বুধবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১২

কাল তুমি আলেয়া আজ ডাক বারে বারে/ ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী



কাল তুমি আলেয়া আজ ডাক বারে বারে

কার ছোঁয়া লাগে মনে মন চায় বারে বারে

দেখিনি তো তারে ধরে রেখেছি তার স্মৃতি

বুঝিনি সে চলে যাবে রেখে গেছে স্মৃতি

চাঁদের কোলে যে ওই তারা ঝিকি মিকি

সেই তো আমার মনে দেয় আজ উঁকি

ফুলের গন্ধে মন মাতোওালা আজ 


তবু তারে খুঁজি আমি নেই মনে লাজ


বিরহের দিন গুলি দেয় মনে ব্যাথা


তুমি কি বুঝবে মোর বেদোনার কথা।


ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী 

স্পর্শ / ত্রিভুবনজিৎ মুখারজী / ১৩.০৫.২০১২ / সকাল ৯.৩০

স্পর্শ
(মাতৃ দিবস উপলক্ষে)

এক বৃষ্টি ভেজা সকালে
ইন্দ্রধনুকে চেয়েছিলাম কত
রং বেরং জীবনকে
রঙিন করার জন্যে
ফাগুনের সন্ধ্যাতে
ফুলকে অনুরোধ করলাম
আকাশে বাতাসে
সুগন্ধ ছডানর জন্যে ।
নিরস জীবনকে
হাঁসি ঠাট্টা মিষ্টি ভরা মুখে
জীবন কে উপভোগ করার জন্নে ।
হাত পেতে চেয়েছিলাম চাঁদ কে
জ্যোৎস্না থেকে অঞ্জলি ভোরে
আমার মায়ের স্নেহের পরশে
অকুণ্ঠ ভালবাসার জন্যে ।
সাগর তীরে অন্যমনস্ক
ভাবে ছুটে ছিলাম
ঢেউকে ছোঁয়ার
মিথ্যা আভিলাসের জন্যে ।
সমুদ্রের গুরু গম্ভীর সঙ্গীতের
তালে মূর্ছিত হলাম
কিছুক্ষনের জন্যে ।
বিভোর হয়ে শুনছিলাম
ঢেউগুলো মাথা ঠুকে
আর্তনাদ করছিল
কিছু বলার জন্যে ।
জানিনা কখন যে
হারিয়ে ছিলাম দিগবলয়ের
প্রান্তে নির্বাক হয়ে
বোধ হয় কারুর জন্যে ।
হঠাৎ চমকে উঠি
কে বলে কপালে হাথ দিয়ে
এইত আমি আছি
তোদেরি কাছে
আমি তোদেরি ‘মা’
বেঁচে আছি তোদেরি জন্যে ।

ত্রিভুবনজিৎ মুখারজী / ১৩.০৫.২০১২ / সকাল ৯.৩০

হৃদয়ের ভালোবাসা / ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জ্জী

হৃদয়ের ভালোবাসা 

সে ফুল নয় মন আমার
যেন দূরে ছুঁডে ফেলনা আমায়
আমি আছি পাসে তোমার
যত ব্যাথা হৃদয়ের আমার
সব ভুলে গেছি এবার
যেন দূরে ফেলনা আমায়
আমি আছি পাসেই তোমার
রজনি পেরিয়ে গেছে
তারারা গেছে চোলে
চাঁদ ওই নিল আকাশে
ঘুমল বলে
তোমারি স্মৃতির টানে
রই রাত জেগে
ছবি দেখি ওই আকাশে
তোমারি তুলির টানে
সাগর পাডে বসে ভাবি
তোমারি কত কথা
তোমারি গাথা যে গায়
মনের উর্মিমালা
বালুকা ভরা তটে
মিস্টি জোছনা
কোমল এ হৃদয়ের
ভালবাসা ভরা।

ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জ্জী

নিঝুম নিশুতি রাতে কে তুমি এলে ? ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী।

নিঝুম নিশুতি রাতে কে তুমি এলে ?

নিঝুম নিশুতি রাতে কে তুমি এলে ?


আগে তো দেখিনি তোমারে, নিশিথে যে এলে !


উদাস নয়েনে দেখি তোমারি পানে 


সত্যি কি তুমি এলে , কেউ যদি জানে !


অবাক হয়েছি শুধু মুখে নেই ভাষা 


বিস্ময়ে চাই তোমারে চোখ দুটো খাসা


হেরিলে মন আমার এ নিশুতি রাতে


অপোলোক নয়নে দেখি, চাই যে তোমাকে পেতে।


একি স্বপ্ন না বাস্তব চাইনা জানতে

তবুও চাই জেন আমি তোমাকে পেতে। 



ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী। 

স্বপ্নের সাত নদীর…. ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী/ ২৬.১১.২০১২ / সকাল৯.৫২


স্বপ্নের সাত নদীর….

তোমার চোখে ঢেউ ভেঙ্গেছি

স্বপ্নের সাত নদীর,

অতল গভ্যরে ভেসেছি আমি

নেই কোন তার নজির ।

স্মৃতিটুকু থাক সেই প্রেমের

রেখেছি তাকে জতনে,

হৃদয়ে রেখেছি দুঃখ জাতনা

নেই কোন ক্ষোভ মনে ।

সব ই কি বৃথা

কেন কর ছলনা,

নিরাট সত্য এই

কেন কিছু বলনা?

ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী/ ২৬.১১.২০১২ / সকাল৯.৫২

আজ রাতে তোমাকে দেখতে লাগে ভাল /ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী /১৯.১২.২০১২


আজ রাতে তোমাকে

আজ রাতে তোমাকে দেখতে লাগে ভাল

মন উডে যায় চোলে যাবে কিনা বল

চাঁদযে তাই ডাকছে ওই হাঁসছে কেন বল

হঁসলে তাই দেখলে ওই লাগে কি যে ভাল

উডবো দুজনে যাব সঙ্গে উডতে লাগে ভ

আজ রাতে তোমাকে দেখতে লাগে ভাল

মন উডে যায় চোলে যাবে কিনা বল......১

বৃস্টি নেই বাদলা নেই আকাশ যে কি ভাল

গাইছে মন উডতে তাই হারিয়ে জাব চল

চাঁদযে তাই ডাকছে ওই হাঁসছে কেন বল...২

যাই চল তাই ভাল সময় গেল চোলে

আজ রাতে তোমাকে দেখতে লাগে ভাল

মন উডে যায় চোলে যাবে কিনা বল......৩

বৃস্টি নেই বাদলা নেই আকাশ যে কি ভাল

গাইছে মন উডতে তাই হারিয়ে যাব চল

আজ রাতে তোমাকে দেখতে লাগে ভাল

ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী /১৯.১২.২০১২

আবারও প্রলাপ ---- অর্পিতা দাসগুপ্ত

আবারও প্রলাপ ----

(১)
আমার যখন সদ্য কিশোরী বেলা
সিনেমা আর যতেক পপর্কন

জড়িয়ে ধরি ইচ্ছে মতো আলো
মনের মধ্যে রঙিন স্বপন আঁকা
আমি তখন মেলছি সবে পাখা !

(২)

দুহাত দিয়ে মোম জোছনা ছুঁয়ে
যৌবন কাল পাড়ি দিতে ব্যস্ত
নিভাঁজ চিঠির বুকে
মনের তখন সবুজ পরিণয় ।

(৩)

আভুমি কুর্নিশ কবিতায় কবিতায়
রঙিন স্বপ্ন ছুঁয়ে
ভরে যায় মন

ইথার তরঙ্গ জুড়ে
অদেখা ভালবাসার টান !

(৪)

পড়ন্ত বেলায়
ঝিম ধরা আলো

মনের কোণেতে
মরচে ধরেছে স্বপনে ।

(৫)

অতলান্ত খাদে দাঁড়িয়ে
সম্পর্কের হিমশীতলতা
আত্মতৃপ্তির আশা নেই কোনো

(৬)

হলুদ হতে থাকা সম্পর্কে ভরে যাচ্ছে
মনের খাতা ,

ছড়িয়ে পড়ছে আশা !

(৭)

বদ্ধ জীবন
হালে পানি পেতে চায়

হাত বাড়ালেই
অন্ধকার জড়িয়ে ধরে !

(৮)

চুলে আমার ধরেছে অনেক পাক
মনে তবুও কিশোর কালীন টান

নদীতে আর নেই তো প্রবল ঢেউ
অজস্র তার আছে কেবল বাঁক ! ----- অর্পিতা
 দাসগুপ্ত — 

চল চল ভেসে যাওয়া খড়কুটো ... ইন্দিরা দাস ।

চল চল
ভেসে যাওয়া খড়কুটো যত কিছু আগলে ছিলাম এতকাল
সব চল গঙ্গাবক্ষে আমারই সে অস্থিভান্ড সাথে
শুধু প্রয়োজন নেই ভাসার প্রচেষ্টার
আমি আজ অগ্নি-বায়ু-জল পরাভূত রবনাতো আর ।
যত ছিল দাগচিহ্ন শরীরে মননে
শ্যাওলা প্রলেপ মাখা সিঁড়ি ক’টা গুনে গুনে নেমে
আমার আমিত্ব হয়ে গেছে বিসর্জন
সব সেরে ফিরে গেছে সেই যারা ছিল প্রিয়জন।

কিছু ছাই আকাশে বাতাসে আমি হয়ে
হয়ত বা কিছু কোনও গভীরে তলিয়ে
অচেনা সে বন্ধু মাছ, ভাবে...ভেবে ছুঁয়ে দেখে অবাক বিস্ময়ে
অথবা নরম পলিমাটি রূপ ধরে
নিশ্চিন্তে শোব আমি নদীমাটি ‘পরে
জলজ উদ্ভিদ সব জড়াবে আমায় স্নেহে
শিকড়বাকরে।

আবার?
আবার জড়াতে চাওয়া!
আবার, আবার প্রাণসুখ !

হয়ত বা তাই
হয়ত বা না থেকেও, থেকে যাওয়া কোনও এক ঠাই খুঁজে পেয়ে
মরণের পরও জীবন
বড় উন্মুখ ।

মঙ্গলবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১২

আঁধার রাতের তারা দেখে বড্ড একা লাগে/ ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী /

আঁধার রাতের তারা দেখে বড্ড একা লাগে  

মনের কথা মনেই রাখি অনেক কাজে লাগে

পূর্নিমার চাঁদ দেখে মনটা যে ভরে যায়

যত দেখি নতুন লাগে মন যে তারে চায় 

স্নিগ্ধ শিতল হিমেল হাওয়া প্রানটা জুডিয়ে যায়

নিস্পাপ শিশু র হাঁসি দেখে মনটা ভরে যায়



আকাশ ভরা তারা দেখে মাথা গুলিয়ে যায়



ভোরের সুর্য্যর সোনালি রং মন ভরিয়ে দেয়



ঢেউগুলো সব আছঢে পঢে দেখতে অবাক লাগে



হৃদয় থেকে লেখ ভাই বড্ড ভালো লাগে। 





            
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী /১০.১২.২০১২/৯.৫০

অবশেষে, দেখা পেলাম তোমার

অবশেষে,

দেখা পেলাম তোমার


কত জনম পরে


নীল সাগরের তীরে


নীলাম্বরি শাড়ি পরে 


এল চুলে 



দাঁড়িয়ে ছিলে 



উদাস চোখে



আমাকে দেখে



সম্বিত ফিরে পেলে

অবশেষে,



তুমি কথা বললে



হেঁসে হেঁসে



বসলে এসে 



আমার পাশে



সাগর পারে



পরন্ত বিকেলে

ঢেউয়ের পরে 



ঢেউ এল যেই



তাকিয়ে দেখি 



নেই তুমি নেই








............সুনিপম মাইতী 

রবিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১২

শীতের জন্য / ঝর্না চ্যাটার্জী

শীতের জন্য আহা উহু
শীত আসে না ঘরে
সকালবেলায় কিচিরমিচির
কমলা রোদ্দুরে।
আয় না শীত, বস না ভাই
এখনও কেন তোর দেখা নাই
শীত হেসে কয়,'যাবো যাবো
তাড়া কিসের, কেন যে ভাবো !
গেলেই তো ফুরিয়ে যাওয়া
ভালই লাগে, এমন চাওয়া...' 




ঝর্না চ্যাটার্জী 

বুধবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১২

তীর বেঁধে যে পাখির বুকে / জয়তি ভট্টাচার্য্য

তীর বেঁধে যে পাখির বুকে,
কন্ঠের গান তার লোহিত-
কণিকা স্রোতে বয়ে যায়,সে
যে গানভোলা পাখি,গান ভুলে
যায়,সুর,তাল,লয় তাকে ছেড়ে
চলে যায় ! তাই বলি,ওহে
তীরন্দাজ,লক্ষ্যভেদে হও তুমি
যতই নিপুন,যে পাখি গান
গেয়ে ঝরাতে জানে প্রেমের
ঝর্ণাধারা,তীক্ষ্ণ কাঁটায় ভরা
সাহারায় ফোটাতে জানে
বসন্তের রঙ্গিন পলাশ,তাকে
তীর হেনোনা !প্রেমের গান
দাও না গাইতে তাকে,যে
জানে বাসতে ভাল,দাওনা
বাসতে তাকে ভাল,মূর্চ্ছিত
আবেগে ! দাও গো জ্বালতে
তাকে সুরের আলো,প্রেমহীন,
নিভে যাওয়া হৃদয় প্রদীপে !





জয়তি ভট্টাচার্য্য

মঙ্গলবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১২

মর্তে বৈকুণ্ঠ প্রেম অকুন্ঠ/ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী /১০.১২.২০১২/৯.৫০

মর্তে বৈকুণ্ঠ 


প্রেম অকুন্ঠ



স্বর্গের আনন্দ



দেয় চিদানন্দ



অমৃতের ভান্ড



মোদের কান্ড



হাঁসির ফোয়ারা 



ললনার চেহারা



চায়ের কাপ



ভালবাসা অ মাপ্ 



চেতনায় ফুর্তি



মনে যত যুক্তি





টক ঝাল মিষ্টি





যে শুধু হাঁসে



সে এখানে আসে।





ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী 





/১০.১২.২০১২/৯.৫০

রবিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১২

কবিতা লেখার নিয়ম/ কবিতার ছন্দ, বাংলা একাডেমী, ১৯৯৭ ।। দ্বিতীয় সংস্করণ: মাওলা ব্রাদার্স থেকে প্রকাশিতব্য, ফেব্রুয়ারী, ২০১১।।


কালের বিবর্তনে, অতিক্রান্ত সময়ের সদ্ধিক্ষণে উৎকৃষ্ট কবিতা নির্মাণের জন্য বিভিন্ন ভাবে পরীক্ষা পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে প্রায় সব ভাষার বিশিষ্ট কবিরা তৈরি করেছেন সুনির্দিষ্ট ও সুবিন্যস্ত নিয়ম। বাংলা কবিতাকেও অন্যান্য ভাষায় রচিত কবিতার মতো বাঁধা হয়েছে ছন্দের শৃঙ্খলে। আর এক পর্যায়ে ভেঙেও দেয়া হয়েছে সেই শৃঙ্খল, কিন্তু ভাঙার সেই প্রক্রিয়াও তৈরী করেছে নতুন ধ্বনি মাধুর্য।
ইট তৈরির কথা দিয়েই শুরু করা যাক। প্রথমেই প্রয়োজন উৎকৃষ্ট মাটির। মাটিকে আবর্জনা মুক্ত করে স্বচ্ছ পানি মিশিয়ে হাত দিয়ে বা মেশিনের সাহায্যে বারবার নেড়ে চেড়ে নরম করার প্রয়োজন পড়ে। তারপর এই মাটিকে ফর্মার মধ্যে ফেলা হয়। ফর্মায় মাটি ঠিক মতো পুরতে পারলেই মাটি আর মাটি থাকে না, ইটে পরিণত হয়। এখানেই শেষ নয়, এই নরম ইটকে শক্ত করার জন্য উচ্চ তাপে দগ্ধ করা হয়। লক্ষণীয় যে, নরম মাটিকে হাত দিয়ে পিটিয়ে বা মেশিনে নেড়ে চেড়েই ইটের রূপ দেয়া যায় না। দরকার একটি ফর্মা যা কিনা মাটিকে সুন্দর একটি ইটের আকার দিতে পারে।
কবিতার প্রসঙ্গেও একই রকম ভাবে বলা যায়, প্রথমেই প্রয়োজন সুন্দর একটা বিষয়। যদিও যে কোনো বিষয়েই উৎকৃষ্ট কবিতা তৈরীর প্রমাণ যথেষ্ট রয়েছে, তথাপি কবিতা লেখার শুরুর দিকে বা তরুণ কবিদের ক্ষেত্রে বিষয়ের গুরুত্ব অবহেলা করা যায় না। বিষয় স্পষ্ট হলে, তাকে ভাষায় রূপ দেয়ার জন্য দরকার শব্দ। বিষয় ও শব্দের একত্র মেলবন্ধনে গঠিত হয় কবিতার ভাব, যা ইট তৈরির পূর্বের ক্ষেত্রটি প্রস্তুত করে। এখন প্রয়োজন ফর্মার। কবিতার ক্ষেত্রে এই ফর্মাই হলো ছন্দ। বিষয় এবং শব্দকে যদি নির্দিষ্ট ছন্দের মধ্যে গ্রন্থিত করা যায় তবে অন্তত দগ্ধ করার আগে কাঁচা ইটের মতো মোটামুটি একটা কবিতা দাঁড়িয়ে যায়। তারপর একে পরিপক্ক করার জন্য প্রয়োজন হয় উপমা, অনুপ্রাস, চিত্রকল্প ইত্যাদির। তাই, প্রথমে অন্তত সাধারণ ভাবে একটা কবিতা দাঁড় করার জন্য ছন্দের প্রয়োজনীয় দিকের প্রতি দৃষ্টি দেয়া যাক।
ছন্দের ভেতরে প্রবেশের আগে জানা দরকার শব্দের শরীর। আবার শব্দের শরীর সম্পর্কে জানতে হলে সর্বাগ্রে জানা দরকার স্বর বা ধ্বনি। স্বর জানার পর শব্দের শরীর অনেকাংশে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
বাংলা স্বর বা ধ্বনিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
১. বদ্ধস্বর
২. মুক্তস্বর
বদ্ধস্বর:
যে সব ধ্বনি উচ্চারণের সময় জিভ মুখের প্রবহমান বাতাসকে আটকে দেয় তাদের বদ্ধস্বর বলা হয়। যেমন : কর, ধর, হায়, পাক, আঁক, ঝাঁক, থাক, দিন, বীন, হই, ইত্যাদি।
মুক্তস্বর:
যে সব ধ্বনি উচ্চারণের সময় মুখের প্রবহমান বাতাস জিভের কোনো বাধা ছাড়াই বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে তাদের মুক্তস্বর বলে। যেমন: হা, না, কা, চা, দি, দা, বা, বু ইত্যাদি।
এবার শব্দের শরীর প্রসঙ্গে আলোচনায় ঢোকার শুরুতেই বেছে নেয়া যাক “করলাম” শব্দটিকে। স্পষ্টত এটি দু’টি স্বর দিয়ে গঠিত। প্রথমটি ‘কর’ এবং দ্বিতীয়টি ‘লাম’। উপরে প্রদত্ত বদ্ধ এবং মুক্ত স্বরের সংজ্ঞানুসারে ‘কর’ এবং ‘লাম’ উভয়েই বদ্ধস্বর। তাহলে বলতে পারি “করলাম” শব্দটির শরীর দু’টি মাত্র বদ্ধস্বর দিয়ে গঠিত।
এবার “সঙ্গোপনে” শব্দটি গ্রহণ করা যায়। এ শব্দটি চারটি স্বর দিয়ে গঠিত সং, গো, প, এবং নে,। এটা স্পষ্ট, সং, বদ্ধস্বর এবং গো, প, ও নে এরা প্রত্যেকটিই মুক্তস্বর। অর্থাৎ সং উচ্চারণের সময় জিভ মুখের প্রবহমান বাতাসকে আটকে দেয় কিন্তু গো, প এবং নে উচ্চারণে জিভ সেটা করতে পারে না, ফলে মুখের ভেতরের বাতাস অনায়াসে বেরিয়ে আসে।
ছন্দের মূল আলোচনায় আসার আগে আরো একটি দিকে লক্ষ্য করা প্রয়োজন। তা হলো “মাত্রা”। স্বর জানার পর মাত্রা সম্পর্কে মোটামুটি জ্ঞান অর্জন সহজতর হবে।
বাংলা কবিতার সব ছন্দেই একটি মুক্তস্বর, সে যে অবস্থানেই থাকুন না কেনো, একটি মাত্র মাত্রা বহন করে।
কিন্তু সমস্যা হলো বদ্ধস্বর নিয়ে। একটি বদ্ধ স্বর কখনো একটি আবার কখনো দু’টি মাত্রা বহন করে। অতএব পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনার মাধ্যমে বুঝে নেয়া দরকার বদ্ধস্বর কোন অবস্থায় একটি এবং কোন অবস্থায় দু’টি মাত্রা বহন করে। অবশ্য তার আগে জানা চাই ছন্দের প্রকার ভেদ।
বাংলা কবিতার ছন্দ প্রধানত তিন প্রকার।
১. স্বরবৃত্ত ছন্দ
২. মাত্রাবৃত্ত ছন্দ
৩. অক্ষরবৃত্ত ছন্দ
স্বরবৃত্ত ছন্দ:
স্বরবৃত্ত ছন্দে বদ্ধস্বর এক মাত্রা বহন করে। কোনো অবস্থাতেই এ ছন্দে বদ্ধস্বর দু’মাত্রা বহন করতে পারে না। তাছাড়া মুক্তস্বরের মাত্রা এক।
কবিতার পঙ্ক্তি দিয়ে বিবেচনা করা যাক।
১. মামার বাড়ি আর যাবো না আর খাবো না মামীর গাল,
কথায় কথায় পড়বে না আর আমার পিঠে অমন তাল।
এখানে প্রতি পঙ্ক্তিতে তিনটি করে পর্ব এবং একটি করে অতিপর্ব আছে। প্রত্যেক পর্বে সমান সংখ্যক মাত্রা আছে এবং লক্ষ্য করলে দেখা যাবে অতিপর্ব পর্ব থেকে কম সংখ্যক মাত্রা ধারণ করেছে। ছন্দ বিন্যাস করলে দেখা যায়,
মামার বাড়ি/ আর যাবো না/ আর খাবো না/ মামীর গাল,
কথায় কথায়/ পড়বে না আর/ আমার পিঠে/ অমন তাল।
স্বরের উপরে লম্বা দাগগুলো মাত্রা চিহ্ন নির্দেশক। মুক্ত স্বরের উপরে শুধু একটি দাগ দিলেও বদ্ধস্বর বোঝাতে চাঁদের মতো চক্র রেখা এঁকে তার উপরে মাত্রা চিহ্ন দেয়া হয়েছে। প্রতি লাইনে আড়াআড়ি দাগ কেটে পর্ব নির্দেশ করা হয়েছে।
পর্ব, অতিপর্ব ও উপপর্ব:
কবিতার প্রতিটি লাইনে সমমাত্রার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশই হলো পর্ব। পঙ্ক্তি শেষের পর্বাংশকে অতিপর্ব বলা হয় যার মাত্রা সংখ্যা পর্বের মাত্রা সংখ্যা থেকে সর্বদাই কম। এ ধরনের পর্বাংশ লাইনের শুরুতে থাকলে আমরা তাকে উপপর্ব বলে চিহ্নিত করবো।
উপরে প্রদত্ত উদাহণের ছন্দ বিন্যাস লক্ষ্য করলে বোঝা যায় যে, প্রতিটি পর্বের মাত্রা সংখ্যা চার, এবং অতিপর্বের মাত্রা সংখ্যা তিন। এই কাব্যাংশে কোনো উপপর্ব নেই।
যদি কবিতাটি সম্পূর্ণ করার প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে প্রতিটি বর্ধিত লাইনেও উপরের লাইনগুলির সমান সংখ্যক পর্ব একই মাত্রায় রাখতে হবে, এবং অতিপর্বেও উপরের লাইন অনুসারে তিন মাত্রা থাকবে। যেমন,
মামার বাড়ি আর যাবো না আর খাবো না মামীর গাল,
কথায় কথায় আমার পিঠে পড়বে না আর অমন তাল।
সকাল বেলা জেগে আমি তাই তো গেলাম মায়ের ঘর,
“ভায়ের বাড়ি যাওগে একা, আমার গায়ে ভীষণ জ্বর।”
তাহলে স্বরবৃত্ত ছন্দের এই কবিতাটির কাঠামো দাঁড়াবে:
৪ + ৪ + ৪ + ৩
২. যখন ওরা অপিশে যায় কিংবা চালায়
তুমুল দোকানদারি
তখন আমি ঢেউ সাজানো নদীর বুকে
দিব্যি জমাই পাড়ি।
(যখন ওরা/শামসুর রাহমান)
মাত্রা বিন্যাস:
যখন ওরা/ আপিশে যায়/ কিংবা চালায়/
তুমুল দোকান/ দারি
তখন আমি/ ঢেউ সাজানো/ নদীর বুকে/
দিব্যি জমাই/ পাড়ি।
কাঠামো:
৪ + ৪ + ৪
৪ + ২
এখানে চার মাত্রার চারটি পর্ব এবং দুই মাত্রার একটি অতিপর্ব দিয়ে পঙ্ক্তি গঠিত হয়েছে। সাথে সাথে লক্ষণীয় যে শামসুর রাহমান একটি পঙ্ক্তি ভেঙে দু’টি লাইন করেছেন। কিন্তু পর্ব সংখ্যা প্রতি দুই দুই লাইনে সমান রেখেছেন। ইচ্ছা করলে প্রথম উদাহরণের কবিতাটি একই ভাবে ভেঙে দেয়া যায়। যেমন,
মামার বাড়ি আর যাবো না
আর খাবো না মামীর গাল,
কথায় কথায় পড়বে না আর
আমার পিঠে অমন তাল।
এই নতুন আঙ্গিকে কবিতাটির কাঠামো দাঁড়াবে:
৪ + ৪ +
৪ + ৩
প্রতি দুই লাইনে পর্ব সংখ্যা সমান রাখা হয়েছে।
৩. মেঘনা নদীর শান্ত মেয়ে তিতাসে
মেঘের মতো পাল উড়িয়ে কী ভাসে!
(ভর দুপুরে/আল মাহমুদ)
মাত্রা বিন্যাস:
মেঘনা নদীর/ শান্ত মেয়ে/ তিতাসে
মেঘের মতো/ পাল উড়িয়ে/ কী ভাসে !
কবিতাটির কাঠামো:
৪ + ৪ + ৩
অর্থাৎ এই কবিতায় কবি প্রতি লাইনে চার মাত্রার দু’টি পর্ব এবং তিন মাত্রার একটি অতিপর্ব রেখেছেন।
উপরের উদাহরণগুলি থেকে দেখা যায় সব ক্ষেত্রেই প্রতিটি পর্বে চারমাত্রা এসেছে। তাহলে কি বলা যায়, স্বরবৃত্ত ছন্দে প্রতিটি পর্বে মাত্রা সংখ্যা চারে সীমাবদ্ধ থাকে? তাৎক্ষণিক উত্তর হ্যাঁ-সূচক।
তবে স্বরবৃত্ত ছন্দে কবিতার পর্বকে আরো এক প্রকার মাত্রার সমন্বয়ে গঠন করা যায়। সেটি হলো ‘সাত মাত্রার মন্দাক্রান্তা ছন্দ’ বা সংক্ষেপে মন্তাক্রান্তা ছন্দ। স্বরবৃত্ত ও মাত্রাবৃত্ত উভয় ক্ষেত্রেই সংস্কৃত ধাচের এই বুনন সম্ভব। নাম থেকেই বোঝা যায় পর্বে মাত্রা সংখ্যা থাকবে সাতটি।
উদাহরণ:
৪. বাবুদের তাল পুকুরে
হাবুদের ডাল কুকুরে
সে কি বাস করলে তাড়া
বলি থাম একটু দাঁড়া।
(লিচু চোর/ কাজী নজরুল ইসলাম)
এখানে প্রতিটি লাইন সাত মাত্রার একটি মাত্র পর্ব দিয়ে গঠিত। আবার অন্যভাবে বলা যায় যে, প্রথমে তিন এবং পরে চার মাত্রার দু’টি পর্ব দিয়ে লাইন গঠিত হয়েছে।
একই ছন্দে রচিত অন্য একটি কবিতার কথা বিবেচনা করা যায়,
৫. আগুনের পরশ মণি/ ছোঁয়াও পাণে,
এ জীবন পূণ্য করো/ দহন-দানে।
আমার এই দেহখানি/ তুলে ধরো,
তোমার ওই দেবালয়ের/ প্রদীপ করো
নিশিদিন আলোক-শিখা/ জ্বলুক গানে।
(পরশমণি/ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
লক্ষণীয় প্রতিটি লাইনের প্রথমে সাত মাত্রার একটি পর্ব ও শেষে চার মাত্রার একটি অতিপর্ব এসেছে।
এই বুননে কবিতাটির কাঠামো দাঁড়ায় :
৭ + ৪
৭ + ৪
তবে কেউ হয়তো বলতে পারেন, রবীন্দ্রনাথ এই কবিতায় তিন মাত্রার উপপর্ব রেখে চার মাত্রার পর্ব গঠন করেছেন। সেক্ষেত্রে মাত্রা বিন্যাস হবে নিন্মরূপ:
আগুনের পরশ মণি/ ছোঁয়াও পাণে,/
এ জীবন পূণ্য করো/ দহন-দানে।/
আমার এই দেহখানি/ তুলে ধরো,/
তোমার ওই দেবালয়ের/ প্রদীপ করো/
নিশিদিন আলোক-শিখা/ জ্বলুক গানে।/
কাঠামো:
৩ + ৪ + ৪
৩ + ৪ +৪
লক্ষণীয়, যে ভাবেই পড়া হোক না কেনো, কবিতার চাল প্রথম পর্বকে সাত মাত্রায় টেনে নিয়ে যায়।
মাত্রাবৃত্ত ছন্দ:
মাত্রাবৃত্তের ক্রিয়া কলাপ অনেকটা স্বরবৃত্তের মতো হলেও এই ছন্দে বদ্ধস্বর দু’মাত্রা বহন করে। কোনো অবস্থাতেই বদ্ধস্বর একমাত্রা বহন করতে পারে না। কিন্তু স্বরবৃত্তের মতোই মুক্তস্বরের মাত্রা এক।
কবিতার পঙ্ক্তি দিয়ে বিবেচনা করা যায়।
১. মামার বাড়িতে/ যাবো না গো আমি/ খাবো না গো আর/ মামীর গাল,
কথায় কথায়/ পড়বে না আর/ পিঠের উপরে/ অমন তাল।
এখানে স্বরবৃত্ত ছন্দের প্রথম উদাহরণটি একটু ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি লাইনে এবার ছয় মাত্রার তিনটি করে পর্ব এবং পাঁচ মাত্রার একটি করে অতিপর্ব এসেছে।
মাত্রা বিন্যাস:
মামার বাড়িতে/ যাবো না গো আমি/ খাবো না গো আর/ মামীর গাল,
কথায় কথায়/ পড়বে না আর/ পিঠের উপরে/ অমন তাল।
অতএব কবিতাটির কাঠামো দাঁড়ায় :
৬ + ৬ + ৬ + ৫
অতিপর্বের মাত্রা সংখ্যা কমিয়ে আনা যায়, তবে কিছুতেই তা পর্বের মাত্রা সংখ্যার সমান হবে না। অতিপর্বের মাত্রা সংখ্যা যদি পর্বের মাত্রা সংখ্যার সমান হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে অতিপর্ব একটি পূর্ণ পর্বের রূপ নেবে। এখানে বলে রাখা ভালো, অতিপর্ব ছাড়াও শুধু পর্ব দিয়ে কবিতার কাঠামো তৈরি করা যায়। মাত্রা বিন্যাস সহ আরো কিছু কবিতার উদাহরণ:
ছয় মাত্রার পর্ব এবং চার মাত্রার অতিপর্ব:
২. কবি বন্ধুরা/ হতাশ হইয়া/ মোর লেখা পড়ে/ শ্বাস ফেলে
বলে কেজো ক্রমে/ হচ্ছে অকেজো/ পলি টিক্সের/ পাশ ঠেলে।
(আমার কৈফিয়ৎ/ কাজী নজরুল ইসলাম)
কবিতাটির কাঠামো:
৬ + ৬ + ৬ + ৪
ছয় মাত্রার পর্ব এবং তিন মাত্রার অতিপর্ব:
৩. সই পাতালো কি/ শরতে আজিকে/ স্নিগ্ধ আকাশ/ ধরণী ?
নীলিমা বহিয়া/ সওগাত নিয়া/ নমিছে মেঘের/ তরণী !
(রাখী বন্ধন/ কাজী নজরুল ইসলাম)
কাঠামো:
৬ + ৬ + ৬ + ৩
ছয় মাত্রার পর্ব এবং দুই মাত্রার অতিপর্ব:
৪ক. এ জগতে হায়/ সেই বেশি চায়/ আছে যার ভূরি/ ভূরি
রাজার হস্ত/ করে সমস্ত/ কাঙালের ধন/ চুরি।
(দুই বিঘে জমি/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
খ. দুর্গম গিরি/ কান্তার মরু/ দুস্তর পারো/ বার
লঙ্ঘিতে হবে/ রাত্রি নিশিতে/ যাত্রীরা হুশি/ য়ার।
(কাণ্ডারী হুশিয়ার/ কাজী নজরুল ইসলাম)
কাঠামো:
৬ + ৬ + ৬ + ২
পাঁচ মাত্রার পর্ব কিন্তু অতিপর্ব নেই:
৫. তোমারে পাছে/ সহজে বুঝি/ তাই কি এতো/ লীলার ছল/
বাহিরে যবে/ হাসির ছটা/ ভিতরে থাকে/ আখির জল।/
(ছল/ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
কাঠামো:
৫ + ৫ + ৫ + ৫
পাঁচ মাত্রার পর্ব এবং দু’মাত্রার অতিপর্ব:
৬ক. এ-ভূজমাঝে/ হাজার রূপ/ বতি
আচম্বিতে/ প্রাসাদ হারা/ য়েছে;
অমরা হতে/ দেবীরা সুধা/ এনে,
গরল নিয়ে/ নরকে চলে/ গেছে।
(নিরুক্তি/ সুধীন্দ্রনাথ দত্ত)
কাঠামো:
৫ + ৫ + ২
খ. হৃদয়ে তার/ অন্ধকার/ পৃথিবী নিঝ/ ঝুম
বিফল তার/ সকল বৈ/ভব
ভাঙে না তার/ বসন্তের/ অন্তহীন/ ঘুম
জাগে না কল রব/
কপালে যার/ আঁকেনি কেউ/ প্রেমের কুম/ কুম
ব্যর্থ তার/ সব।
(মধ্য ফাল্গুনে/নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী)
কাঠামো:
৫ + ৫ + ৫ + ২
৫ + ৫ + ২
গ. তখনো ছিলো/ অন্ধকার/ তখনো ছিলো/ বেলা
হৃদয় পুরে/ জটিলতার/ চলিতেছিলো/ খেলা
ডুবিয়াছিলো/ নদীর ধার/ আকাশে আধো/ লীন
সুষমাময়ী/ চন্দ্রমার/ নয়ান ক্ষমা/ হীন
(হৃদয়পুর/শক্তি চট্টোপাধ্যায়)
কাঠামো:
৫ + ৫ + ৫ + ২
আট মাত্রার পর্ব এবং ছয় মাত্রার অতিপর্ব:
৭. শেফালি কহিল আমি/ ঝরিলাম তারা !
তারা কহে আমারো তো/ হল কাজ সারা।
(এক পরিণাম/ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
কাঠামো:
৮ + ৬
এখানে বলে রাখা ভালো এ কাঠামোর কবিতাকে আট-ছয় মাত্রার কবিতাও বলা যেতে পারে। চৌদ্দ মাত্রার সনেট সৃষ্টির কাজে এ ধরনের ছন্দ বিন্যাস বিশেষ ব্যবস্থায় কাজে লাগানো যায়। তাছাড়া অক্ষরবৃত্ত ছন্দে এর উপস্থিতি অনেক বেশি।
মাত্রাবৃত্তে সাত মাত্রার পর্বের ব্যবহার বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অনেকটা স্বরবৃত্তের মতোই তবে মাত্রাবৃত্তে অতিপর্ব রাখাটা বেশ সহজতর। প্রথমে অতিপর্বহীন কয়েকটি কবিতার উদাহরণের দিকে তাকানো যাক।
সাত মাত্রার দুই পর্ব বিশিষ্ট কবিতা:
৮. তোমার মুখ আঁকা/ একটি দস্তায়/
লুটিয়ে দিতে পারি/ পিতার তরবারি/
বাগান জোত জমি/ সহজে সস্তায়/
তোমার মুখ আঁকা/ একটি দস্তায়;/
(শোণিতে সৌরভ/ আল মাহমুদ)
কাঠামো:
৭ + ৭
সাত মাত্রার তিন পর্ব বিশিষ্ট কবিতা:
৮. উগ্র ঢাল, তার/ তীক্ষè শরমুখ/ রঙিন, কোপনীয়/
রেখেছে সঞ্চিত/ যা-কিছু মায়াময়,/ মধুর, গোপনীয়
(সুন্দর জাহাজ/অনু: বুদ্ধদেব বসু)
কাঠামো:
৭ + ৭ + ৭
সাত মাত্রার চার পর্ব বিশিষ্ট কবিতা:
৯.
অন্ধ রেল গাড়ি/ বধির রেলগাড়ি/ অন্ধ রেল বেয়ে/ চলছে দ্রুত বেগে/
দু-চোখে মরা ঘুম/ আকাশে মরা মেঘ/ সঙ্গে মরা চাঁদ/ অন্ধ আছি জেগে/
অন্ধ বগিগুলো/ ক্লান্ত হয়ে গেছে/ এগিয়ে চলে তবু/ অন্ধ প্রতিযোগী/
চলছে ট্রাগ বেয়ে/ জানে না কোথা যাবে/ নষ্ট রেলগাড়ি/ অন্ধদূর বোগী।/
(অন্ধ রেলগাড়ি / হুমায়ুন আজাদ)
কাঠামো:
৭ + ৭ + ৭ + ৭
সাত মাত্রার মাত্রাবৃত্তে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রার অতিপর্ব ব্যবহারের নমুনা:
১০. ফসল অন্যের,/ তোমার শুধু
অন্য কোনো দূর/ অরণ্যের
পন্থহীনতায়/ স্বপ্নে কেঁপে ওঠা/
কোন অসম্ভব/ আকাক্সক্ষায়।
(অসম্ভবের গান/বুদ্ধদেব বসু)
কাঠামো:
৭ + ৫
৭ + ৫
৭ + ৭
৭ + ৬
এই চার লাইনে অতিপর্বে কোথাও পাঁচ কোথাও ছয় মাত্রা রাখা হয়েছে। কিন্তু তৃতীয় লাইনে কোনো অতিপর্ব নেই। ফলে, তৃতীয় ও চতুর্থ লাইন মিলে একটি পঙ্ক্তি তৈরী করেছে।
১১. নিমেষে ভুলি সাধ/ অতল মোহে।
মোহিনী ও-মুখের/ মিথ্যা বুলি
সত্য সার ভাবি,/ এবং আমি
ধারি না ধার কোনো/ মহোদয়ের।
(কবর খোড়ার গান/শামসুর রাহমান)
কাঠামো:
৭ + ৫
৭ + ৫
এই কবিতায় পাঁচ মাত্রার অতিপর্ব রাখা হয়েছে।
১২. যেখানে লেজবস/ প্রণয় ঝর্ণায়/ উলঙ্গ
শান্ত বয়ে যায়/ গভীর শেষমেশ/ সমুদ্রে
ভাসিয়ে প্রান্তর/ যায় সে আঁকাবাঁকা/ খলখল
ঝঞ্ঝা গোপনীয়,/ দেবতা ভূমিতলে/ অসংখ্য
যেখানে লেজবস/ প্রণয় ঝর্ণায়/ উলঙ্গ।
(লেসবস/অনু: হাসানআল আব্দুল্লাহ)
কাঠামো:
৭ + ৭ + ৪
৭ + ৭ + ৪
বোদলেয়ার রচিত এই কবিতাটি অনুবাদে অতিপর্বে চার মাত্রা রাখা হয়েছে। দু’টি করে পর্ব দিয়ে কবিতার লাইন গঠিত।
অক্ষরবৃত্ত ছন্দ:
অক্ষরবৃত্ত ছন্দে বদ্ধস্বর কখনো একমাত্রা এবং কখনো দুই মাত্রা বহন করে। অর্থাৎ পর্বে মাত্রা গণনা রীতি কোথাও স্বরবৃত্তের আবার কোথাও মাত্রাবৃত্তের মতন। বদ্ধস্বর যদি শব্দের প্রথম বা মাঝে থাকে তবে তা এক মাত্রা কিন্তু শব্দের শেষে অবস্থান করলে দুই মাত্রা বহন করে। উদাহরণ স্বরূপ “সূর্যশোক” শব্দটি বিবেচনা করা যেতে পারে।
স্বর বিন্যাসে শব্দটি নতুন করে লিখে আমরা পাই:
সূর + য + শোক
প্রথম এবং শেষেরটি বদ্ধস্বর, কিন্তু মাঝেরটি মুক্তস্বর। “সূর” বদ্ধস্বরটি শব্দের প্রথমে থাকায় এর মাত্রা সংখ্যা এক। অন্যদিকে “শোক” বদ্ধস্বরটি শব্দের শেষে থাকায় এর মাত্রা সংখ্যা দুই। আর মুক্ত স্বর “য”-এর মাত্রা সংখ্যা সর্বদাই এক। অতএব অক্ষরবৃত্তের এই নিয়মে “সূর্যশোক” এর মাত্রা সংখ্যা চার।
মাত্রা বিন্যাস:
সূর্যশোক
সূর + য + শোক
= ১ + ১ + ২
= ৪
মাত্রা বিন্যাস সহ অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচিত কয়েকটি কবিতা।
পর্বে আট মাত্রা এবং অতিপর্বে ছয়মাত্রা আছে এমন একটি কবিতা:
১. হাজার বছর ধরে/ আমি পথ হাঁটিতেছি/ পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে/ নিশীথের অন্ধকারে/ মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি ;/ বিম্বিসার অশোকের/ ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি;/ আরো দূর অন্ধকারে/ বিদর্ভ নগরে;
(বনলতা সেন/ জীবনানন্দ দাশ)
কাঠামো:
৮ + ৮ + ৬
এখানে “সংহল” “সমুদ্র” “অন্ধকার” এবং “বিম্বিসার” শব্দ চারটি লক্ষ্য করা যায়। প্রথম শব্দ দু’টি তিনটি করে এবং শেষের শব্দ দু’টি চারটি করে মাত্রা বহন করছে।
এদের স্বর ও মাত্রা বিন্যাস নিম্নরূপ:
সিংহল
সিং + হল
= ১ + ২
= ৩
সমুদ্র
স + মুদ + রো
= ১ + ১ + ২
= ৩
অন্ধকার
অন্ + ধো + কার
= ১ + ১ + ২
= ৪
বিম্বিসার
বিম + বি + সার
= ১ + ১ + ২
= ৪
দেখা যাচ্ছে, শব্দের প্রথমে এবং মাঝে অবস্থিত বদ্ধস্বরগুলি এক মাত্রা কিন্তু শেষে অবস্থিত বদ্ধস্বরগুলি দু’মাত্রা বহন করছে।
অক্ষরবৃত্ত ছন্দে মাত্রা গণনার এই রীতি কবি ইচ্ছা করলে বদলে দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে সব বদ্ধস্বরকে দিতে হবে দু’মাত্রা বহন করার ক্ষমতা। তবে, সতর্ক থাকা প্রয়োজন, যাতে পুরো কবিতায় একই নিয়ম প্রতিফলিত হয়। এক কবিতায় দু’রকম নিয়ম অনুসরণ করলে একদিকে পাঠক যেমন বিভ্রান্ত হবেন, অন্যদিকে কবিরও ছন্দে অদক্ষ হাতের প্রমাণ থেকে যাবে।
সকল বদ্ধস্বরকে দু’মাত্রা বহন করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে এমন একটি কবিতা:
২. বহুদিন থেকে আমি/ লিখছি কবিতা
বহুদিন থেকে আমি/ লিখিনা কবিতা
(বৈশাখে রচিত পংক্তিমালা/ সৈয়দ শামসুল হক)
কাঠামো:
৮ + ৬
এখানে “লিখছি” শব্দটির “লিখ” বদ্ধস্বরটি শব্দের প্রথমে বসেও দুই মাত্রা বহন করছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি ব্যতিক্রম। কিন্তু আগেই বলা হয়েছে, এটা কবির ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।
শব্দের প্রথম ও মাঝের বদ্ধস্বরকে একমাত্রা দেয়া হয়েছে এমন আরো দু’টি কবিতা:
৩. …রহে বলী; রাজদণ্ড/ যত খণ্ড হয়
তত তার দুর্বলতা,/ তত তার ক্ষয়।
একা সকলের উর্ধ্বে/ মস্তক আপন
যদি না রাখিতে রাজা,/ যদি বহুজন…
(গন্ধারীর আবেদন/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
কাঠামো:
৮+৬
৪. হে দারিদ্র্য তুমি মোরে/ করেছ মহান
তুমি মোরে দানিয়েছ/ খ্রীস্টের সম্মান।
কণ্টক-মুকুট শোভ!/ ─দিয়াছ, তাপস
অসঙ্কোচ প্রকাশের/ দুরন্ত সাহস:
(দারিদ্র / কাজী নজরুল ইসলাম)
কাঠামো:
৮ + ৬
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, এ দু’টি কবিতাই চোদ্দ মাত্রার সনেট নির্মাণের কাজে অবদান রাখতে পারে। সনেট অধ্যায়ে এ নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে।
এবার অন্য একটি কবিতা:
৫. ক্রূর ঝড় থেমে গেছে,/ এখন আকাশ বড়ো নীল/
গাছের সবুজ পাতা/ কেঁপে কেঁপে অত্যন্ত সুষম/
বিন্যাসে আবার স্থির/
(বাজপাখি / শামসুর রাহমান)
এই কবিতাটির প্রতিটি লাইনের প্রথম পর্ব আট মাত্রা এবং দ্বিতীয় পর্ব দশ মাত্রা বহন করছে। যদি পর্বের আলোচনার আলোকে এটা বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে বলা যায় শেষের দশ মাত্রার পর্বটি অতিপর্ব। কিন্তু তা কি করে হয়? অতিপর্বের মাত্রা তো পর্বের মাত্রা সংখ্যা থেকে কম হওয়ার কথা। তবে কি এক্ষেত্রে মন্তব্য করা যাবে যে কবিতাটি লেখা হয়েছে ৮+৮+২ কাঠামোতে অর্থাৎ আট মাত্রার দু’টি পর্ব এবং দুই মাত্রার অতিপর্ব রেখে। কিন্তু তাও ঠিক নয়। কারণ, প্রথম লাইনের “নীল” শব্দটি দুইমাত্রা বহন করায় এটাকে দুই মাত্রার অতিপর্ব ধরলেও ধরা যায়। কিন্তু সমস্যা হয় দ্বিতীয় লাইনের “সুষম” শব্দটিকে নিয়ে। দুই মাত্রার অতিপর্ব বের করতে হলে “সুষম” থেকে “সু” স্বরটিকে পূর্বের পর্বের সঙ্গে যুক্ত করতে হয়, এবং “ষম” কে অতিপর্ব ধরতে হয়। অর্থাৎ তিন অক্ষরের এই শব্দটিকে ভেঙে দিয়ে কবিতার পর্ব বিন্যাস করতে হয়। এক্ষেত্রে যা যুক্তিপূর্ণ নয়। তাই এই কবিতাটিকে “আট-দশ” মাত্রার বা “আট-দশ” চালের কবিতা বলা প্রয়োজন, যা অক্ষরবৃত্তে কবিতা লেখার অন্য একটি নিয়ম হিসেবে বেশ কয়েক যুগ ধরে বাংলা কবিতায় প্রচলিত এবং এটাই হচ্ছে আঠারো মাত্রার সনেট গঠনের নির্ভরযোগ্য কাঠামো।
অক্ষরবৃত্ত ছন্দের আলোচনায় অগ্রসর হলে মনে হতে পারে যে এর অঙ্গন অনেক প্রশস্ত এবং কিছুটা খোলামেলা।
আসলেই তাই। বাংলা কবিতার ত্রিশের দশকের গুরুত্বপূর্ণ কবিরা অক্ষরবৃত্তের উপর প্রচুর কাজ করেছেন এবং একে একটা মুক্ত রূপ দিয়েছেন; যা অক্ষরবৃত্ত ছন্দের মাত্রা গণনার নিয়মকে ঠিক রেখে পর্বে মাত্রা বাড়িয়ে কমিয়ে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পর্ব ভেঙেচুরে ছন্দকে শাসন করে সজোরে আছাড় মেরে কবিতাকে সোজা করে দাঁড় করা হয়েছে। উঁকি দিয়েছে অক্ষরবৃত্তের নতুন ধারা। অক্ষরবৃত্তের এই নতুন রূপকে অনেকে “মুক্ত ছন্দ” বলেন। কিন্তু আমরা একে “নঞ ছন্দ” বলবো। নাই অর্থে নঞ। অর্থাৎ সাধারণ ভাবে দেখলে কবিতায় ছন্দ নেই, কিন্তু বিশেষভাবে বিশ্লেষণ করলে ছন্দের দৃঢ় বন্ধন দৃষ্টিগোচর হয়। নঞ ছন্দের উদাহরণ লক্ষ্য করা যাক:
১. আকাশ জানে না,/
প্রকাশ রাস্তায় একী/ কুড়ানো স্বাক্ষর,/
নক্ষত্র সমাজ খোঁজে/ শেষ পরিচয়/
ওরা পরস্পর/
নূতন বিরহে পায়/ অভিন্ন বিচ্ছেদে দীপ্তিময়/
উদ্ভাসিত দূরে দূরে/ অনন্ত বাসর।/
(যুগ্মদূর/ অমিয় চক্রবর্তী)
কাঠামো:

৮ + ৬
৮ + ৬

৮ + ১০
৮ + ৬
২. সজীব সকালে চোখ মেলি,/ প্রতিদিনের পৃথিবী/
আমাকে জানায় অভি/ বাদন। টাটকা রোদ
পাখিদের উড়াউড়ি,/ গাছের পাতার দুলুনি,/ বেলফুলের গন্ধ/
ডেকে আনে আমার বালকবেলাকে/
(একটি দুপুরের উপকথা / শামসুর রাহমান)
কাঠামো:
১০ + ৮
৮ + ৮
৮ + ৮ + ৮
১৪
৩. যখন তাদের দেখি/ হঠাৎ আগুন লাগে/ চাষীদের মেয়েদের/
বিব্রত আঁচলে;/ সমস্ত শহর জুড়ে/ শুরু হয় খুন, লুঠ,/ সম্মিলিত অবাধ ধর্ষণ,
ভেঙে পড়ে শিল্পকলা,/ গদ্যপদ্য;/ দাউদাউ পোড়ে/ পৃষ্ঠা সমস্ত গ্রন্থের;
ডাল থেকে/ গোঙিয়ে লুটিয়ে পড়ে/ ডানা ভাঙা নিঃসঙ্গ দোয়েল
আর্তনাদ করে বাঁশি/ যখন ওঠেন মঞ্চে/ রাজনীতিবিদগণ।
(রাজনীতিবিদগণ/ হুমায়ুন আজাদ)
কাঠামো:
৮ + ৮ + ৮
৬ + ৮ + ৮ + ১০
১০ + ৪ + ৬ + ৮
৪ + ৮ + ১০
৮ + ৮ + ৮
এইসব উদাহরণ থেকে এটা স্পষ্ট যে পর্বে মাত্রা সংখ্যা অসমান; কিন্তু জোড় মাত্রার পর্ব গঠিত হয়েছে।
মুক্ত বা নঞ ছন্দে কবিতা লেখার সহজ উপায়
এখন প্রশ্ন হলো মুক্ত বা নঞ ছন্দে কবিতা লেখার নিয়ম কি? এ ছন্দে লেখা কবিতাকে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে যা ধরা পড়বে তা হলো:
১. অক্ষরবৃত্ত ছন্দের মাত্রা গণনার নিয়ম ঠিক থাকবে।
২. প্রতিটি পর্বে জোড়সংখ্যক মাত্রা থাকতে হবে।
৩. পর্বে মাত্রা সংখ্যা দুই থেকে শুরু করে চার, ছয়, আট, দশ যে কোনো সংখ্যক রাখা যেতে পারে।
মুক্ত বা নঞ ছন্দে কবিতা লেখার সময় যদি একটা বিশেষ নীতি মেনে চলা হয় তবে উপরের তিনটি শর্তই একসঙ্গে পূরণ করা সম্ভব। নীতিটি হলো:
জোড়ে জোড়, বিজোড়ে বিজোড়।
তার মানে জোড় মাত্রার শব্দের পাশাপাশি জোড় মাত্রার শব্দ এবং বিজোড় মাত্রার শব্দের পাশাপাশি বিজোড় মাত্রার শব্দ বসানো। এরপর ইচ্ছা মতো লাইন তৈরি করা হলেও ছন্দের কোনো বিচ্চুতি ঘটে না।
——————————————————–
কবিতার ছন্দ, বাংলা একাডেমী, ১৯৯৭ ।। দ্বিতীয় সংস্করণ: মাওলা ব্রাদার্স থেকে প্রকাশিতব্য, ফেব্রুয়ারী, ২০১১।। এই অধ্যায়টি ‘মুক্তমনা’র বন্ধুদের জন্যে তুলে দিলাম। স্বরের উপর দাগ দেওয়ার কথা বলা আছে কিন্তু কম্পিউটারে তা সম্ভব হলো না। তারপরেও আমার মনে হয় মাত্রা বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয়।
      কবিতা লেখার নিয়ম কানুন জেনে নিন মূল লেখক  হাসানআল আব্দুল্লাহ আমি সংগ্রহ করেছি মাত্র ।

লিচু চোর / কাজী নজরুল ইসলাম


লিচু চোর

কাজী নজরুল ইসলাম


বাবুদের তাল-পুকুরে

হাবুদের ডাল-কুকুরে

সে কি বাস্ করলে তাড়া,


বলি থাম্ একটু দাঁড়া!


পুকুরের ঐ কাছে না


লিচুর এক গাছ আছে না


হোথা না আস্তে গিয়ে


য়্যাব্বড় কাস্তে নিয়ে


গাছে গ্যে’ যেই- চ’ড়েছি,


ছোট এক ডাল ধ’রেছি,


ও বাবা মড়াত্ ক’রে


প’ড়েছি সড়াত্ জোরে৷


প’ড়েছি সড়াত্ জোরে৷


পড়বি পড় মালীর ঘাড়েই,


সে ছিল গাছের অ অড়েই,


ব্যাটা ভাই বড় নচ্ছার,


ধুমাধুম গোটা দুচ্চার


দিলে খুব কিল ও ঘুসি


একদম জোর্ সে ঠুসি!

আমিও বাগিয়ে থাপর


দে হাওয়া চাপিয়ে কাপড়


লাফিয়ে ডিঙ্ নু দেয়াল,

দেখি এক ভিট্ রে শেয়াল!


আরে ধ্যাত্ শেয়াল কোথা?


ভুলোটা দাঁড়িয়ে হোথা!


দেখে যেই আঁতকে ওঠা


কুকুরও জুড লে ছোটা!


আমি কই কম্ম কাবার


কুকুরেই কর্ বে সাবাড়!


‘বাবা গো মা গো’ বলে’


পাঁচিলের ফোঁকল গলে


ঢুকি গ্যে’ বোস্ দের ঘরে

,
যেন প্রাণ আসলো ধড়ে!


যাব ফের? কান মলি ভা


চুরিতে আর যদি যাই!


তবে মোর নামই মিছা!


কুকুরের চাম্ ড়া খিঁচা


সে কি ভাই যায়রে ভুলা-


মালীর ঐ পিট্ নী গুলো-


কি বলিস্? ফের হপ্তা?


তৌবা-নাক খপতা!

বৃহস্পতিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১২

প্রিয়, তোমায় ছাড়া ছিলাম আমি অপূর্ণ !!অরুণিমা


ন্ধকারের উদাসী রাত কাটলো এই আশায় 
      ভোরের সূর্য ভাসাবে আবার আলোয় আমায় 
বলছে বাতাস ভরবে প্রাণ কুহুর মিষ্টি সুরে 
       আজ এই প্রেমিক মন ডাকছে যেন কারে ?

মনবাগানে আজ ফুটেছে কত যে ফুল 
     লেগেছে হৃদয়ে আজ ভালবাসার দোল ,
  হারিয়েছে আজ কত যে টুটে যাওয়া স্মৃতি 
     তোমার ছুঁয়ে এলো আলো সুখ প্রীতি !!

প্রদীপ আজ জ্বেলেছি মন দুয়ারে দেখো 
    তোমারই যে আমি একথাটি মনে রেখো --
আর বলোনা কিছু বুঝেছি প্রিয় আমি 
    চোখের ভাষা যে বলে দিল অনেক কিছু 
এতদিনে স্বপ্ন আমার হলো যে পূর্ণ 
  প্রিয় ,তোমায় ছাড়া ছিলাম আমি অপূর্ণ !!

                                                              অরুণিমা চক্রবর্ত্তী

বুধবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১২

অকাল বোধন / জয়ন্তি ভট্টাচার্য্য



অকাল বোধন...........

সকালের মিঠে রোদে,দুপুরেরর আগুনে,
হাতছানি দিয়ে ডাকে গাছ থেকে ঝুলে থাকা
কাঁচামিঠে আমগুলো,মন ছিচকাঁদুনে,
দায় হয়ে ওঠে যেরে সংসারে মন রাখা !!
দোল খায় হাওয়াতে,মিটিমিটি চেয়ে থাকে,
বলে,আয় কাছে আয়,ভালবেসে চেখে দেখ,
দূরে সরে থাকিসনে,দিস নেরে যাকে তাকে,
ছাল তলে,নুন মেখে,দাঁত দিয়ে কেটে চাখ !!

জয়ন্তি  ভট্টাচার্য্য 

মঙ্গলবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১২

সুখের অভিঘাতে -জে এম আজাদ

সুখের অভিঘাতে 
-জে এম আজাদ


রাখতে যদি পারতাম তোমায়

মন মহুয়ায়, বুকের ধরণীতে,




দেখতে পেতে চাঁদের সাথে ঋষির বসবাসে



কেমনেতে জোস্না ঝড়ে, ক্লান্ত গোধুলীতে ।



রাখতে যদি পারতাম তোমায়



উত্তুঙ্গ জল বুকের বন্দরে,




দেখতে পেতে বুনো বাতাস, আছড়ে পড়ে মুখে





কাঁপায় কেমন করে ।





রাখতে যদি পারতাম তোমায়



বিমুগ্ধ মন, বিভোর আঁখি পাতে



দেখতে পেতে কেমনে এই মনমরুতে



সবুজ ফলে, সুখের অভিঘাতে ।



রাখতে যদি পারতাম তোমায়



বিমূর্ত বোধ, মনের জোসনাতে



দেখতে পেতে প্রেমের নহর বয়ে গিয়ে 



কেমনে ভাসায়, সুখের কালিন্দিতে