পড়বে না আর আমার পিঠে অমন তাল।
এখানে প্রতি পঙ্ক্তিতে তিনটি করে পর্ব এবং একটি করে অতিপর্ব আছে। প্রত্যেক পর্বে সমান সংখ্যক মাত্রা আছে এবং লক্ষ্য করলে দেখা যাবে অতিপর্ব পর্ব থেকে কম সংখ্যক মাত্রা ধারণ করেছে। ছন্দ বিন্যাস করলে দেখা যায়,
মামার বাড়ি/ আর যাবো না/ আর খাবো না/ মামীর গাল,
কথায় কথায়/ পড়বে না আর/ আমার পিঠে/ অমন তাল।
স্বরের উপরে লম্বা দাগগুলো মাত্রা চিহ্ন নির্দেশক। মুক্ত স্বরের উপরে শুধু একটি দাগ দিলেও বদ্ধস্বর বোঝাতে চাঁদের মতো চক্র রেখা এঁকে তার উপরে মাত্রা চিহ্ন দেয়া হয়েছে। প্রতি লাইনে আড়াআড়ি দাগ কেটে পর্ব নির্দেশ করা হয়েছে।
পর্ব, অতিপর্ব ও উপপর্ব:
কবিতার প্রতিটি লাইনে সমমাত্রার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশই হলো পর্ব। পঙ্ক্তি শেষের পর্বাংশকে অতিপর্ব বলা হয় যার মাত্রা সংখ্যা পর্বের মাত্রা সংখ্যা থেকে সর্বদাই কম। এ ধরনের পর্বাংশ লাইনের শুরুতে থাকলে আমরা তাকে উপপর্ব বলে চিহ্নিত করবো।
উপরে প্রদত্ত উদাহণের ছন্দ বিন্যাস লক্ষ্য করলে বোঝা যায় যে, প্রতিটি পর্বের মাত্রা সংখ্যা চার, এবং অতিপর্বের মাত্রা সংখ্যা তিন। এই কাব্যাংশে কোনো উপপর্ব নেই।
যদি কবিতাটি সম্পূর্ণ করার প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে প্রতিটি বর্ধিত লাইনেও উপরের লাইনগুলির সমান সংখ্যক পর্ব একই মাত্রায় রাখতে হবে, এবং অতিপর্বেও উপরের লাইন অনুসারে তিন মাত্রা থাকবে। যেমন,
মামার বাড়ি আর যাবো না আর খাবো না মামীর গাল,
কথায় কথায় আমার পিঠে পড়বে না আর অমন তাল।
সকাল বেলা জেগে আমি তাই তো গেলাম মায়ের ঘর,
“ভায়ের বাড়ি যাওগে একা, আমার গায়ে ভীষণ জ্বর।”
তাহলে স্বরবৃত্ত ছন্দের এই কবিতাটির কাঠামো দাঁড়াবে:
৪ + ৪ + ৪ + ৩
২. যখন ওরা অপিশে যায় কিংবা চালায়
তুমুল দোকানদারি
তখন আমি ঢেউ সাজানো নদীর বুকে
দিব্যি জমাই পাড়ি।
(যখন ওরা/শামসুর রাহমান)
মাত্রা বিন্যাস:
যখন ওরা/ আপিশে যায়/ কিংবা চালায়/
তুমুল দোকান/ দারি
তখন আমি/ ঢেউ সাজানো/ নদীর বুকে/
দিব্যি জমাই/ পাড়ি।
কাঠামো:
৪ + ৪ + ৪
৪ + ২
এখানে চার মাত্রার চারটি পর্ব এবং দুই মাত্রার একটি অতিপর্ব দিয়ে পঙ্ক্তি গঠিত হয়েছে। সাথে সাথে লক্ষণীয় যে শামসুর রাহমান একটি পঙ্ক্তি ভেঙে দু’টি লাইন করেছেন। কিন্তু পর্ব সংখ্যা প্রতি দুই দুই লাইনে সমান রেখেছেন। ইচ্ছা করলে প্রথম উদাহরণের কবিতাটি একই ভাবে ভেঙে দেয়া যায়। যেমন,
মামার বাড়ি আর যাবো না
আর খাবো না মামীর গাল,
কথায় কথায় পড়বে না আর
আমার পিঠে অমন তাল।
এই নতুন আঙ্গিকে কবিতাটির কাঠামো দাঁড়াবে:
৪ + ৪ +
৪ + ৩
প্রতি দুই লাইনে পর্ব সংখ্যা সমান রাখা হয়েছে।
৩. মেঘনা নদীর শান্ত মেয়ে তিতাসে
মেঘের মতো পাল উড়িয়ে কী ভাসে!
(ভর দুপুরে/আল মাহমুদ)
মাত্রা বিন্যাস:
মেঘনা নদীর/ শান্ত মেয়ে/ তিতাসে
মেঘের মতো/ পাল উড়িয়ে/ কী ভাসে !
কবিতাটির কাঠামো:
৪ + ৪ + ৩
অর্থাৎ এই কবিতায় কবি প্রতি লাইনে চার মাত্রার দু’টি পর্ব এবং তিন মাত্রার একটি অতিপর্ব রেখেছেন।
উপরের উদাহরণগুলি থেকে দেখা যায় সব ক্ষেত্রেই প্রতিটি পর্বে চারমাত্রা এসেছে। তাহলে কি বলা যায়, স্বরবৃত্ত ছন্দে প্রতিটি পর্বে মাত্রা সংখ্যা চারে সীমাবদ্ধ থাকে? তাৎক্ষণিক উত্তর হ্যাঁ-সূচক।
তবে স্বরবৃত্ত ছন্দে কবিতার পর্বকে আরো এক প্রকার মাত্রার সমন্বয়ে গঠন করা যায়। সেটি হলো ‘সাত মাত্রার মন্দাক্রান্তা ছন্দ’ বা সংক্ষেপে মন্তাক্রান্তা ছন্দ। স্বরবৃত্ত ও মাত্রাবৃত্ত উভয় ক্ষেত্রেই সংস্কৃত ধাচের এই বুনন সম্ভব। নাম থেকেই বোঝা যায় পর্বে মাত্রা সংখ্যা থাকবে সাতটি।
উদাহরণ:
৪. বাবুদের তাল পুকুরে
হাবুদের ডাল কুকুরে
সে কি বাস করলে তাড়া
বলি থাম একটু দাঁড়া।
(লিচু চোর/ কাজী নজরুল ইসলাম)
এখানে প্রতিটি লাইন সাত মাত্রার একটি মাত্র পর্ব দিয়ে গঠিত। আবার অন্যভাবে বলা যায় যে, প্রথমে তিন এবং পরে চার মাত্রার দু’টি পর্ব দিয়ে লাইন গঠিত হয়েছে।
একই ছন্দে রচিত অন্য একটি কবিতার কথা বিবেচনা করা যায়,
৫. আগুনের পরশ মণি/ ছোঁয়াও পাণে,
এ জীবন পূণ্য করো/ দহন-দানে।
আমার এই দেহখানি/ তুলে ধরো,
তোমার ওই দেবালয়ের/ প্রদীপ করো
নিশিদিন আলোক-শিখা/ জ্বলুক গানে।
(পরশমণি/ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
লক্ষণীয় প্রতিটি লাইনের প্রথমে সাত মাত্রার একটি পর্ব ও শেষে চার মাত্রার একটি অতিপর্ব এসেছে।
এই বুননে কবিতাটির কাঠামো দাঁড়ায় :
৭ + ৪
৭ + ৪
তবে কেউ হয়তো বলতে পারেন, রবীন্দ্রনাথ এই কবিতায় তিন মাত্রার উপপর্ব রেখে চার মাত্রার পর্ব গঠন করেছেন। সেক্ষেত্রে মাত্রা বিন্যাস হবে নিন্মরূপ:
আগুনের পরশ মণি/ ছোঁয়াও পাণে,/
এ জীবন পূণ্য করো/ দহন-দানে।/
আমার এই দেহখানি/ তুলে ধরো,/
তোমার ওই দেবালয়ের/ প্রদীপ করো/
নিশিদিন আলোক-শিখা/ জ্বলুক গানে।/
কাঠামো:
৩ + ৪ + ৪
৩ + ৪ +৪
লক্ষণীয়, যে ভাবেই পড়া হোক না কেনো, কবিতার চাল প্রথম পর্বকে সাত মাত্রায় টেনে নিয়ে যায়।
মাত্রাবৃত্ত ছন্দ:
মাত্রাবৃত্তের ক্রিয়া কলাপ অনেকটা স্বরবৃত্তের মতো হলেও এই ছন্দে বদ্ধস্বর দু’মাত্রা বহন করে। কোনো অবস্থাতেই বদ্ধস্বর একমাত্রা বহন করতে পারে না। কিন্তু স্বরবৃত্তের মতোই মুক্তস্বরের মাত্রা এক।
কবিতার পঙ্ক্তি দিয়ে বিবেচনা করা যায়।
১. মামার বাড়িতে/ যাবো না গো আমি/ খাবো না গো আর/ মামীর গাল,
কথায় কথায়/ পড়বে না আর/ পিঠের উপরে/ অমন তাল।
এখানে স্বরবৃত্ত ছন্দের প্রথম উদাহরণটি একটু ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি লাইনে এবার ছয় মাত্রার তিনটি করে পর্ব এবং পাঁচ মাত্রার একটি করে অতিপর্ব এসেছে।
মাত্রা বিন্যাস:
মামার বাড়িতে/ যাবো না গো আমি/ খাবো না গো আর/ মামীর গাল,
কথায় কথায়/ পড়বে না আর/ পিঠের উপরে/ অমন তাল।
অতএব কবিতাটির কাঠামো দাঁড়ায় :
৬ + ৬ + ৬ + ৫
অতিপর্বের মাত্রা সংখ্যা কমিয়ে আনা যায়, তবে কিছুতেই তা পর্বের মাত্রা সংখ্যার সমান হবে না। অতিপর্বের মাত্রা সংখ্যা যদি পর্বের মাত্রা সংখ্যার সমান হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে অতিপর্ব একটি পূর্ণ পর্বের রূপ নেবে। এখানে বলে রাখা ভালো, অতিপর্ব ছাড়াও শুধু পর্ব দিয়ে কবিতার কাঠামো তৈরি করা যায়। মাত্রা বিন্যাস সহ আরো কিছু কবিতার উদাহরণ:
ছয় মাত্রার পর্ব এবং চার মাত্রার অতিপর্ব:
২. কবি বন্ধুরা/ হতাশ হইয়া/ মোর লেখা পড়ে/ শ্বাস ফেলে
বলে কেজো ক্রমে/ হচ্ছে অকেজো/ পলি টিক্সের/ পাশ ঠেলে।
(আমার কৈফিয়ৎ/ কাজী নজরুল ইসলাম)
কবিতাটির কাঠামো:
৬ + ৬ + ৬ + ৪
ছয় মাত্রার পর্ব এবং তিন মাত্রার অতিপর্ব:
৩. সই পাতালো কি/ শরতে আজিকে/ স্নিগ্ধ আকাশ/ ধরণী ?
নীলিমা বহিয়া/ সওগাত নিয়া/ নমিছে মেঘের/ তরণী !
(রাখী বন্ধন/ কাজী নজরুল ইসলাম)
কাঠামো:
৬ + ৬ + ৬ + ৩
ছয় মাত্রার পর্ব এবং দুই মাত্রার অতিপর্ব:
৪ক. এ জগতে হায়/ সেই বেশি চায়/ আছে যার ভূরি/ ভূরি
রাজার হস্ত/ করে সমস্ত/ কাঙালের ধন/ চুরি।
(দুই বিঘে জমি/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
খ. দুর্গম গিরি/ কান্তার মরু/ দুস্তর পারো/ বার
লঙ্ঘিতে হবে/ রাত্রি নিশিতে/ যাত্রীরা হুশি/ য়ার।
(কাণ্ডারী হুশিয়ার/ কাজী নজরুল ইসলাম)
কাঠামো:
৬ + ৬ + ৬ + ২
পাঁচ মাত্রার পর্ব কিন্তু অতিপর্ব নেই:
৫. তোমারে পাছে/ সহজে বুঝি/ তাই কি এতো/ লীলার ছল/
বাহিরে যবে/ হাসির ছটা/ ভিতরে থাকে/ আখির জল।/
(ছল/ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
কাঠামো:
৫ + ৫ + ৫ + ৫
পাঁচ মাত্রার পর্ব এবং দু’মাত্রার অতিপর্ব:
৬ক. এ-ভূজমাঝে/ হাজার রূপ/ বতি
আচম্বিতে/ প্রাসাদ হারা/ য়েছে;
অমরা হতে/ দেবীরা সুধা/ এনে,
গরল নিয়ে/ নরকে চলে/ গেছে।
(নিরুক্তি/ সুধীন্দ্রনাথ দত্ত)
কাঠামো:
৫ + ৫ + ২
খ. হৃদয়ে তার/ অন্ধকার/ পৃথিবী নিঝ/ ঝুম
বিফল তার/ সকল বৈ/ভব
ভাঙে না তার/ বসন্তের/ অন্তহীন/ ঘুম
জাগে না কল রব/
কপালে যার/ আঁকেনি কেউ/ প্রেমের কুম/ কুম
ব্যর্থ তার/ সব।
(মধ্য ফাল্গুনে/নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী)
কাঠামো:
৫ + ৫ + ৫ + ২
৫ + ৫ + ২
গ. তখনো ছিলো/ অন্ধকার/ তখনো ছিলো/ বেলা
হৃদয় পুরে/ জটিলতার/ চলিতেছিলো/ খেলা
ডুবিয়াছিলো/ নদীর ধার/ আকাশে আধো/ লীন
সুষমাময়ী/ চন্দ্রমার/ নয়ান ক্ষমা/ হীন
(হৃদয়পুর/শক্তি চট্টোপাধ্যায়)
কাঠামো:
৫ + ৫ + ৫ + ২
আট মাত্রার পর্ব এবং ছয় মাত্রার অতিপর্ব:
৭. শেফালি কহিল আমি/ ঝরিলাম তারা !
তারা কহে আমারো তো/ হল কাজ সারা।
(এক পরিণাম/ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
কাঠামো:
৮ + ৬
এখানে বলে রাখা ভালো এ কাঠামোর কবিতাকে আট-ছয় মাত্রার কবিতাও বলা যেতে পারে। চৌদ্দ মাত্রার সনেট সৃষ্টির কাজে এ ধরনের ছন্দ বিন্যাস বিশেষ ব্যবস্থায় কাজে লাগানো যায়। তাছাড়া অক্ষরবৃত্ত ছন্দে এর উপস্থিতি অনেক বেশি।
মাত্রাবৃত্তে সাত মাত্রার পর্বের ব্যবহার বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অনেকটা স্বরবৃত্তের মতোই তবে মাত্রাবৃত্তে অতিপর্ব রাখাটা বেশ সহজতর। প্রথমে অতিপর্বহীন কয়েকটি কবিতার উদাহরণের দিকে তাকানো যাক।
সাত মাত্রার দুই পর্ব বিশিষ্ট কবিতা:
৮. তোমার মুখ আঁকা/ একটি দস্তায়/
লুটিয়ে দিতে পারি/ পিতার তরবারি/
বাগান জোত জমি/ সহজে সস্তায়/
তোমার মুখ আঁকা/ একটি দস্তায়;/
(শোণিতে সৌরভ/ আল মাহমুদ)
কাঠামো:
৭ + ৭
সাত মাত্রার তিন পর্ব বিশিষ্ট কবিতা:
৮. উগ্র ঢাল, তার/ তীক্ষè শরমুখ/ রঙিন, কোপনীয়/
রেখেছে সঞ্চিত/ যা-কিছু মায়াময়,/ মধুর, গোপনীয়
(সুন্দর জাহাজ/অনু: বুদ্ধদেব বসু)
কাঠামো:
৭ + ৭ + ৭
সাত মাত্রার চার পর্ব বিশিষ্ট কবিতা:
৯.
অন্ধ রেল গাড়ি/ বধির রেলগাড়ি/ অন্ধ রেল বেয়ে/ চলছে দ্রুত বেগে/
দু-চোখে মরা ঘুম/ আকাশে মরা মেঘ/ সঙ্গে মরা চাঁদ/ অন্ধ আছি জেগে/
অন্ধ বগিগুলো/ ক্লান্ত হয়ে গেছে/ এগিয়ে চলে তবু/ অন্ধ প্রতিযোগী/
চলছে ট্রাগ বেয়ে/ জানে না কোথা যাবে/ নষ্ট রেলগাড়ি/ অন্ধদূর বোগী।/
(অন্ধ রেলগাড়ি / হুমায়ুন আজাদ)
কাঠামো:
৭ + ৭ + ৭ + ৭
সাত মাত্রার মাত্রাবৃত্তে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রার অতিপর্ব ব্যবহারের নমুনা:
১০. ফসল অন্যের,/ তোমার শুধু
অন্য কোনো দূর/ অরণ্যের
পন্থহীনতায়/ স্বপ্নে কেঁপে ওঠা/
কোন অসম্ভব/ আকাক্সক্ষায়।
(অসম্ভবের গান/বুদ্ধদেব বসু)
কাঠামো:
৭ + ৫
৭ + ৫
৭ + ৭
৭ + ৬
এই চার লাইনে অতিপর্বে কোথাও পাঁচ কোথাও ছয় মাত্রা রাখা হয়েছে। কিন্তু তৃতীয় লাইনে কোনো অতিপর্ব নেই। ফলে, তৃতীয় ও চতুর্থ লাইন মিলে একটি পঙ্ক্তি তৈরী করেছে।
১১. নিমেষে ভুলি সাধ/ অতল মোহে।
মোহিনী ও-মুখের/ মিথ্যা বুলি
সত্য সার ভাবি,/ এবং আমি
ধারি না ধার কোনো/ মহোদয়ের।
(কবর খোড়ার গান/শামসুর রাহমান)
কাঠামো:
৭ + ৫
৭ + ৫
এই কবিতায় পাঁচ মাত্রার অতিপর্ব রাখা হয়েছে।
১২. যেখানে লেজবস/ প্রণয় ঝর্ণায়/ উলঙ্গ
শান্ত বয়ে যায়/ গভীর শেষমেশ/ সমুদ্রে
ভাসিয়ে প্রান্তর/ যায় সে আঁকাবাঁকা/ খলখল
ঝঞ্ঝা গোপনীয়,/ দেবতা ভূমিতলে/ অসংখ্য
যেখানে লেজবস/ প্রণয় ঝর্ণায়/ উলঙ্গ।
(লেসবস/অনু: হাসানআল আব্দুল্লাহ)
কাঠামো:
৭ + ৭ + ৪
৭ + ৭ + ৪
বোদলেয়ার রচিত এই কবিতাটি অনুবাদে অতিপর্বে চার মাত্রা রাখা হয়েছে। দু’টি করে পর্ব দিয়ে কবিতার লাইন গঠিত।
অক্ষরবৃত্ত ছন্দ:
অক্ষরবৃত্ত ছন্দে বদ্ধস্বর কখনো একমাত্রা এবং কখনো দুই মাত্রা বহন করে। অর্থাৎ পর্বে মাত্রা গণনা রীতি কোথাও স্বরবৃত্তের আবার কোথাও মাত্রাবৃত্তের মতন। বদ্ধস্বর যদি শব্দের প্রথম বা মাঝে থাকে তবে তা এক মাত্রা কিন্তু শব্দের শেষে অবস্থান করলে দুই মাত্রা বহন করে। উদাহরণ স্বরূপ “সূর্যশোক” শব্দটি বিবেচনা করা যেতে পারে।
স্বর বিন্যাসে শব্দটি নতুন করে লিখে আমরা পাই:
সূর + য + শোক
প্রথম এবং শেষেরটি বদ্ধস্বর, কিন্তু মাঝেরটি মুক্তস্বর। “সূর” বদ্ধস্বরটি শব্দের প্রথমে থাকায় এর মাত্রা সংখ্যা এক। অন্যদিকে “শোক” বদ্ধস্বরটি শব্দের শেষে থাকায় এর মাত্রা সংখ্যা দুই। আর মুক্ত স্বর “য”-এর মাত্রা সংখ্যা সর্বদাই এক। অতএব অক্ষরবৃত্তের এই নিয়মে “সূর্যশোক” এর মাত্রা সংখ্যা চার।
মাত্রা বিন্যাস:
সূর্যশোক
সূর + য + শোক
= ১ + ১ + ২
= ৪
মাত্রা বিন্যাস সহ অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচিত কয়েকটি কবিতা।
পর্বে আট মাত্রা এবং অতিপর্বে ছয়মাত্রা আছে এমন একটি কবিতা:
১. হাজার বছর ধরে/ আমি পথ হাঁটিতেছি/ পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে/ নিশীথের অন্ধকারে/ মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি ;/ বিম্বিসার অশোকের/ ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি;/ আরো দূর অন্ধকারে/ বিদর্ভ নগরে;
(বনলতা সেন/ জীবনানন্দ দাশ)
কাঠামো:
৮ + ৮ + ৬
এখানে “সংহল” “সমুদ্র” “অন্ধকার” এবং “বিম্বিসার” শব্দ চারটি লক্ষ্য করা যায়। প্রথম শব্দ দু’টি তিনটি করে এবং শেষের শব্দ দু’টি চারটি করে মাত্রা বহন করছে।
এদের স্বর ও মাত্রা বিন্যাস নিম্নরূপ:
সিংহল
সিং + হল
= ১ + ২
= ৩
সমুদ্র
স + মুদ + রো
= ১ + ১ + ২
= ৩
অন্ধকার
অন্ + ধো + কার
= ১ + ১ + ২
= ৪
বিম্বিসার
বিম + বি + সার
= ১ + ১ + ২
= ৪
দেখা যাচ্ছে, শব্দের প্রথমে এবং মাঝে অবস্থিত বদ্ধস্বরগুলি এক মাত্রা কিন্তু শেষে অবস্থিত বদ্ধস্বরগুলি দু’মাত্রা বহন করছে।
অক্ষরবৃত্ত ছন্দে মাত্রা গণনার এই রীতি কবি ইচ্ছা করলে বদলে দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে সব বদ্ধস্বরকে দিতে হবে দু’মাত্রা বহন করার ক্ষমতা। তবে, সতর্ক থাকা প্রয়োজন, যাতে পুরো কবিতায় একই নিয়ম প্রতিফলিত হয়। এক কবিতায় দু’রকম নিয়ম অনুসরণ করলে একদিকে পাঠক যেমন বিভ্রান্ত হবেন, অন্যদিকে কবিরও ছন্দে অদক্ষ হাতের প্রমাণ থেকে যাবে।
সকল বদ্ধস্বরকে দু’মাত্রা বহন করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে এমন একটি কবিতা:
২. বহুদিন থেকে আমি/ লিখছি কবিতা
বহুদিন থেকে আমি/ লিখিনা কবিতা
(বৈশাখে রচিত পংক্তিমালা/ সৈয়দ শামসুল হক)
কাঠামো:
৮ + ৬
এখানে “লিখছি” শব্দটির “লিখ” বদ্ধস্বরটি শব্দের প্রথমে বসেও দুই মাত্রা বহন করছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি ব্যতিক্রম। কিন্তু আগেই বলা হয়েছে, এটা কবির ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।
শব্দের প্রথম ও মাঝের বদ্ধস্বরকে একমাত্রা দেয়া হয়েছে এমন আরো দু’টি কবিতা:
৩. …রহে বলী; রাজদণ্ড/ যত খণ্ড হয়
তত তার দুর্বলতা,/ তত তার ক্ষয়।
একা সকলের উর্ধ্বে/ মস্তক আপন
যদি না রাখিতে রাজা,/ যদি বহুজন…
(গন্ধারীর আবেদন/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
কাঠামো:
৮+৬
৪. হে দারিদ্র্য তুমি মোরে/ করেছ মহান
তুমি মোরে দানিয়েছ/ খ্রীস্টের সম্মান।
কণ্টক-মুকুট শোভ!/ ─দিয়াছ, তাপস
অসঙ্কোচ প্রকাশের/ দুরন্ত সাহস:
(দারিদ্র / কাজী নজরুল ইসলাম)
কাঠামো:
৮ + ৬
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, এ দু’টি কবিতাই চোদ্দ মাত্রার সনেট নির্মাণের কাজে অবদান রাখতে পারে। সনেট অধ্যায়ে এ নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে।
এবার অন্য একটি কবিতা:
৫. ক্রূর ঝড় থেমে গেছে,/ এখন আকাশ বড়ো নীল/
গাছের সবুজ পাতা/ কেঁপে কেঁপে অত্যন্ত সুষম/
বিন্যাসে আবার স্থির/
(বাজপাখি / শামসুর রাহমান)
এই কবিতাটির প্রতিটি লাইনের প্রথম পর্ব আট মাত্রা এবং দ্বিতীয় পর্ব দশ মাত্রা বহন করছে। যদি পর্বের আলোচনার আলোকে এটা বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে বলা যায় শেষের দশ মাত্রার পর্বটি অতিপর্ব। কিন্তু তা কি করে হয়? অতিপর্বের মাত্রা তো পর্বের মাত্রা সংখ্যা থেকে কম হওয়ার কথা। তবে কি এক্ষেত্রে মন্তব্য করা যাবে যে কবিতাটি লেখা হয়েছে ৮+৮+২ কাঠামোতে অর্থাৎ আট মাত্রার দু’টি পর্ব এবং দুই মাত্রার অতিপর্ব রেখে। কিন্তু তাও ঠিক নয়। কারণ, প্রথম লাইনের “নীল” শব্দটি দুইমাত্রা বহন করায় এটাকে দুই মাত্রার অতিপর্ব ধরলেও ধরা যায়। কিন্তু সমস্যা হয় দ্বিতীয় লাইনের “সুষম” শব্দটিকে নিয়ে। দুই মাত্রার অতিপর্ব বের করতে হলে “সুষম” থেকে “সু” স্বরটিকে পূর্বের পর্বের সঙ্গে যুক্ত করতে হয়, এবং “ষম” কে অতিপর্ব ধরতে হয়। অর্থাৎ তিন অক্ষরের এই শব্দটিকে ভেঙে দিয়ে কবিতার পর্ব বিন্যাস করতে হয়। এক্ষেত্রে যা যুক্তিপূর্ণ নয়। তাই এই কবিতাটিকে “আট-দশ” মাত্রার বা “আট-দশ” চালের কবিতা বলা প্রয়োজন, যা অক্ষরবৃত্তে কবিতা লেখার অন্য একটি নিয়ম হিসেবে বেশ কয়েক যুগ ধরে বাংলা কবিতায় প্রচলিত এবং এটাই হচ্ছে আঠারো মাত্রার সনেট গঠনের নির্ভরযোগ্য কাঠামো।
অক্ষরবৃত্ত ছন্দের আলোচনায় অগ্রসর হলে মনে হতে পারে যে এর অঙ্গন অনেক প্রশস্ত এবং কিছুটা খোলামেলা।
আসলেই তাই। বাংলা কবিতার ত্রিশের দশকের গুরুত্বপূর্ণ কবিরা অক্ষরবৃত্তের উপর প্রচুর কাজ করেছেন এবং একে একটা মুক্ত রূপ দিয়েছেন; যা অক্ষরবৃত্ত ছন্দের মাত্রা গণনার নিয়মকে ঠিক রেখে পর্বে মাত্রা বাড়িয়ে কমিয়ে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পর্ব ভেঙেচুরে ছন্দকে শাসন করে সজোরে আছাড় মেরে কবিতাকে সোজা করে দাঁড় করা হয়েছে। উঁকি দিয়েছে অক্ষরবৃত্তের নতুন ধারা। অক্ষরবৃত্তের এই নতুন রূপকে অনেকে “মুক্ত ছন্দ” বলেন। কিন্তু আমরা একে “নঞ ছন্দ” বলবো। নাই অর্থে নঞ। অর্থাৎ সাধারণ ভাবে দেখলে কবিতায় ছন্দ নেই, কিন্তু বিশেষভাবে বিশ্লেষণ করলে ছন্দের দৃঢ় বন্ধন দৃষ্টিগোচর হয়। নঞ ছন্দের উদাহরণ লক্ষ্য করা যাক:
১. আকাশ জানে না,/
প্রকাশ রাস্তায় একী/ কুড়ানো স্বাক্ষর,/
নক্ষত্র সমাজ খোঁজে/ শেষ পরিচয়/
ওরা পরস্পর/
নূতন বিরহে পায়/ অভিন্ন বিচ্ছেদে দীপ্তিময়/
উদ্ভাসিত দূরে দূরে/ অনন্ত বাসর।/
(যুগ্মদূর/ অমিয় চক্রবর্তী)
কাঠামো:

৮ + ৬
৮ + ৬

৮ + ১০
৮ + ৬
২. সজীব সকালে চোখ মেলি,/ প্রতিদিনের পৃথিবী/
আমাকে জানায় অভি/ বাদন। টাটকা রোদ
পাখিদের উড়াউড়ি,/ গাছের পাতার দুলুনি,/ বেলফুলের গন্ধ/
ডেকে আনে আমার বালকবেলাকে/
(একটি দুপুরের উপকথা / শামসুর রাহমান)
কাঠামো:
১০ + ৮
৮ + ৮
৮ + ৮ + ৮
১৪
৩. যখন তাদের দেখি/ হঠাৎ আগুন লাগে/ চাষীদের মেয়েদের/
বিব্রত আঁচলে;/ সমস্ত শহর জুড়ে/ শুরু হয় খুন, লুঠ,/ সম্মিলিত অবাধ ধর্ষণ,
ভেঙে পড়ে শিল্পকলা,/ গদ্যপদ্য;/ দাউদাউ পোড়ে/ পৃষ্ঠা সমস্ত গ্রন্থের;
ডাল থেকে/ গোঙিয়ে লুটিয়ে পড়ে/ ডানা ভাঙা নিঃসঙ্গ দোয়েল
আর্তনাদ করে বাঁশি/ যখন ওঠেন মঞ্চে/ রাজনীতিবিদগণ।
(রাজনীতিবিদগণ/ হুমায়ুন আজাদ)
কাঠামো:
৮ + ৮ + ৮
৬ + ৮ + ৮ + ১০
১০ + ৪ + ৬ + ৮
৪ + ৮ + ১০
৮ + ৮ + ৮
এইসব উদাহরণ থেকে এটা স্পষ্ট যে পর্বে মাত্রা সংখ্যা অসমান; কিন্তু জোড় মাত্রার পর্ব গঠিত হয়েছে।
মুক্ত বা নঞ ছন্দে কবিতা লেখার সহজ উপায়
এখন প্রশ্ন হলো মুক্ত বা নঞ ছন্দে কবিতা লেখার নিয়ম কি? এ ছন্দে লেখা কবিতাকে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে যা ধরা পড়বে তা হলো:
১. অক্ষরবৃত্ত ছন্দের মাত্রা গণনার নিয়ম ঠিক থাকবে।
২. প্রতিটি পর্বে জোড়সংখ্যক মাত্রা থাকতে হবে।
৩. পর্বে মাত্রা সংখ্যা দুই থেকে শুরু করে চার, ছয়, আট, দশ যে কোনো সংখ্যক রাখা যেতে পারে।
মুক্ত বা নঞ ছন্দে কবিতা লেখার সময় যদি একটা বিশেষ নীতি মেনে চলা হয় তবে উপরের তিনটি শর্তই একসঙ্গে পূরণ করা সম্ভব। নীতিটি হলো:
জোড়ে জোড়, বিজোড়ে বিজোড়।
তার মানে জোড় মাত্রার শব্দের পাশাপাশি জোড় মাত্রার শব্দ এবং বিজোড় মাত্রার শব্দের পাশাপাশি বিজোড় মাত্রার শব্দ বসানো। এরপর ইচ্ছা মতো লাইন তৈরি করা হলেও ছন্দের কোনো বিচ্চুতি ঘটে না।
——————————————————–
কবিতার ছন্দ, বাংলা একাডেমী, ১৯৯৭ ।। দ্বিতীয় সংস্করণ: মাওলা ব্রাদার্স থেকে প্রকাশিতব্য, ফেব্রুয়ারী, ২০১১।। এই অধ্যায়টি ‘কবিতাগুচ্ছ’র বন্ধুদের জন্যে তুলে দিলাম। স্বরের উপর দাগ দেওয়ার কথা বলা আছে কিন্তু কম্পিউটারে তা সম্ভব হলো না। তারপরেও আমার মনে হয় মাত্রা বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয়।

শুক্রবার, ১৪ জুন, ২০১৩

গেঁদুরাম সর্দার ।। ইন্দ্রলেখা


গেঁদুরাম সর্দার ।।

গেঁদুরাম সর্দার,
ছিলো শখ জর্দার;
তাক বুঝে ডিবেখানা
ঝেড়েছিলো বড়দার!
সাথে কিছু আধুলি,
রুপোমোড়া মাদুলি,
ক্যামেরা ও ঘড়ি লুটে,
ধরে ট্রেন খড়দার!
টেলিফোনে ধমকায়,
“আছে গ্যাং রিষড়ায়,
পুলিশের কাছে যেন,
যাবিনে,খবর্দার!!”
বড়মামা টিকটিকি,
ধরে ফেলে তার টিকি,
বামাল-সমেত তাকে
করে আনে গ্রেফতার!

সূর্যেরই অবিকল প্রবৃত্তি যার/ কাজী আতীক।



সূর্যেরই অবিকল প্রবৃত্তি যার/
কাজী আতীক।
(অগ্রজ সু-সাহিত্যিক কাজী ফয়সল আহমদ স্মরণে
তাঁর ৩য় মৃত্যু বার্ষিকীর প্রাক্কালে।)


আসেনি প্রভাত যদিও রাত নেই কিছু বাকি,
পাখীরাও কুজনে যেনো মেতে উঠেনি
ওঠেনি সূর্যটাও তাই আধারেই ঢাকা প্রকৃতি।

বেলা কি বাড়ে নি তবে?
সময় কি স্থির রয়েছে?
নাকি কেবলই বিভ্রম অনুভবে
যদিও ভোর হয়েছ

মানুষের মাঝেই কেউ যেমন সূর্যের অবিকল প্রবৃত্তি,
কেবল সংস্পর্শেই যার অন্যেরাও অনন্য হতে পারি।
পরিপুর্ন লেখক
উজ্জীবিত চেতনায় হৃদয় অম্বুধি
এক নিপুণ কবি
অগ্রজ আমারই
কাজী ফয়সল আহমদ,
আমি যার মনন ও প্রজ্ঞাকেই পুঁজি করেছি।

সূর্য যদি অস্তাচলে যায় জানি ফিরে ফিরে আসে প্রভাতে
অবিকল সূর্যেরই প্রবৃত্তি যার, অগ্রজ আমার,
এক সন্ধ্যাকে বর্ণহীন করে চড়ে বসে সময়ের রথে
অস্তমিত সূর্যের সাথে সখ্য গড়ে নিলে।
তারপর আর এলে না ফিরে।

আজোও আসেনি ফিরে।

আমার অগ্রজ আর আসে না ফিরে।
রয়ে যায় অনন্ত সময়ের কোনও ভগ্নাংশ অণু পলে,
যেখানে কখোনো ওঠেনা সূর্য,
পাখীরাও থাকে চুপিসারে।

কেবলই নিষ্ফল অনুনাদ অবেক্ষণ আকুতি হৃদয়ে,
পড়ে ছিলো নিষ্প্রাণ অনুধ্যায়ী অভিপ্রায়!
অতঃপর কালের প্রবাহও যেনো রুদ্ধ হয়েছে।

(নিউ ইয়র্ক ১৪ জুন ২০১৩)

বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন, ২০১৩

দুকুল ঝেঁপে বৃষ্টি এলো / অনিন্দিতা সাধু খাঁ / ১৩.০৬.২০১৩ / /




দুকুল ঝেঁপে বৃষ্টি এলো ভিজতে থাকে মন
জলের কনার আলতো আদরে শরির সমর্পন
ছেলেবেলার ভিজতে থাকা হারানো শৈশব
পরিনত মনের মাঝে উঁকি মারে সেই সব
জোল হাওয়ার থান্ডা বাতাসে বদ্ধ আমার ঘর
শেওলা জমা পাঁচিলেতে ঝরে সে নিরন্তর
মেঘের পালে ভাসবো আমি, বৃষ্টি হয়ে ঝরবো
বান্ধু তুই পাসেই থাকিস,আজ তোকেও ভেজাবো।



অনিন্দিতা সাধু খাঁ / ১৩.০৬.২০১৩ /

ঝর ঝরিয়ে বৃস্টি পডে /



বৃষ্টি তোমাকে পেতে চায় / অনুপম দাসশর্মা




বৃষ্টি তোমাকে পেতে চায়
দহনের ধৃষ্টতা তোমায় নত হয়
বসন্তের দ্বার ফাগের বাতাসের সখ্যতা
তৃপ্তির অনুভূতির হাতে তুলে দেয়
ইন্দ্রিয়গুলির স্বচ্ছতা
শুধু তোমার চরণ চিহ্নে।
থিতু অহংকার বিষময় ব্যাথা-বেদনা
শ্রেণী বৈষম্য ভুলিয়ে ভাসিয়ে দেয়
বাউলের নিজস্ব সৃষ্টির ধ্রুবতানে,গানে গানে 'হৃদয় প্রকাশ হল'
নও 'ক্ষনিকের অতিথি'শান্তির নীড় বিশ্বের একক প্রতিনিধি।
বৈশাখী বাতাসে ঈশ্বরের উপস্থিতি
সোনার তরী ও দিয়ে যায় জীবনের স্বরলিপি..!

বুধবার, ১২ জুন, ২০১৩

‘এসেছে বরষা এসেছে নবীন বরষা, / জীবনানন্দ /





এসেছে বরষা এসেছে নবীন বরষা,
গগন ভরিয়া এসেছে ভুবন ভরসা 
দুলিছে পবনে সনসন বনবীথিকা,
গীতময় তরুলতিকা ।
শতেক যুগের কবিদলে মিলি আকাশে
ধ্বনিয়া তুলিছে মত্তমদির বাতাসে
শতেক যুগের গীতিকা ।
শশতগীতমুখরিত বনবীথিকা’ ।।

বর্ষা মানে খরতাপের অবসানে রসসিক্তা ধরনীতে নব-সৃষ্টির বীজ । বর্ষা মানেগানকবিতাও । বর্ষা  মানে—
 কেবল আঁখি দিয়ে  আঁখির সুধা পিয়ে হৃদয় দিয়ে হৃদি অনুভব’  ’ বরিষণমুখরিত শ্রাবণ-রাত কবির কাছে তো এই বারতাই নিয়ে আসে -

বালিশে মাথা রেখে যারা ঘুমিয়ে আছে
তারা ঘুমিয়ে থাকে;
কাল ভোরে জাগবার জন্য ।
যে-সব ধূসর হাসিগল্পপ্রেমমুখরেখা
পৃথিবীর পাথরে কঙ্কালে অন্ধকারে মিশেছিলো
ধীরে ধীরে যেগে ওঠে তারা;
পৃথিবীর অবিচলিত পঞ্জর থেকে খশিয়ে
আমাকে খুঁজে বা করে । (জীবনানন্দ)