শুক্রবার, ১১ মে, ২০১২

দ্রৌপদী


‎[ কিছুদিন পূর্বে ঘটিত এক অমানবিক ঘটনা এই কবিতাটির উৎস । সঙ্গত কারণেই নাম ধাম ইত্যাদির পরিবর্তন করা হয়েছে।]

দ্রৌপদী

ঠা ঠা রোদ্দুরে
বসে ছিল ছেলেটা
পুঁটলি ছিল মাথায়
মেয়েটার আশায়
বসে বসে প্রহর গোণে...

ধনঞ্জয় মুর্মু
কাঠ কাটে, চাষে খাটে
জনমজুরের জীবন কাটে
ছিল একটা পাতাকুড়ুনি
আদিবাসী মেয়ে পানমণি
ভাব হল দুজনে ।

কিন্তু তারা একজাত
তাদের ঘরে চলে না ভাত
জ্ঞাতি-গুষ্টি সবাই গেল রেগে
মো’ল্পাহাড়ী, রামপুরহাট, সেখান থেকে
সিধা লখনোউমারা যাবে ভেগে
সেটাই হল ঠিক।
পাথরখাদানে কাজ ক’রবে
দুজনে সুখে থাকবে
স্বপ্ন নামে চোখের পাতায়
জল ক’রে চিক চিক...
ধনঞ্জয় মুর্মু বসে থাকে
পানমণির আশায়
সময় যায় বয়ে টিক টিক...

সকাল গড়িয়ে দুপুর,তারও পরে বিকেল
ঘোর ভাঙ্গে গোলমালে
চীৎকার, লোকজন
হাতে টাঙ্গি, বল্লম
বিবস্ত্রা দ্রৌপদী চলে রাস্তায়, দুধারে
হাজারো দুঃশাসনে রেখেছে ঘিরে
আছে সমাজের ভীষ্ম, বিদুর
সময়ে যারা মূক ও বধির
যে নীরবতা উৎসাহ দেয় অপমানে

বেদনায় নীল মুখ ভয়ার্ত, কাঠ
মাথার উপরে দু-হাত

কাতারে কাতারে লোক
লোলুপ রক্তচোখ
চেটে দ্যাখে আদিবাসী মেয়ে
বিবস্ত্রা পানমণি
কঠিন মুখখানি
জনতার যুদ্ধক্ষেত্রে
খুঁজে ফেরে প্রেমিক ধনঞ্জয়ে ।

এলোপাথাড়ি মার
বুঝি বা ধনঞ্জয় এবার
জনতার রোষে হয় মৃত
নগ্ন আদিবাসী মেয়ে
পার হয় সমুখ দিয়ে
জনতা পান করে ঘৃণ্য-অমৃত ।

কয়েকবছর পর,
পানমণি উঠে আসে খবরের পাতায়
সেদিনের দ্রৌপদী
আদিবাসী পানমণি
পুরস্কার ‘সাহসিনী’
পায় সে, শংসাপত্র আর কিছু টাকায়
চাপা পড়ে দুঃশাসনের পাপ
চাপা পড়ে ভীস্মদের মিথ্যা বিলাপ

একাকী দ্রৌপদী,
বুকের ভিতরে ক্রোধ
জ্বলে ও ঠে আগুন চোখ
ঘুরে ফেরে বনভূমি, মাঠ,ঘাট সব...
যেখানে শায়িত ছিল
ধনঞ্জয়ের শব।

ঝর্না চ্যাটার্জি

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন