বৃহস্পতিবার, ১২ জুলাই, ২০১২


আত্মজ
~~~~

কোন কোন স্নিগ্ধ কাক-ভোরে ,
আধো স্বপ্ন ,আধো জাগরনে ,
নিঃশব্দ শিশির-বিন্দুর মত ,
শব্দেরা সব ভেসে আসে ,
স্থির-ডানা পাখি হয়ে ,
একে একে নামে ,
বোধের বন্দরে ,
অতি ধীরে,
সুস্থিরে !

সারারা্তে
হিমায়িত মন ,
শীতল স্পর্শে তার ,
সেই সব শিশির-বিন্দুরে ,
জড়ো করে শব্দের মুক্তো বানায় !

কুড়িয়ে তুষার-স্বচ্ছ শুভ্র মুক্তোগুলি যত ,
রামধনু-মন,কল্পনার রঙ্গীন সুতোয়,
গেঁথে তোলে এক শব্দ-মালা ,
ছড়িয়ে হৃদয়-রক্ত,লাল ,
স্নিগ্ধ-পূত সে মালায় !
একান্তে জন্ম নেয় ,
আত্মজ আমার ,
বড়ো বেদনার ,
আনন্দে ,
আজ !

 দেবাশিষ কাঞ্জিলাল
      ১৩/৭/২০১২

বুধবার, ১১ জুলাই, ২০১২





নীল নীলাম্বরী তুমি ,
নীলিমার নীলে মিশে যাও বার বার ।
নীলকণ্ঠে সূর তুলে গেয়ে যাও তোমার যৌবনের গান ।
নীলাম্বরী তোমার আঁচলের আড়ালে লূকাও তোমার না বলা কষ্টকে ,
ঐ দুচোখের কোণে লুকিয়েছ তোমার অধরা ভালোবাসাকে ।
নীল নীলাম্বরী ,
তুমি পথ চলতে থাকো ইচ্ছের ডানা মেলে দিয়ে ।
তোমার কপোলের টিপ যেন চির সাক্ষী হয়ে রইবে
তোমার অতৃপ্ত অন্তরজামির ।
তোমার নীলাভ মূখখানি যেন ,
তার হৃদ হতে অন্তর্ধান না হয়ে যায় কভু !
নীল নীলাম্বরী ,
তুমি সঞ্চিত করে রেখো তোমার অধরা ভালোবাসাকে !!!
 
                      নাফিয়া সুলতানা
                           

সোমবার, ৯ জুলাই, ২০১২


পাপ
-----
দেবাশিস কাঞ্জিলাল
-----------------
দ্বীপপুঞ্জে পাশাপাশি ,
থাকে বহু দ্বীপ !
পাশাপাশি থাকে,
তবু চেনে না তাহারা,
একে অন্যেরে !

শুধু ভূমিকম্প হলে,
একসাথে ডুবে যায় যখন তাহারা ,
তখনই চিনিতে পারে সহ-দ্বীপটিরে,
তবে,সে তো শুধু
অতলে তলানো এক সমাপ্তির ক্ষণে !

হায়,
এ' কাহার পাপ !

তোমার খাতায় মাইনে কত ?

মাঝবয়সী মহিলা এক দুর্দশা কাতর,
কেহ বলে পাগলী তারে,কেহ ভাবে চোর।
নোংরা,ছেঁড়া শাড়ী পরা,পায়ে ছেঁড়া চটি,
হাতে নিয়ে খাতা কলম,চলেছে পথ হাঁটি।
মাঝে মাঝে হাত তুলে কি বলছে মৃদু স্বরে,
শুনতে পেলেও,সে কথা কেউ বুঝতে নাহি পারে।
শুধাই তারে,কি হয়েছে ?বলে ভীষণ রেগে-
'তোমার খাতায় মাইনে কত ? দেখাও দেখি আগে।'

চমকে উঠি,ঠিক কথা তো,মাইনে আমার কত ?
জন্ম থেকে আজ অবধি কাজ করেছি যত।
ছেলে মেয়ের ভরণপোষণ,পালন পরিবার,
সবার কথাই ভেবে গেলাম,না ভেবে 'আমার'।
বিনিময়ে কি পেয়েছি ? কি বা সার্থকতা ?
করিনি তার হিসাব নিকাশ,বানিয়ে হিসাব খাতা।
জানতে হবে,রহস্য কি - ইচ্ছে মনে জাগে,
বলি তারে,'তোমার খাতা দেখাও দেখি আগে।'

বসিয়ে তারে জল খাবারের দোকানের এক পাশে,
খাতা খুলে বলব কি আর দুঃখে মরি হেসে।
পাতায় পাতায়,হেথায় হোথায় চোখ বুলিয়ে দেখি,
নানা স্থানে নানা বিষয়,চিহ্ন আঁকিবুঁকি।
প্রথম পাতায় নাম লেখা-'শ্রী শ্যামা চরণ রায়',
তাহার হিসাব তিরিশ পাতা,দেখেই বোঝা যায়।
বিয়ের পরের তিরিশ বছর তিরিশ পাতায় ধরা,
জমা-খরচ,দেনা-পাওনা, সেই হিসাবে ভরা।

দয়া,মায়া,ভালবাসা,স্নেহ,আদর আদি,
জমার ঘরে লিখে,পাশে আঁকা কলার কাঁদি।
প্রতি পাতার এক ধারেতে ঢ্যারা চিহ্নের সার,
তলায় লেখা,'প্রতিটি দাগ- প্রতি বারের প্রহার'।
কাপড় কাচা,বাসন মাজা,রান্না করার মাসি,
সে সব খরচ প্রতি পাতায় লেখা রাশি রাশি।
সর্বশেষে হিসাব কষা,গণিকালয়ের ব্যয়,
বলি তারে,না বুঝালে বুঝতে পারা দায়।

সজল চোখে মহিলা কয়,''ভাবছ,পাগল আমি ?
আমি পাগল নই কো মোটে,পাগল পশু স্বামী।
দয়া,মায়া,স্নেহ,আদর ছিল না ওর মনে,
পশুবৃত্তি ছাড়া শ্যামা আর কিছু না জানে।
তিরিশ বছর ওনার ঘরে বেশ্যাগিরির পরে,
যৌবনেতে ভাঁটা দেখে,দিলো যে দূর ক'রে।
ব্যর্থ আমার জীবন বাবু,বিচার কি এর নাই ?
লিখেছি তাই হিসাব খাতায়,পাওনা টাকা চাই।''

প্রতি মাসে ভাত-কাপড়ে হাজার টাকা ধরে,
তিন লক্ষ ষাট হাজার ব্যয় তিরিশ টি বছরে।
দেনা বাবদ আমার নামে দেখুন আছে লেখা,
দয়া,মায়া কাঁচকলা ওর,তাই তো কলা আঁকা।
কাপড় কাচা,বাসন মাজায় তিনশো ধরে মাসে,
এক লক্ষ আট হাজার তো হিসাব মতই আসে।
রান্না করার মাসির বেতন চারশো মাসে হলে,
এক লক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার হিসাবেতে মেলে।

গণিকালয়ে দিন-রাত্রি মোট একশো ধরে,
দশ লক্ষ আশি হাজার পাওনা এ সংসারে।
তের লক্ষ বত্রিশ হাজার পাওনা আমার লেখো,
দেনা বাবদ দেয় টাকা,বিয়োগ ক'রে দেখো-
নয় লক্ষ বাহাত্তর হাজার ঠকিয়েছে মোরে,
পতি সাজার সুযোগ পেয়ে,প্রতারণা ক'রে।
সম্পর্ক টা চুকে গেছে,নয় তো সে আর পতি,
তবে কেন মেনে নেব,এমন বিরাট ক্ষতি ?

দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা ক'রে চলে না তো আর,
পাগল বলে ঢিল ছোঁড়ে সব,চালায় অত্যাচার।
এক পশুতে ছেড়ে দেওয়ায়,হাজার পশু ঘোরে,
ইচ্ছে ক'রে পাগল সাজা,ভয় যেন পায় মোরে।
হিসাব খাতা নাও গো বাবু,করো প্রতিকার,
নারীর প্রতি না হয় যেন এমন অবিচার।''
শুনে তাহার সকল ব্যথা,চোখের জলে ভাসি,
পুরুষ জাতির প্রতিনিধি আমি ও সমান দোষী।

ভেবে দেখি,সব পুরুষ ই 'শ্যামা চরণ রায়',
সামান্য তার হের ফেরে তে কি বা আসে যায় ?
নিজের বেলায় হিসাব কষে পূর্ণ ষোলো আনা,
নারী,-সে তো শাস্ত্রমতে বিনা পয়সায় কেনা।
দেহের মোহেই প্রেম-পিরিতি,দেহই ভালবাসা,
দেহই তাদের রঙিন স্বপন,দেহই তাদের নেশা।
চায় নারী কে আপন ক'রে,চায় শুধু তার মন,
এমন পুরুষ পৃথিবীতে আছে বা কয় জন ?

পুরুষ জাতির দম্ভ যাহা,নারীর অপমান,
নারী জাতির বলিদানে,পুরুষ বলীয়ান।
কাপড় কাচা,বাসন মাজা,রান্না,শিশু পালন,
পতির সেবায় জীবন পাত আর পতির সাথে শয়ন।
ঘরে ঘরে নারীর মনে প্রশ্ন যদি জাগে-
'আমার খাতায় মাইনে কত ?হিসাব দেখি আগে।'
বলুন তো সব শ্যামা চরণ,কি দেবেন উত্তর ?
মুখোশ তো আজ খুলে গেছে,তাই কি নিরুত্তর ?

****************************************
সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি
****************************************

শনিবার, ৭ জুলাই, ২০১২

বৃহস্পতিবার, ৫ জুলাই, ২০১২

             ‘গঙ্গা’

ফেসবুকেতে বাবার শ্রাদ্ধ ***

বন্ধু ছিলেন ফেসবুকেতে ‘ভুবন মোহন জানা’
তোমাদের ও অনেকের-ই হয়তো তিনি চেনা।
বন্ধু তাহার হাজার চারেক ‘বন্ধু-তালিকাতে’,
তাদের নিয়েই মত্ত তিনি সারাটি দিন রাতে।
ফেসবুকেতে কে আর বলো কাহার খবর রাখে?

হঠাৎ আমার লক্ষ্য হ’লো,পাচ্ছি না তো তাকে।
দুই-চার দিন খোঁজের পরেই,ছেড়ে দিলাম খোঁজ,
সময় কোথায়?একজনকেই খুঁজবো আমি রোজ?

এক সকালে দেখতে পেলেম,সবার দেওয়ালে-তে,
কালো রঙ্গে লেখা চিঠি,‘গঙ্গা’লেখা তা তে।
ভাল করে পড়ে দেখি,মোদ্দা কথা সার-
“ফেসবুকেতে শ্রাদ্ধ বাবার আগামী সোমবার।”
‘ফেসবুকেতে শ্রাদ্ধ যে হয়’ শুনিনি তো আগে,
জানতে হবে ব্যাপার টা কি,ইচ্ছা মনে জাগে।
অনেক খুঁজে ঠিক ঠিকানা পেয়ে গেলাম যেই,
এক সকালে হাজির হলাম বন্ধুর বাড়িতেই।

সেথায় দেখি,ন্যাড়া মাথায় বসে আছে ছেলে,
‘মাথায় কালো চুলের আভাস’,সন্দেহে মন দোলে।
প্রশ্ন করি,“শ্রাদ্ধ হবে আগামী সোম বারে,
এত আগেই বসে আছো মাথা ন্যাড়া করে ?”
ছেলে বলে,"শুনুন কাকু,শ্রাদ্ধ হয়ে গেছে,
একটু খানি কাজ এখন ও বাকি যে রয়েছে।
শ্রাদ্ধ-শান্তি হওয়ার পরে শাস্ত্র অনুসারে,
স্বপ্নে দেখা দিয়ে বাবা,আদেশ দিলেন মোরে।

“বাস্তবেতে বন্ধু যারা,তারা খেলেন ভোজ,
ফেসবুকের ওই বন্ধুগুলো পেলো না তো খোঁজ।
পাশ-ওয়ার্ড টা জানিয়ে দিলাম,প্রোফাইল টা খুলে,
লিখে নিয়ো নাম সকলের,যেয়ো না কো ভুলে।
পত্র দিয়ে সব দেওয়ালে,জানিয়ে দেবে সবে,
ফেসবুকেতে নতুন করে শ্রাদ্ধ আমার হবে।
যাদের সাথে এত বছর কাটিয়েছি দিন,
মরার পরেই ভুলে যাব,এতই আমি হীন ?

সোমবারেতে সব দেওয়ালে অতি সকাল বেলা,
পোষ্ট করবে আমার ছবি গলায় দিয়ে মালা।
দই,সন্দেশ,রসগোল্লার প্রচুর পরিমানে,
ফটো দিয়ো সব দেওয়ালে,যেখানে সেখানে।
ফ্রায়েড রাইস,মাছ,মাংসের ফটো ও একসাথে,
দিয়ে তুমি লিখে দেবে তাদেরই তলাতে-
ফেসবুকেতে খাবার জিনিস ছবি দেখেই খায়,
খাদ্য খেয়ে মুক্ত করুন আমার পিতৃদায়।”

ফিরে এলাম নিজের বাড়ি,নিয়ে নতুন জ্ঞান,
মারা গেলেও বন্ধু সবার রেখেছে সন্মান।
কথা মত সোমবারেতে সবার দেওয়ালেতে,
পোষ্ট হয়েছে রাশি রাশি খাবার দুপুরেতে।
ভাবছো এ তো মজার খবর ?চিন্তা করে দেখো,
বন্ধু-বিয়োগ হলে মোরা জানতে পারি না কো।
গল্প শুধু গল্প তো নয়,শিক্ষা দেবার ছল,
আশা করি,ভবিষ্যতে ফলবে কিছু ফল ।

****************************
সমর কুমার সরকার /শিলিগুড়ি
****************************