শনিবার, ১৫ জুলাই, ২০১৭

সহজ ভাষায় বাংলা কবিতার ছন্দ শিক্ষা



   

সহজ ভাষায় বাংলা কবিতার ছন্দ শিক্ষা

        কবিতা লেখা আজ কাল মানুষের কাছে একটা খেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেখা যাচ্ছে, কেউ একটু লেখা পড়া শিখেই মনের মাধুরী মিশিয়ে কবিতা লেখা শুরু করে দিচ্ছে। কি লিখছে নিজেও বুঝতে পারছে না। আবার এদিকে, নিজেকে কাজী নজরুল ইসলাম ভেবে বসে আছে। কিন্তু, কেউই এর আসল মহত্তটা বোঝারও চেষ্টা করছে না। এদের কেউই বাংলা কবিতার ছন্দ সম্পর্কে জানে না। কিন্তু, মনে রাখা উচিত, সব কিছুরই একটা নিয়ম আছে। কবিতা লেখাও তার ব্যাতিক্রম নয়। যেমন, কেউ একজন সাঁতার কাটতে যানেনা তবুও পানিতে নামল, তাহলে তার অবস্থাটা কি হবে একবার ভাবুন!!! তাই চলুন, বাংলা কবিতার ছন্দ সম্পর্কে সামান্য কিছু ধারনা নেয়ার চেষ্টা করি| এর জন্য, আমরা সবাই, আগে  নিজেকে এমন ভাবে প্রস্তুত করি যেন, ছন্দ সম্পর্কে একটা পরিপূর্ণ ধারনা নিতে পারি।
   

         এটি মূলত তিন প্রকার। যথাঃ
                   ১. স্বরবৃত্ত ছন্দ।
                   ২. মাত্রাবৃত্ত ছন্দ।
                   ৩. অক্ষরবৃত্ত ছন্দ।
নামগুলো হয়ত বা আমাদের সবারই চেনা। কিন্তু, এদের প্রকৃত ব্যবহার আমাদের অনেকেরই জানা নেই। তাই চলুন, এ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি।

        ছন্দ সম্পর্কে জানার আগে, চলুন প্রথমে আমরা কিছু চিহ্ন সম্পর্কে জেনে নেই। কারন, এগুলোর ব্যবহার দেখেই আমরা ছন্দ চিনব। এগুলো একেক ছন্দে একেকভাবে ব্যবহার হয়, আর এদের সুষ্ঠু ব্যবহার কবিতাকে করে তোলে সার্থক ও শ্রুতিমধুর। এগুলো হল, ‘‘অক্ষর”, ‘‘মাত্রা”, ‘‘মুক্তাক্ষর”, ‘‘বদ্ধাক্ষর বা যুক্তাক্ষর”, ‘‘পর্ব”, ‘‘অতিপর্ব” ইত্যাদি। আপাতত এই কয়টি জানলেই চলবে। তাই, এখন এগুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক।

        সবার আগে অক্ষর নিয়ে আলোচনা করতে চাই। সাধারণ ভাবে আমরা বুঝি, প্রতিটি বর্ণই একেকটি অক্ষর। কিন্তু, বাংলা ব্যকরণের ভাষায় তা প্রকৃতপক্ষে সঠিক নয়। আমরা জানি, মানুষ মনের ভাব প্রকাশের জন্য মুখ থেকে যে সকল শব্দ বা আওয়াজ বের করে তাই ধ্বনি। আবার, ধ্বনির লিখিত রূপই হল বর্ণ। কিন্তু, মানুষ কোন শব্দ উচ্চারণ করার সময়, একবারে যত গুলো কম সংখ্যক বর্ণ উচ্চারণ করে, তাদের একেকটিকে একেকটি অক্ষর বলে। চলুন, আমরা একটি উদাহরণের মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করি। এর জন্য আমরা ‘‘কলম” শব্দটি বাছাই করলাম। আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে, এই একটি শব্দই উদাহরণে ব্যবহার করার চেষ্টা করব। এবার কাজের কথায় আসি। খেয়াল করে দেখুন, ‘‘কলম’’ শব্দটি আমরা দুই ভাগ করে উচ্চারণ করছি ‘‘ক”, ‘‘লম্” এভাবে। শুধুমাত্র ‘‘কলম” শব্দটিই নয়, প্রতিটি শব্দই, আমরা এমন ভাগ ভাগ করেই উচ্চারণ করি। আর এই প্রতিটি ভাগই হল একেকটি অক্ষর। মাত্রা নিয়ে আলোচনার সময় বিষয়টি আরো পরিষ্কার হয়ে যাবে। তাহলে, চলুন আমরা মাত্রা শিখে ফেলি।    

         সাধারণত কোন একটি শব্দের প্রতিটি অক্ষরকেই, একমাত্রা বলে বিবেচনা করা যায়। বুঝতে সমস্যা হচ্ছে কী ??? সমস্যা হলেও সমস্যা নেই। চলুন উদাহরণে যাই, তাহলেই ঠিক হয়ে যাবে। চলুন, আমরা ‘‘কলম’’ শব্দটি উচ্চারণ করি ‘‘ক’’, ‘‘লম্’’ এভাবে। আপনি নিজে একবার বলার চেষ্টা করুন। খেয়াল করুন, আপনি কিন্তু ‘‘ক’’ ‘‘ল” ‘‘ম’’ এভাবে বলছেন না। ‘‘ক’’, ‘‘লম্’’ এভাবেই বলছেন। সুতরাং ‘‘ক’’ একটা মাত্রা এবং ‘‘লম্’’ একটা মাত্রা। এখন কি কিছু বোঝা যাচ্ছে ??? আপনারা হয়ত ভাবছেন, অক্ষর এবং মাত্রার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। কিন্তু, এদের মধ্যেও পার্থক্য আছে। আসলে অক্ষরের ধারনা থেকেই মাত্রার উৎপত্তি । কখনো কখনো, একটি অক্ষরে দুই মাত্রাও হতে পারে। আমি মনে করি, এখনি বিষয়টিকে এতো জটিল করে ভাবার কোন কারণ নেই। তারচেয়ে চলুন, মাত্রার স্পষ্ট ধারনা নিতে আমরা আরও কিছু শব্দ পর্যবেক্ষণ করি। যেমন, খাতা = খা, তা ; গীটার = গী, টার ; ক্যালকুলেটর = ক্যাল, কু, লে, টর ; হাইফেন = হাই, ফেন ইত্যাদি। এখানে, খাতা দুই মাত্রা, গীটার দুই মাত্রা, ক্যালকুলেটর চার মাত্রা, হাইফেন দুই মাত্রা। আশাকরি, আমরা মাত্রা সম্পর্কে অনেক কিছু শিখে ফেলেছি। মনে প্রশ্ন জাগছে কী ? একটি বর্ণ বিশিষ্ট অক্ষরও এক মাত্রা, আবার দুই বর্ণ বিশিষ্ট অক্ষরও এক মাত্রা, ঘটনা কী ??? আসলে, মাত্রা বর্ণের পরিমাণের উপর না, বলার ভঙ্গির উপর নির্ভর করে।     
    
        এবার, মুক্তাক্ষর নিয়ে আলোচনা করা যাক। যখন একটি অক্ষরে একটিই বর্ণ থাকে, তখন তাকে মুক্তাক্ষর বলে। যেমন, ‘‘কলম” শব্দটিকে বিশ্লেষণ করলে দুটি অক্ষর ‘‘ক’’, ‘‘লম্’’ পাওয়া যায়। এতে, ‘‘ক” একাই একটি অক্ষর, সুতরাং এটি মুক্তাক্ষর।
        
        এবার, যদি একাধিক বর্ণ মিলে একটি অক্ষর বুঝায়, তাকে বদ্ধাক্ষর বলে। সুতরাং, ‘‘কলম” এর ‘‘লম্’’ হল বদ্ধাক্ষর। এখন, একটি বড় শব্দের ক্ষেত্রে বোঝার চেষ্টা করি। যেমন, প্রত্যুৎপন্নমতি = প্রত্, তুৎ, পন্, ন, ম, তি। এখানে, ন, ম, তি এই তিনটি মুক্তাক্ষর এবং প্রত্, তুৎ, পন্, এই তিনটি বদ্ধাক্ষর। আশাকরি, মুক্তাক্ষর আর বদ্ধাক্ষর চিনতে আপনাদের আর কোন সমস্যা হবে না। 

       এবার পর্ব নিয়ে আলোচনা শুরু করছি। পর্বের সংজ্ঞা অনেকটা অক্ষরের মতই। এক নিঃশ্বাসে যতগুলো কম সংখ্যক শব্দ একবারে পড়া যায়, তাদের সমষ্টি হল একটি পর্ব। বুঝিনাই !!! চলুন আমরা উদাহরণে যাই। যেমন,
                   
                      ঐ খানে তোর / দাদির কবর /
                      ডালিম গাছের / তলে /
এখানে, প্রতিটি ( / ) চিহ্নের মধ্যের শব্দ সমষ্টিই এক একটি পর্ব। যেমন, (ঐ খানে তোর, দাদির কবর, ডালিম গাছের) এই তিনটি একেকটি পরিপূর্ণ পর্ব। এখন প্রশ্ন হচ্ছে পর্বতো বুঝলাম, তাহলে শেষের ‘‘তলে” কথায় গেল ? ওরকি পা আছে যে হেঁটে চলে যাবে। নাকি তার ডানা আছে, যে উড়ে যাবে। এটাও বলছি, তার আগে অতিপর্বের সংজ্ঞা দিয়ে নেই।
        
        যখন, একটি শব্দ নিয়ে একটি পর্ব বুঝাবে, তখন তাকে আমরা অতিপর্ব বলব। সুতরাং, এখানে ‘‘তলে” হল, অতিপর্ব। একে অপূর্ণ পর্বও বলা যেতে পারে। এখন চলুন আমরা আরেকটি কবিতা দেখি,
                      
                      এই নেয়েছে / ঐ নিল যাঃ / কান নিয়েছে / চিলে /
                      চিলের পিছে / মরছি ঘুরে / আমরা সবাই / মিলে /
নিশ্চই বুঝতে পারছেন, ‘‘চিলে” এবং ‘‘মিলে” হল অতিপর্ব, বাকি গুলো পর্ব। সুতরাং, এই দুটি লাইনে ছয়টি পর্ব এবং দুইটি অতিপর্ব আছে।

( বিঃ দ্রঃ -
          ১. পর্ব বোঝানোর জন্য ( / ) চিহ্ন, মাত্রা বোঝানোর জন্য অক্ষরের উপর ( - ) চিহ্ন এবং এক ও দুই মাত্রা বোঝানোর জন্য ( - ) চিহ্নের উপর যথাক্রমে এখানে ( । ) বা ( ।। ) চিহ্ন ব্যবহার করা যেতে পারে। 
          ২. মুক্তাক্ষরে কখনো দুই মাত্রা হতে পারে না। কিন্তু বদ্ধাক্ষরে দুই মাত্রাও হতে পারে।
          ৩. লেখার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ‘‘আনুসঙ্গিক পর্ব” কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে। এর দ্বারা পরষ্পর বৈশিষ্ট্য পূর্ণ বা সমান মাত্রা বিশিষ্ট্য পর্বকে বোঝানো হয়েছে। )

        আমার মনে হচ্ছে, আপনারা আমার উপর বিরক্ত হচ্ছেন, তাইনা ??? মনে মনে বলছেন, লোকটা শুধু পেঁচাচ্ছে, কাজের কথায় আসছেনা। চিন্তা করবেন না, আমার সকল আনুসঙ্গিক কথাবার্তা শেষ। তাহলে, চলুন আমরা এবার বাংলা কবিতার ছন্দ শিখি। 
    
 স্বরবৃত্ত ছন্দঃ
               সাধারণত ছড়া জাতীয় কবিতাগুলো স্বরবৃত্ত ছন্দের হয়। কিন্তু, এটা এর প্রধান বৈশিষ্ট্য নয়। প্রকৃতপক্ষে স্বরবৃত্ত ছন্দের কবিতা হল, যে সকল কবিতার মুক্তাক্ষর ও বদ্ধাক্ষরে একমাত্রা হয়, তাকে স্বরবৃত্ত ছন্দের কবিতা বলে। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি লাইনে সাধারণত মাত্রা সংখ্যা সমান থাকে। যেমন, এই কবিতাটি হয়তো বা ছোটবেলায় আমরা সবাই পড়েছি, 
                     
                      ‘‘খোকন খোকন ডাক পারি
                               খোকন মোদের কার বাড়ি”




চলুন কবিতাটি বিশ্লেষণ করি।
                       ।   ।    ।   ।       ।    ।  ।    
                      খো কন খো কন /  ডাক পা রি /
                       ।   ।    ।   ।       ।   ।  ।       
                      খো কন মো দের / কার বা ড়ি /
কী, বোঝা যাচ্ছে ? এখানে, ( খোকন খোকন, খোকন মোদের ) পরষ্পর আনুসঙ্গিক পর্ব এবং দেখুন প্রতিটি পর্বই চারমাত্রা করে। আবার, ( ডাক পারি, কার বাড়ি ) পরষ্পর আনুসঙ্গিক পর্ব এবং এরা প্রত্যেকেই তিনমাত্রা করে। এখন খেয়াল করে দেখুন, প্রতিটি লাইনে ৪ + ৩ = ৭ মাত্রা। সুতরাং, আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, এটা স্বরবৃত্ত ছন্দ।
         
       তাহলে বোঝা গেল, ছন্দ চেনার জন্য আগে পর্বে ভাগ করতে হবে, তারপর মাত্রায় বিভক্ত করতে হবে। এরপর মাত্রা গুনে সিদ্ধান্তে আসতে হবে। আমরা কিন্তু স্বরবৃত্ত ছন্দ শিখে ফেলেছি। কী, আনন্দ হচ্ছে ??? এখন চলুন আমরা মাত্রাবৃত্ত ছন্দ নিয়ে আলোচনা করি। 

মাত্রাবৃত্ত ছন্দঃ
               সাধারণত গীতিকবিতা গুলো মাত্রাবৃত্ত ছন্দের হয়ে থাকে। যে সকল কবিতায়, বদ্ধাক্ষরে দুইমাত্রা এবং মুক্তাক্ষরে একমাত্রা হয়, তাদের মাত্রাবৃত্ত ছন্দের কবিতা বলে। বদ্ধাক্ষরেও যে দুই মাত্রা হয়, মাত্রাবৃত্ত ছন্দ তার প্রমাণ। এখানে বদ্ধাক্ষর, মুক্তাক্ষরের আগে, মধ্যে বা পরে যেখানেই থাকুক না কেন, বদ্ধাক্ষরে দুই মাত্রা হবে। আচ্ছা বলুনতো, যদি বদ্ধাক্ষরে একমাত্রা হত তাহলে কি হত ? ভুলে গেলে আগের পৃষ্টা গুলো আবার পড়ুন, আর যদি সে ধৈর্য্য না থাকে, তাহলে আমার সাথে এগিয়ে চলুন। তাহলে, এক্ষেত্রে হবে স্বরবৃত্ত ছন্দ। আগের কথাগুলো আপনাদের সুবিধার্থে আরও একবার আলোচনা করে নিলাম। আমার মনে হয়, আপনারা স্বববৃত্ত ও মাত্রাবৃত্ত ছন্দের পার্থক্য বুঝতে পেরেছেন। তাহলে চলুন, আমরা একটা মাত্রাবৃত্ত ছন্দের কবিতা দেখি। যেমন, পল্লী কবি জসীমুদ্দীনের ‘‘কবর” কবিতাটি দেখতে পারি। এটি মাত্রাবৃত্ত ছন্দের কবিতা।
                     
                     ‘‘ঐ খানে তোর দাদির কবর 
                                 ডালিম গাছের তলে
                     তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি
                              দুই নয়নের জলে”।
কবিতা তো দেখা হল, এখন কাজ কী ? চলুন বিশ্লেষণ করি। 

                     ।। ।  ।   ।।     ।  ।।   । ।।     
                    ওই খা নে তোর / দা দির ক বর / 
                              ।  ।।   ।  ।।     ।  ।    
                              ডা লিম্ গা ছের / ত লে /
                      ।  ।।  । ।।    ।  ।   ।   ।  ।  ।
                     তি রিশ ব ছর / ভি জা য়ে রে খে ছি / 
                             ।।  ।।  ।।    ।  ।
                             দুই নয় নের / জ লে /
দেখুন, এখানে বদ্ধাক্ষরেও দুই মাত্রা পরেছে। শুধু তাইনা, আরও খেয়াল করে দেখুন কোথাও কোথাও বদ্ধাক্ষর মুক্তাক্ষরের আগে আবার কোথাও কোথাও পরে। কিন্তু, মজার বিষয় হল, উভয় ক্ষেত্রেই দুইমাত্রা পরেছে। এটিই মাত্রাবৃত্ত ছন্দের প্রধান বৈশিষ্ট্য।

        আচ্ছা, লাইন দুটিতে দুটি শব্দ আছে ‘‘তলে”, ‘‘জলে”, এদেরকে কি বলা হয় মনে আছে ? আরে, এরা হল অতিপর্ব! আমরা কিন্তু মাত্রাবৃত্ত ছন্দও শিখে ফেলেছি, টের পেয়েছেন ? মনে হয় না !!! তাহলে এখন বাকি থাকল, অক্ষরবৃত্ত ছন্দ, তাহলেই শেষ। আপনারা যারা ধৈর্য্য ধরে এই সবটুকু পড়েছেন তাদের সবাইকে বলছি, চলুন আমরা অক্ষরবৃত্তটাও শিখে ফেলি। 

অক্ষরবৃত্ত ছন্দঃ
                  বাংলা কবিতার ছন্দে সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় ছন্দ হল এই অক্ষরবৃত্ত ছন্দ। কারন, এটি যত প্রকারে নিজের অস্তিত্ব তুলে ধরেছে, আর কোন ছন্দই তা পারেনি। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, অক্ষরবৃত্ত ছন্দের প্রকার ভেদের অভাব নেই। কিন্তু, এ লেখাতে আমরা এর প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করতে যাবনা। পরবর্তিতে যদি সুযোগ হয়, তাহলে শুধু অক্ষরবৃত্তের প্রকারভেদ নিয়ে একটি লেখা লিখব। এই লেখাতে আমরা শুধু ছন্দ চিনব এবং এর ব্যবহার শিখব। 

        যে সকল কবিতায়, মুক্তাক্ষরে একমাত্রা ও বদ্ধাক্ষর যদি শব্দের শুরুতে (আদিতে) বা মধ্যে থাকে তাহলেও এক মাত্রা হয়। কিন্তু, বদ্ধাক্ষর যদি শব্দের শেষে থাকে তাহলে দুইমাত্রা হয়, তাকে অক্ষরবৃত্ত ছন্দ বলে। আমার মনে হয়  সংজ্ঞাটি একটু কঠিন হয়ে গেছে। আপনারা সংজ্ঞাটি কয়েকবার করে পড়ুন এবং নিজে বোঝার চেষ্টা করুন। তাতেও যদি না বোঝা যায়, সামনে উদাহরণত দেওয়াই হচ্ছে, তখন ঠিক হয়ে যাবে। আগে এ সম্পর্কে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে নেই, তারপর আমরা উদাহরণে যাব। 

        এর সাথে মাত্রাবৃত্তের সামান্য মিল আছে। এ দুটি ছন্দে একটি প্রধান পার্থক্য হলো, মাত্রাবৃত্ত ছন্দে সর্বদাই বদ্ধাক্ষরে দুইমাত্রা। কিন্তু, অক্ষরবৃত্ত ছন্দে শুধুমাত্র শব্দের শেষের বদ্ধক্ষরে দুইমাত্রা, বাকিগুলো একমাত্রা। তবে হ্যাঁ, যদি একটি পূর্ণ শব্দ একাই একটি বদ্ধাক্ষর হয় তাহলে, অক্ষরবৃত্ত ছন্দের বেলায় ও দুইমাত্রা হবে। এখন আমরা উদাহরণে যেতে পারি। যেমন, আমরা মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘‘বঙ্গভাষা” কবিতাটি দেখব,

                     ‘‘হে বঙ্গ ভান্ডারে তব বিবিধ রতন
                       তা সবে অবোধ আমি অবহেলা করি”
এখন বিশ্লেষণে আসি,
                     ।   ।  ।   ।   ।   ।  । ।    ।  ।  । ।  ।।
                     হে বঙ্ গ ভান্ ডা রে ত ব / বি বি ধ র তন /
                     ।  ।  ।  ।   ।।   ।  ।    ।  ।  ।  ।  ।  ।
                     তা স বে অ বোধ আ মি / অ ব হে লা ক রি /
এখন চলুন, সংজ্ঞার সাথে মেলানোর চেষ্টা করি। কবিতাটিতে মুক্তাক্ষরে একমাত্রা করে আছে। বদ্ধাক্ষর শব্দের শুরুতেও আছে আবার শব্দের শেষেও আছে। কিন্তু এতে মাত্রাবৃত্তের মত শব্দের শুরু বা মধ্যর বদ্ধাক্ষরে দুইমাত্রা হয়নি বরং শুধু শব্দের শেষের বদ্ধক্ষরে দুইমাত্রা হয়েছে। আশাকরি, আপনারা মাত্রাবৃত্ত ও অক্ষরবৃত্ত ছন্দের মাত্রাগত পার্থক্য বুঝতে পেরেছেন। কিন্তু এছাড়াও, এদের মধ্যে আরো পার্থক্য আছে। সেগুলো আমাদের আপাতত জানার দরকার নেই। শুধু যেসব কথা না বললেই নয়, সেগুলোই বলব। 
        
        আপনারা হয়ত আমার অক্ষরবৃত্ত ছন্দের উদাহরণটি দেখে বলছেন, ‘‘লোকটা বলছে অক্ষরবৃত্ত ছন্দ নিয়ে, আবার উদাহরণ দিচ্ছে ভুল। আরে এটাত সনেট সবাই জানে”। আমিও বলছি, এটা সনেট। কিন্তু, তাহলে আমি এই উদাহরণটি অক্ষরবৃত্ত ছন্দের ক্ষেত্রে দিলাম কেন ? এর কারন, আমি আপনাদের বোঝাতে চাইছি অক্ষরবৃত্ত ছন্দ কতটা বিস্তৃত এবং সনেট এই বিস্তৃত অংশের একটি সামান্য অংশ বিশেষ। 

        লেখার শুরুতে আমরা জেনেছি ছন্দ মূলত দুই প্রকার, স্বরবৃত্ত ছন্দ ও অক্ষরবৃত্ত ছন্দ। তাহলে, মাত্রাবৃত্ত ছন্দ কথায় গেল ? আসলে মাত্রাবৃত্ত ছন্দ ও অক্ষরবৃত্ত ছন্দের একটি অংশ। যখন দেখা গেল কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোন কোন কবিতার প্রতিটি বদ্ধাক্ষরেই দুইমাত্রা পরছে, কিন্তু এতে ছন্দের বা কবিতার লয়ের কোন পরিবর্তন হচ্ছেনা, তখন একে অক্ষরবৃত্ত ছন্দ থেকে আলাদা করে ফেলা হয় এবং এই বিশেষ বৈশিষ্টের কারনে নাম দেয়া হল মাত্রাবৃত্ত ছন্দ। এভাবেই মাত্রাবৃত্ত ছন্দের উৎপত্তি হয়। 

        এতক্ষন যাবত আমি আপনাদের সামনে বাংলা কবিতার ছন্দ সম্পর্কিত কিছু সাধারণ বিষয় উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। তাই আমার দেয়া এই কয়েকটি উদাহরণ পড়ার পাশাপাশি অন্যান্য কবিতা দেখুন। এরপর কবিতাটি নিয়ম অনুসারে বিশ্লেষণ করুন এবং নিজে ছন্দ নিরুপন করার চেষ্টা করুন। এতে ছন্দ সম্পর্কে ধারনা আরো স্পষ্ট হবে। কবিতা বিশ্লেষণ করার সময় কবিতাটি খুব ধীরস্থির ভাবে আবৃতি করার চেষ্টা করুন এবং নিয়ম মত পর্বে বিভক্ত করুন। এরপর মাত্রায় বিশ্লেষণ করে প্রতি মাত্রার জন্য প্রথমে একমাত্রা হিসাব করুন। এতে যদি প্রতিটি আনুসঙ্গিক পর্বে মাত্রা সংখ্যা সমান হয়ে যায় তাহলে সিদ্ধান্ত হবে স্বরবৃত্ত ছন্দ। আর যদি এতেও না মিলে, তবে শব্দের শেষের বদ্ধাক্ষর গুলোতে দুইমাত্রা বসান। মিলে গেলে অক্ষরবৃত্ত ছন্দ। ধরুন এতেও মেলেনি, তাহলে সকল বদ্ধাক্ষরে দুইমাত্রা বসান মিলেগেলে মাত্রাবৃত্ত ছন্দ। কোন কোন সময় এক মাত্রা কম বা বেশি হতে পারে। এতে দুঃষ্চিন্তার কোন কারন নেই। যদি বলার ভঙ্গি দিয়ে এ ত্রুটি দূর করা যায়, তবে ছন্দ ঠিক বলে ধরে নেয়া যেতে পারে। বলার বা আবৃতি করার সময় লয় এদিক সেদিক করা যাবে না। এতে ছন্দ সংক্রান্ত সঠিক সিদ্ধান্ত নাও পাওয়া যেতে পারে। ছন্দ বোঝাটা আপনার অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে। তাই বেশি বেশি কবিতা পড়ুন এবং সেগুলো বিশ্লেষণ করে দেখুন। একটি জিনিস সব সময় মাথায় রাখবেন, একটি সন্তানের যেমন একজনই মা থাকেন, তেমনি একটি কবিতার ও একটি ছন্দ থাকবে। আবার এও মাথায় রাখতে হবে, মা ছাড়া যেমন কোন সন্তান থাকা সম্ভব নয়, ঠিক তেমনি ছন্দ ছাড়াও কোন কবিতা হতে পারে না। সুতরাং, আমরা যখন কোন কবিতা বা গান রচনা করব, তখন অবশ্যই তাকে কোন না কোন ছন্দের অন্তর্ভূক্ত হতে হবে। তাই ঠিক মত বুঝে কবিতা রচনা করুন।

        এই লেখাটিতে, আমি আপনাদের সাথে আমার ছন্দ বিষয়ক সামান্য জ্ঞানের কিছু অংশ ভাগাভাগি করে নেয়ার চেষ্টা করেছি। আমি আমার সাধ্যমত সহজ ভাবে আপনাদের বাংলা কবিতার ছন্দ শেখানোর চেষ্টা করেছি। জানি না কতটুকু পেরেছি। তবে আমার এই প্রচেষ্টা তখনই সার্থক হবে, যখন আপনারা ছন্দ না বুঝে আর কবিতা রচনা করবেন না এবং নিয়ম গুলো আপনাদের আয়ত্তে আনবেন। আর এর জন্য বেশি বেশি কবিতা আবৃতি এবং পরিপূর্ণ বিশ্লেষণের কোন বিকল্প নেই। শুধুমাত্র আমার কথা গুলোকেই ছন্দ শেখার জন্য পরিপূর্ণ বলে মনে করার কোন কারণ নেই। এজন্য আরো বেশি বেশি বই পড়ুন, আরো বেশি জানুন এবং সুন্দর, সুষ্টু ও সাবলিল কবিতা বা গান রচনা করে বাংলা সাহিত্বকে আরো সমৃদ্ধ করুন। আর সবচেয়ে বড় কথা হল, এই কথাটি বোঝানই ছিল আমার লেখাটির প্রধান উদ্দেশ্য। 

শনিবার, ৮ জুলাই, ২০১৭

ঝুমরি JHUMRI ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী Tribhubanjit Mukherjee /07.07.2017

 ঝুমরি
JHUMRI 
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী 
Tribhubanjit Mukherjee /07.07.2017
ছেলেঃ- ঝুমরি তোর নাচের তালে মাদল বাজে আমার
Boy Jhumri tor nacher tale madol baje amar
চেনা গানের সুরের তালে মাতাল হলাম আবার
 
chena ganer surer tale matal holam abar
মেয়েঃ- ঝুমরি তোর গানের সুরে পাগল হল আবার
Girl :- Jhumri tor ganer sure pagol holo abar
রসিক নাগোর মরদ আমার মাদল বাজা আবার
 
Roshik nagor marod amar madol baza abar
ছেলেঃ- ঝুমরি তুই ফুলের তোড়া খোঁপায় লাগা আবার
Boy :- Jhumri tui fuler toda khompay laga abar
ফুলের গন্ধে ভরবে আমার পরান টা যে আবার 
Fuler gondhe bhorbe amar poran ta je abar
মেয়েঃ- শক্ত হাতে সামলে নে না সরম কেন আবার
Girl :- Shokto hate bamle ne na sorom kano abar
 
ঝুমরি তোকে মনটা দিল রসিক নাগর আমার
Jhumri toke monta dilo rosik nagor amar
 
ছেলেঃ- ঢোল বাজিয়ে রাত পোহাবে নাচবি আমার সাথে
 
Boy:- Dhol bajiye rat pohabe nachbe amar sathe
 
ঝুমরি তুই আমার ছিলি থাকবি আমার সাথে
Jhumri tui amar chilli thakbi amar sathe
মেয়েঃ- আমার জন্যে এনে রাখিস নতুন শাডী সিন্দুর
Girl:- Amar jonye ene rachis notun shadi sindur
ঘরের কোনে ঘুম পাড়াবি কিনে রাখিস মাদুর
 
Ghorer kone ghum padabi kine rachis madur
ছেলেঃ- ঝুমরি তোর নাচের তালে মাদল বাজে আমার
Boy:- Jhumri tor nacher tale madol baje amar
চেনা গানের সুরের তালে মাতাল হলাম আবার
 
Chena ganer surer tale matal holam abar
মেয়েঃ- ঝুমরি তোর গানের সুরে পাগল হল আবার
Girl:- Jhumri tor ganer sure pagol holo abar
রসিক নাগোর মরদ আমার মাদল বাজা আবার
 
Rosik nagor morod amar madol baja abar
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জ্জী /
পরবের গান
( ঝর্না চ্যাটার্জ্জী র দ্বারা সম্পাদিত আদিবাসী দের ফর্মাটে)
ছেল্যা-- ঝুমরি, তুর নাচের সঙে বাইজছ্যে মাদল
চিনা গান লাগছ্যে কানে হল্যম মাতাল
মেঁইয়া-- তুর গানট শুন্যে ঝুমরি পাগল হল্যেক
রসিক নাগর মরদ আমার ফির বাজাল্যেক
ছেল্যা--ঝুমরি, তুই ফুলট আবার মাথায় দিল্যেক
উয়ার গন্ধে মনট আবার ভর্যেু গেল্যেক
মেঁইয়া--মরণ টানে ধর ক্যানে তুই হাত দু-টাকে
ঝুমরি তুকে মনট দিছে, জানিস বটে !
ছেল্যা-- ঢোল বাজাব, আমার সঙে নাচবি রেতে
ঝুমরি তু আমার ছিলি, আমার বটে...
মেঁইয়া-- শাড়ী সি*দুর রাখবি কিনে
ঘরের ভিতর মাজুরটকে রাখবি আন্যে
ছল্যা-- ঝুমরি তুর নাচের সঙে মাদল বাজাই
চল ক্যানে তুর সঙে আবার মহুয়া খাই
মেঁইয়া--ঝুমরি তুর গানট শুন্যে পাগল হল্যেক
রসিক আমার মরদ বটে জান্ত্যে পাল্যেক...
Top of Form
L
Bottom of Form

বুধবার, ২৮ জুন, ২০১৭

মখছুছ চৌধুরীর লেখা কবিতা 28 June 2014 · #চিরকুট


 
 
মখছুছ চৌধুরীর লেখা কবিতা 
28 June 2014
ও প্রেয়সী বর্ষা আমার,
পত্রে ফুলের সুভাস নিও,
নিও ভালোবাসা
কদমফুলের গুচ্ছে বাঁধা
মনটি নিও খাসা
যুগল পায়ে আলতা নিও
রংধনু লাল থেকে
বুক ভরা নীল কষ্ট থেকে
টিপ নিও সই এঁকে
অঙ্গে নিও আলোর চাদর
জোনাকজ্বলা রাতের
দিন সারারাত সুর যেন হয়
কাঁকন তোমার হাতের
রিম ঝিমঝিম বৃষ্টিরা হোক
তোমার পায়ে নুপুর
সুরে সুরে বাজতে থাকুক
সন্ধ্যে সকাল দুপুর
সুরের ছোয়ায় বনের ময়ুর
নাচুক পেখম খুলে
পানকৌড়ি ডুবসাতারে
দিক পাড়ি দেশ ভুলে
খোপায় নিও জুঁই চামেলী
হলুদগাঁদার সাজে
মাঝদিঘীতে শাপলা যেন
মুখটি লুকায় লাজে
আসবে প্রিয়ে ঘোমটা মেঘের
মুখের উপর দিয়ে
কালান্তরের ধরবো পাড়ি
কেবল তোমায় নিয়ে ।
LikeShow More R

শুক্রবার, ৯ জুন, ২০১৭

প্রেয়সী ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ০৯.০৬.২০১৭



  প্রেয়সী 
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ০৯.০৬.২০১৭ 
নগ্ন প্রেয়সীর উন্নত বক্ষ যুগল 
বিঁধছে চক্ষে তাই ভরে জল । 
কামাতুরা সে নাহি মানে বাধা 
যেন কৃষ্ণের প্রেয়সী রাধা ।
অধরে তাহার স্মিত হাস্য
ভরা যৌবনের অট্ট হাস্য ।
আঁধার রাতে অভিসারে যায়
যৌবন জ্বালা করে অসহায় ।
অধির আগ্রহে বসিয়া রহে সে
প্রেমিকের আসিবার পথ চাহিয়া রয় সে ।
বাজিল বেণু ঝরিল ফুল
প্রেমের আলিঙ্গনে মন আকুল ।
মিলিল দুটি হৃদয় রজনীতে
বাজিল বীণা প্রেমের ধরণিতে ।

বুধবার, ৮ মার্চ, ২০১৭

কুমারী মায়ের আইনি স্বীকৃতি (প্রকাশিত) রাহুল রায়চৌধুরী


কুমারী মায়ের আইনি স্বীকৃতি (প্রকাশিত)
রাহুল রায়চৌধুরী
যাদবপুরে একটা হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে শিক্ষকতা করে রোহিণী (কাল্পনিক), আর বিশাল (কাল্পনিক) ওয়েস্ট বেঙ্গল সিভিল সার্ভিস জয়েন করেছে বছর তিনেক হল । বিশাল বর্ধমান জেলা শাসকের অফিসে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে কর্মরত । ওরা পরস্পরকে ভালবাসে । বাড়ি, অফিস থেকে শুরু করে এলাকার প্রত্যেকেই জানে কিছুদিনের মধ্যেই ওদের বিয়েটা হচ্ছে, তাই ওদের অবাধ মেলামেশায় কেউই কোনদিন কোনও রকম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি ।
এ গল্পে কোনও ‘মধুরেণ সমাপয়েৎ’ ঘটেনি । রোহিণী দেখেছে শেষ বছর খানেক সময়ে বিশালের মধ্যে বেশ খানিকটা পরিবর্তন এসেছে । রোহিণী এটাও লক্ষ্য করেছে বিশাল তার প্রতি এইমুহূর্তে খুব কেয়ারিং, প্রেমিক-প্রেমিক, তো পরমুহূর্তেই একদম উদাসীন, অন্য রকম । এ বিষয়ে কথা বলতে চেয়েও কোনও লাভ হয়নি, বিশাল হেসে এড়িয়ে গিয়েছে বিষয়টা । আবার কখনও অজুহাত দেখিয়েছে – অফিসে ভীষণ কাজের চাপ । শেষমেশ যখন পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠল, একদিন উইক এন্ডে মিলেনিয়াম পার্কে দু’জন দু’জনের মুখোমুখি হল । নিজের মধ্যের সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটিয়ে বিশাল সেদিন ধীরে ধীরে রোহিণীকে জানালো যে বর্ধমান জেলা অফিসে কর্মরতা এক ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে ইতিমধ্যেই ওর একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, এবং পরিস্থিতি বাধ্য করায় দিন সাতেক আগে ওরা রেজিস্ট্রিও করে ফেলেছে ...
সেদিন কোনক্রমে একটা ট্যাক্সি ধরে সারা রাস্তা এক প্রকার কাঁপতে কাঁপতেই বাড়ি ফিরেছিল রোহিণী ।
কিন্তু বিষয়টা জটিলতম হয়ে উঠল, যখন রোহিণী বুঝল যে ইতিমধ্যেই সে অন্তঃসত্ত্বা ...
বিশালের সত্যিটা শোনার পরে বাড়ি থেকে প্রচণ্ড চাপ এল যাতে রোহিণী বিশালের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করে, এবং দ্বিতীয়ত, সময় থাকতেই যেন রোহিণী বাচ্চাটাকে অ্যাবোর্ট করে দেয় ।
একদিকে নিজের জীবন, ভবিষ্যৎ, পারিবারিক/সামাজিক সম্মান, ইত্যাদি ভাবনা, অন্যদিকে নির্দোষ একটা ভ্রূণকে হত্যা করা ... ক্রমশ এক ভাবনা থেকে অন্য ভাবনার আবর্তে পড়ে ছটফট করতে থাকে রোহিণী । কী করা উচিৎ আর কী নয়, সেটাই এক বিরাট প্রশ্নচিহ্ন হয়ে পেন্ডুলামের মত ঝুলতে থাকে রোহিণীর সামনে ।
রোহিণী নিজের সঙ্গে লড়াই করে করে রক্তাক্ত হয় প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তে । কিন্তু এভাবে তো চলতে দেওয়া যায় না । রোহিণী প্রত্যেক মুহূর্তে দেখছে ওর সঙ্গে ওর বাড়ির লোকজনও কী দুঃসহ দিন কাটাচ্ছে । আরও কিছুদিন কেটে গেলে এবার রোহিণী মাথা ঠাণ্ডা করে ভাবতে বসে, তার ঠিক কী করা উচিৎ ?
রোহিণী স্বাবলম্বী । রোহিণী ভেবে দেখে এই সমস্ত কিছুর পরেও ওর গর্ভস্থ ভ্রূণটার তো কোনও অপরাধ নেই, তাহলে ও কেন শাস্তি পাবে ? আস্তে আস্তে ও একটা স্থির সিদ্ধান্ত পৌঁছতে চেষ্টা করে । কিছুতেই ‘অ্যাবোর্ট’ করবে না বাচ্চাটাকে । অনাগত এই সন্তানকে পৃথিবীর আলো, বাতাস, খুশি, আনন্দ, কোনও কিছু থেকেই বঞ্চিত করবে না, কিছুতেই না । আর বিশালকেও জানতে দেবে না তার পিতৃপরিচয় । আর এ সবকিছুর জন্য পুরো জীবনে যত লড়াইই ওকে করতে হোক, করবে । এ সন্তান হবে একান্ত ভাবেই ওর একার । রোহিণীর পরিচয়েই এই সন্তান পৃথিবীতে পরিচিত হবে ...
বাচ্চা জন্মের পরে রোহিণী বাচ্চার বার্থ সার্টিফিকেট ইস্যু করবার জন্য, এবং সেই সার্টিফিকেটে তাকেই বাচ্চার মা এবং অভিভাবক হিসাবে লেখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নির্ধারিত বয়ানে আবেদন জানালো, যেখানে বাচ্চার পিতার জায়গাটা পেন দিয়ে কেটে দিল । কিন্তু আইনানুযায়ী, বার্থ সার্টিফিকেট ইস্যু করবার জন্য বাচ্চার বাবার নাম, ঠিকানা, ইত্যাদি তথ্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো বাধ্যতামূলক । কর্তৃপক্ষ তাই, রোহিণীর কাছে বাচ্চার বাবার নাম, ঠিকানা, ইত্যাদি তথ্য জানতে চাইলো । উত্তরে রোহিণী বলল এ বাচ্চা শুধুমাত্র ওর একার, বাচ্চার কোনও বাবা নেই । রোহিণীর উত্তরে সন্তুষ্ট না হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রোহিণীকে জানিয়ে দিল যে বাবার নাম, ঠিকানা, ইত্যাদি তথ্য না জানালে ওরা বাচ্চার বার্থ সার্টিফিকেট ইস্যু করতে পারবে না । উল্টোদিকে, যে বাবা তার বাচ্চার জন্ম বিষয়েই ওয়াকিবহাল নয়, তার কাছে বাচ্চার পিতৃ-পরিচয় দাবি করে রোহিণী কিছুতেই তার বিড়ম্বনার কারণ হতে চাইলো না । আবেদন, নিবেদনে যখন কিছু হল না, রোহিণী তখন বাধ্য হয়ে গার্জেন কোর্টের দ্বারস্থ হল, এবং Guardians and Wards Act, 1890 এর Sec. 7 বলে তাকে ওই বাচ্চার একমাত্র অভিভাবক ডিক্লেয়ার করবার জন্য আবেদন জানালো । উপরোক্ত আইনের Sec. 11 অনুযায়ী বাচ্চার সম্ভাব্য অভিভাবকদের নোটিশ দেওয়া বাধ্যতামূলক । এবার কোর্টও রোহিণীকে বাচ্চার বাবার নাম জানাতে বলল । কিন্তু রোহিণী নিজের সিদ্ধান্তে অবিচল । দ্ব্যর্থহীন ভাষায় রোহিণী কোর্টকে জানালো যে বাচ্চার বাবা এই বাচ্চার জন্ম বিষয়ে কিছুই জানেন না, তাই তার নাম এখানে অদরকারী । আদালতের রায় রোহিণীর বিরুদ্ধে গেল । তার আবেদন খারিজ হয়ে গেল । নাছোড়বান্দা রোহিণী এরপর উচ্চ-আদালতের দ্বারস্থ হল । কিন্তু, সেখানেও ওর আপীল খারিজ হয়ে গেল । শেষমেশ, রোহিণী সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়ের দ্বারস্থ হল । ফাইল হল স্পেশাল লিভ পিটিশন ...
এটুকুই ছিল গল্প । এরপর কিন্তু আর কোনও গল্প নেই ...
এরপর এক যুগান্তকারী রায়, ইতিহাস ... দেশের প্রথম সারির দৈনিকগুলোতে বড় বড় হেড লাইনস – ‘কুমারী মায়ের আইনি স্বীকৃতি ... অভিভাবক হতে জরুরী নয় বিয়ে ।’
রোহিণীর মত মা যারা, তাঁদের প্রত্যেকেরই সামাজিক সম্মান ও একক মাতৃত্বের বিষয়টিকে আইনি স্বীকৃতি দিতে অবশেষে পথ দেখালো মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট । SLP (Civil) No. 28367 of 2015 : ABC Vs. The State (NCT of Delhi) মামলায় আপীলটি অ্যালাউ করবার সময় মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট এই মর্মে নির্দেশ জারী করেছেন – ‘The Appeal is, therefore, allowed. The Guardian Court is directed to recall the dismissal order passed by it, and thereafter, consider the Appellant’s application for guardianship expeditiously without requiring notice to be given to the putative father of the child.’
না, মাননীয় সর্বোচ্চ আদালতের আদেশবলে এখন আর গার্জেন কোর্ট রোহিণীর কাছে বাচ্চার পিতৃ-পরিচয় জানতে চাইতে পারে না । বাচ্চাটির সার্বিক কল্যাণের জন্য এবং অবশ্যই বাচ্চাটির জন্ম/উপস্থিতি বিষয়ে ওয়াকিবহাল নয়, এমন একজন ব্যক্তিকে, শ্রেফ নিষেকের জন্য তার স্পার্ম ব্যবহৃত হয়েছে – এই কারণে কোর্টে উপস্থিত হওয়ার নোটিশ পাঠানোর কোনও প্রয়োজন নেই । আমরা আশা করছি, এরপর আর কোনও আইনি প্রতিবন্ধকতা রোহিণীর সামনে আসবে না, এবং এই প্রবন্ধ প্রকাশিত হওয়ার সময় পরিসরে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে, আর রোহিণীও পেয়ে যাবে তার বাচ্চার কাঙ্ক্ষিত ‘অভিভাবকত্ব’ (guardianship) ।
সুপ্রিম কোর্টের আদেশানুসারেই ৬ই জুলাই, ২০১৫র উপরোক্ত আদেশটি All India Reporter (AIR)-এ reportable, অর্থাৎ এমন প্রত্যেকটি মামলার ক্ষেত্রেই দেশের সকল উচ্চ ও নিম্ন আদালতগুলিতে এই আদেশটি প্রদর্শিত (citation) হতে পারে/গ্রাহ্য, এবং এরপর থেকে গার্জেন কোর্ট আর কোনভাবেই আবেদনকারীর কাছে ‘বাচ্চার বাবা কে, বা তার ঠিকানা কী’ জাতীয় তথ্য জানতে চাইতে পারবে না । স্বাভাবিকভাবেই, সকল এই প্রকার মামলার ক্ষেত্রে Guardians and Wards Act, 1890-এর Sec. 11 ধারায় বাচ্চার বাবাকে (natural father) নোটিশ পাঠানো আর বাধ্যতামূলকও রইলো না ।
বাচ্চার অভিভাবকত্ব নির্ণয়ের প্রশ্নে ‘Putative father’কে নোটিশ পাঠাবার আর কোনও প্রয়োজন নেই – এই আদেশটি নিশ্চয়ই আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির কাছে এক যুগান্তকারী পালাবদল । ভারতবর্ষের মত ঘন জনবসতিপূর্ণ দেশে যেখানে পিতৃতন্ত্রের অভিভাবকত্ব থানা গেড়ে বসে রয়েছে মহিলাদের প্রত্যেকটি শ্বাসপ্রশ্বাসের উপরে, যেখানে পুরুষ এবং পুরুষশাসিত সমাজের দাপটে আজও মহিলাদের ‘স্বাভাবিক মানসিক বিকাশ’ ঘটতে পারে না, এবং একটা সময়ের পর থেকে যেখানে মহিলারা তাঁদের স্বাভাবিক চিন্তাশক্তি পর্যন্ত হারিয়ে শুধুমাত্র একজন ‘মেয়েমানুষে’ পর্যবসিত হয়, যেখানে মহিলারাই তাঁদের কন্যা সন্তানকে, শুধুমাত্র সে মেয়ে, এই কারণেই সর্বক্ষণ ভিন্ন ভিন্ন নিষেধের বেড়াজালে বেঁধে ফেলতে চান, যেখানে মেয়েদের শুধুমাত্র সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র হিসাবে গড়ে তোলা হয়, সেখানে সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়/আদেশ দেশের কম-বেশি প্রায় সকল মহিলাদের কাছেই খানিকটা হলেও স্বস্তির অক্সিজেন যোগাবে ।
কুমারী মায়ের বাচ্চার অভিভাবকত্বের প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্ট আমাদের রাস্তা দেখিয়েছে ঠিকই, কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট তো আর ভারতীয় গণতন্ত্রের আইনসভা নয়, তাই দেশের পুরনো আইনে নির্দিষ্ট কোনও সংশোধন আনা, কিম্বা দেশবাসীর জন্য নতুন আইন তৈরি করে দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের এক্তিয়ারে পড়ে না । দেশের নির্বাচিত সরকারকেই এ বিষয়ে দায়িত্ব নিয়ে পার্লামেন্টে বিল আনতে হবে । পাশ করাতে হবে আইনের নতুন খসড়া । তৈরি করতে হবে মহিলাদের সমানাধিকার প্রশ্নে নতুন আইন ।
তৃতীয় বিশ্বের মহিলাদের মধ্যে শিক্ষার হার বাড়ছে । আজ তারা বুঝতে শিখছে কী তাদের অধিকারের মধ্যে পড়ে, আর কতখানিই বা তাদের এক্তিয়ার । প্রসঙ্গত, আজ মহিলারা যতই শিক্ষিত হচ্ছে, সমাজে মাথা তুলে দাঁড়াতে চাইছে, ততই প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছে ‘বিবাহ’ নামের সুপ্রাচীন প্রতিষ্ঠানটি । বিবাহ নামক শোষণ যন্ত্রের হাত থেকে অব্যাহতি চাইছে উচ্চ-শিক্ষিত মহিলাদের এক বড় অংশ । একা জীবনের প্রচুর প্রতিবন্ধকতা, ইত্যাদি সত্যিকে মেনে নিয়েও আজ অনেকে মহিলাই একা’র স্বাধীনতাকে বিসর্জন দিতে রাজি নয় । প্রথম বিশ্বের হাওয়া আমাদের তৃতীয় বিশ্বে বইতে শুরু করলে এ দেশের মেয়েরাও বুঝবে একটু ভাল থাকা, সমাজে সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে বাঁচা, ইত্যাদির জন্য আজ সত্যিই পুরুষকে তাদের কোনও প্রয়োজন নেই । তাই এই সময় চিৎকার করে করে বলতে চাইছে - মানবিকতার স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে আজ মহিলাদের প্রয়োজন নতুন আইন, যেখানে তারা নিজেই নিজেদের জীবনের ছোট, বড় সকল সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, নিজের মত করেই জীবন অতিবাহিত করতে পারবে, আর এজন্য তাকে কোনও পুরুষের অনুমতি নিতে হবে না ।
এমন নয় যে আমাদের দেশের প্রত্যেক মানুষ দু’হাত বাড়িয়ে স্বাগত জানাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে । অনেক মানুষই আশঙ্কিত । তারা মনে করছেন সুপ্রিম কোর্টের এই রায় দেশের জননৈতিক ভারসাম্যকে বিঘ্নিত করবে । পুরুষের অপরাধ প্রবণতা বাড়বে । পুরুষের আর কোনও দায় থাকবে না তার বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জন্ম নেওয়া সন্তানকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে, ফলত ‘বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণ’ বাড়বে, বাড়বে লক্ষগুণে ‘কুমারী মাতৃত্ব’ । কুমারী মায়ের বাচ্চাদের জন্য স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, তথা দেশের সমাজ ব্যবস্থায় কিছুটা হলেও শ্রেণিবৈষম্য তৈরি হবে । অনেকেই অভিমত দিচ্ছেন এর ফলে সমাজ ব্যবস্থার মৌলিক কাঠামো ধ্বংস হবে, এবং ভারতবর্ষ মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার দিকে ঝুঁকে পড়বে । যুক্তির বিপরীতেও প্রচুর যুক্তি রয়েছে । কেউ কেউ উদাহরণ দিচ্ছেন ইউরোপ ও আমেরিকার মত উন্নত দেশগুলির, যেখানে বাচ্চার বার্থ সার্টিফিকেট ইস্যু হয় বাচ্চার মায়ের নামই যথেষ্ট, যেখানে বলা হচ্ছে বাচ্চাটিই দেশের সম্পদ, যেখানে বাবার নাম অপশনাল হিসাবে লেখা হয় । সর্বোপরি, ইণ্ডিয়ান পেনাল কোডের ৩৭৬ নং ধারা যতক্ষণ বর্তমান রয়েছে, ততক্ষণ আমরা ‘লক্ষগুণে কুমারী মাতৃত্ব বাড়বে’ বক্তব্যকে আমল নাও দিতে পারি । তাই, সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের জন্য ‘হায় হায় ! সবকিছু শেষ হয়ে গেল ...’ জাতীয় ভাবনাগুলোকে বস্তায় পুরে বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপ করা যেতেই পারে ।
সময়ের সাপেক্ষে সবকিছুকেই বদলে ফেলতে হয় । এবার পুরুষকেও নিজেকে বদলে নিতে হবে । বদলে ফেলতে হবে মহিলাদের উপর ‘প্রভুত্ব’ করতে চাওয়ার শতাব্দী পুরনো পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতাকে । সমাজ ব্যবস্থায় মহিলাদের সমাধিকারের বিষয়টি বাস্তবিক অর্থেই সর্বজনগ্রাহ্য হতে হবে । পারিবারিক ভিত্তিমূল থেকেই নারী-পুরুষ ভেদাভেদ মুছে ফেলতে হবে । সমাজকে আক্ষরিক অর্থেই বুঝতে হবে প্রতিটি কন্যা সন্তানই রাষ্ট্রের কাছে ঠিক ততখানিই গুরুত্বপূর্ণ, যতখানি একটি পুত্র সন্তান । সমাজকে আরও বুঝতে হবে দেশের মোট জনসংখ্যার ৪৯% মানুষই মহিলা, এবং রাষ্ট্রের ভাগ্য নির্ধারণে এই ৪৯% মানুষ এক বিরাট বড় ফ্যাক্টর, এবং এই মানুষগুলোই আজ দেশের সার্বিক উন্নয়নে পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শ্রম দিচ্ছে, তাই সর্বক্ষেত্রে তাদের সমতার অধিকার আছে ।
এসব আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক চলতেই থাকবে, কেননা সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের মধ্যে দিয়ে আমাদের দেশের ‘পুরুষতন্ত্র’ আজ কিছুটা হলেও ধাক্কা খেয়েছে । তবুও আমরা চাইবো নারীর সমানাধিকারের প্রশ্নে দেশজুড়ে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রেখেই তর্ক-বিতর্ক হোক, আর সেই তর্ক-বিতর্কের মধ্যে দিয়ে উঠে আসুক সামাজিক স্থিতিশীলতা, প্রতিষ্ঠিত হোক সমাজে নারীর সমানাধিকার ।
হয়তো আরও অনেকটা সময় লাগবে আমাদের সমাজে সে স্থিতিশীলতা আসতে, হয়তো ততদিনে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে যাবে, তবুও আমরা আশাবাদী থাকবো, আমরা চাইব ভারতবর্ষের মহিলারা নিজের জীবন, বেঁচে থাকা, মাতৃত্ব, সমাজ, শিক্ষা, সংস্কৃতিবিষয়ে পুরুষের সমান অধিকার পাক, অধিকার পাক নিজের সন্তানের ‘অভিভাবক’ হওয়ারও, আর তার জন্য যেন তাকে আর কোনদিন এক আদালত থেকে অন্য আদালতে দৌড়তে না হয় .

শুক্রবার, ৩ মার্চ, ২০১৭

নির্মলেন্দু কুণ্ডুর লেখা ক্ষুদ্র গল্প
শিশু
নির্মলেন্দু কুণ্ডু
—"ভারতের পোথ্থম পোধানমন্তি কে জানিস?"
—"ক্যা রে?"
—"রলাল নেহেরু"
—"রলাল,ই আবার ক্যামন নাম রি৷এরম ত শুনি লাই৷"
—"আরে,কাগজখান ওহান থেইক্যে কাটা ছিল৷আগে একটুকুন নাম ছ্যালো৷"
—"ও..জানিস তো,সেদিন এক গপ্প পড়ল্যাম৷ওই মজিদ চাচা বুলছিল না,ও বানিয়ে বুলছে৷দেখলাম,সেই গল্পখান কাগজে ছাপা৷বুড়া মিছে কথা কইছে৷"
—"কস কী রে!"
—"তাইলে আর কইছি কী?ওই,তু ও কী পড়তাছিস রে!"
—"এই কাজগখান দ্যাখ,সেই ছোট্টতে গেরামের ইস্কুলে মাস্টার পইড়েছিল,আমি আর তুই পারিনি বুলে কি সপাং-সপাং বেতের বাড়ি!সেই কবতেখান৷"
—"দেখি দেখি৷হা রে৷তাই তো৷এডা রেখে দে৷পরে পুড়বো৷এই চ,চ৷দেরি কইরলে আবার ওস্তাদ মাইরবে৷"
আবর্জনার স্তূপ থেকে বেরিয়ে এল ন্যাপলা আর মাসুদ৷ওদের পাশ দিয়ে তখন হেঁটে চলেছে স্কুলগামী কিছু সুবেশ শিশু!

রবিবার, ১ জানুয়ারী, ২০১৭

সুস্মিতা বসু সিং দ্বারা সম্পাদিত "এবং একুশ" বাংলা কবিতার পত্রিকায় ০১ ডিসেম্বর ২০১৬ তে আমার লেখা কবিতা "তুমি অনন্যা" প্রকাশিত হয়েছে। http://ebongekush.blogspot.in



 সুস্মিতা বসু সিং দ্বারা সম্পাদিত "এবং একুশ" বাংলা কবিতার পত্রিকায় ০১ ডিসেম্বর ২০১৬ তে আমার লেখা কবিতা "তুমি অনন্যা" প্রকাশিত হয়েছে। http://ebongekush.blogspot.in 
Thursday, 1 December 2016
তুমি অনন্যা
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী
চাঁদ তোমায় দেখে মুখ লুকোয় মেঘের আড়ালে
বাতাস তোমার সুবাসে মাতোয়ারা
ফুল তোমার আগমনী বার্তা আনে
আকাশ থেকে পুষ্প বৃষ্টি ঝরে
নদী গায় তোমার রূপের গান
তুমি অনন্যা তুমি মন কর মাতোয়ারা।
আমি আকাশ থেকে চেয়েছি তোমায় মেঘের আড়াল থেকে
বৃষ্টি মধুর রাতে দেখি তোমায় আপন মনে
চাঁদের পানে চেয়ে দেখি তুচ্ছ সে তোমার কাছে
তাই ত আমি তোমায় দেখি দু চোখ ভরে ।