সোমবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১২

চির সঙ্গিনী


চির সঙ্গিনী ...

ফাগুন এসেছে আজ
রং এর ডালি মেলে
রং আবীরেতে মাতওালা
 সকলের মন ভুলে
প্রীতির পাপডি মেলে
বিশ্বতে চলে বন্ধুত্যের
ডানা  মেলে মন উডে চলে
দিগ দিগন্ত থেকে আসা
কত অভিনন্দন আমার
বুক আলোঢ়ন করে
যেন উজাড করে
দিয়েছে কেউ আপনারে
এক হৃদয় আরেক কে বোঝে
বোঝে যানে সে কে?
সেই বন্ধু যাকে দেখিনি
সে যেন অতি আপনার
বোঝায় সে আমার কে !
এ যেন এক অদম্য অনুভূতি
স্নেহ ভালোবাসা পরশের অনুভূতি
সব একাকার হোয়ে যায়
মণে হয় সে আমার চির সঙ্গিনী
তারে আমি চিনি সে আমার চির সঙ্গিনী !!!!!

****ত্রিভুবনজিৎ মুখারজ্জী ****

আমাকেও দিও কিছু


আমাকেও দিও কিছু 

সব কিছু দিয়ে যাব শেষে
যত রঙ , ভালবাসা জমেছিল বুকে
সুগন্ধী মশলার মত জমা ছিল ,
রাখা ছিল মুখচাপা দিয়্‌
নিয়ে যেও একে একে

এখনো মুখঢাকা পড়ে আছি
খাটের ওপর
চৈত্রের পাতারা উড়ে উড়ে আসে
মেঘ জমে ধূসর আকাশে
এখনো নরম চোখ,
দু-হাতের ভিতর ধরে আছি আমার সন্তান...

এখনো শুয়ে আছি
বারান্দার কোণে
বরফের মাঝে চাপা দেওয়া
শীতল দেহ
কুচি কুচি সাদা ফুল
গোলাপও আছে
মুড়ে দেওয়া শবের ওপর

তোমাদের টুকরো ভালবাসা,
ঊষ্ণ আলিঙ্গন
কতোদিন, ক- তো- দি- ন চেয়েছিল
তোমাদের কাছে
লাল লাল কৃষ্ণচূড়া- রক্তিম হৃদয়

দিয়ে যাব দু-হাত উপুড় করে
আমার যা আছে
একবার দিও শুধু নারীর সম্মান
একবার ভেবে দেখো,
আমারো কি আছে !!

ঝর্ণা চ্যাটাজ্জী

পলাশ


পলাশ




শুন্ন শাখায় পলাশ ফুটেছে

স্বপ্নের মত ডালে ,

গন্ধ বিহীন রুপ লাবন্যে

সরমেতে ফোটে ডালে ।

বন্য তবুও সুন্দর সে

অনাদরে ঝরে পডে ,

অগম্য বনানী সরু বাঁকা পথে

পথিকের চোখে পডে ।

জানেনা কার অভিশাপে সে

ধরায় লুটিয়া পডে ,

বিরহ বৈশাখের উত্তপ্ত যৌবনে

অবহেলায় ঝরিয়া পডে ।

কেউ তারে দেয়না স্নেহের পরশ

কেউ রাখেনা ফুলদানিতে ,

বুনো ফুলের শোভা আছে শুধু

গন্ধ নেইত তাতে ।

তাইত অভিমানে পলাশ

গাইছে তার ই গাথা ,

মনে রেখ এই শ্যামল বনানিতে

আমি আছি তুলে মাথা ।

***/ত্রিভুবনজিৎ মুখাজী /***
                                             
দরজা দিয়ে উঁকি মারি মা আসছে নাকি
আবার যদি খেতে বলে করবো কান্না কাটি


বিয়ের কনে সেজে আমি বসে আছি দেখ
বর আসবে BMW চড়ে তাক্ লাগবে দেখ



শনিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১২

কাটি পতঙ্গ


কাটিপতঙ্গ 


ঝর্না চ্যাটাজ্জী  

নীল রঙের ঘুড়িটা টপ করে এসে পড়ল
পায়ের কাছে
নীলের ওপর গোলাপী দাগ কাটা
লযাজের কাছে মাছের পাখনা

ছোটবেলার বানধবী সরস্তিয়া হেসে ব্ললে
“কাটি পতঙ, দেখ লো, মেরি তরহা “

সরস্তিয়ার বর তিন বছর হল চলে গেছে
ভোর রাতে ওকে একা ফেলে দিয়ে
বাডীতে কেঊ ছিল না তখন
কোথাও কোন মেলা ছিল, বেচা-কেনা করতে
বাডীসুদধ হাজির সেখানে
বর ও ফেলে দিয়ে চলে যায়, কে জানে কোন্খানে !

বাবুজীর মুখ লাল, মাইজীর ও আঁখমে পানি
একটা ছোট বোন ছিল,
সেও বলে নানা কথা, নানা কহানী

সরস্তিয়াকে দেখলে পাড়ার লোকে করে ফিস ফিস
স্রস্তিয়া হঁআটলে পাড়ার ছেলেরা করে হিস হিস
ধরতে যায় সবাই
খেলার মাঠে কাটা ঘুড়ির মতন।

গোলাপী দাগ কাটা নীল ঘুড়িটা হাতে নিয়ে সরস্তিয়া হেসে ব্লে
“দেখ লো, ্যায়সে মেরা বদন ‘
চেয়ে দেখি,
স্রস্তিয়ার শযামলা গায়ে
লাল লাল আঁচড়ের দাগ,
আবিকল কাটি পতঙ্গ

ঝর্না চ্যাটাজ্জী

বুধবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১২

আমাকেও দিও কিছু


আমাকেও দিও কিছু 

সব কিছু দিয়ে যাব শেষে
যত রঙ , ভালবাসা জমেছিল বুকে
সুগন্ধী মশলার মত জমা ছিল ,
রাখা ছিল মুখচাপা দিয়্‌
নিয়ে যেও একে একে

এখনো মুখঢাকা পড়ে আছি
খাটের ওপর
চৈত্রের পাতারা উড়ে উড়ে আসে
মেঘ জমে ধূসর আকাশে
এখনো নরম চোখ,
দু-হাতের ভিতর ধরে আছি আমার সন্তান...

এখনো শুয়ে আছি
বারান্দার কোণে
বরফের মাঝে চাপা দেওয়া
শীতল দেহ
কুচি কুচি সাদা ফুল
গোলাপও আছে
মুড়ে দেওয়া শবের ওপর

তোমাদের টুকরো ভালবাসা,
ঊষ্ণ আলিঙ্গন
কতোদিন, ক- তো- দি- ন চেয়েছিল
তোমাদের কাছে
লাল লাল কৃষ্ণচূড়া- রক্তিম হৃদয়

দিয়ে যাব দু-হাত উপুড় করে
আমার যা আছে
একবার দিও শুধু নারীর সম্মান
একবার ভেবে দেখো,
আমারো কি আছে !!


ঝর্না চ্যাটার্জি

সোমবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১২

দংশিত প্রেম

দংশিত প্রেম


ভগ্নস্থুপের নিষ্ঠুর চিত্র আঁচ টানে ,
প্রত্যাখ্য়িত আত্মসত্তার অন্তরালে I
প্রজ্যোলিত প্রতিহিংসার লেলিহান শিখা ,
উন্মত্ত - উদ্ধত - হুঙ্কারিত !!!
অশ্রু বারি অঙ্গারে রূপান্তর ,
খ্খোভ উল্কা বৃষ্টির ছিন্ন - বিচ্ছিন্ন হৃদয় !!!
নিষ্ঠুরতায় প্রেমের কলি চূর্ণ - বিচূর্ণ
ক্ষিপ্র দংশিত প্রেম !!!!!!

Post By:- গোপা ভট্টাচার্য্য

রবিবার, ২২ এপ্রিল, ২০১২

প্রতিচ্ছবি



প্রতিচ্ছবি

সবুজ বনের পাখি আর নীল রাজ্যের পরী
থাকত তারা দুজন মিলে,মিলও ছিল ভারি
কথায় কথায় পাখি আসে
নীল রাজ্যের আশে পাশে
কখনও বা পরীর মেলা বসে সবুজ বনে
নীলের ব্যথা কোনখানে পাখি-ই শুধু জানে
থাকবে তারা দুজন মিলে করবেনা কেউ আড়ি
এই ছবিটা প্রতিচ্ছবি তাদের দুজনেরই।

ঝর্না চ্যাটার্জি

ভালোবাসা



আঁধার আমার ভাল লাগে
ভাল লাগে নিকষ কালো রঙ,
সুরেলা জীবন রাখে না কোন মানে
ছন্দহীনতায় বেহায়া বেঢঙ্গ ।
জঙ্গধরা ভালবাসা দরজাতে
ভাষাহীনতায় জর্জর পাংশু মুখ,
তৃষ্ণায় ফেটে যায় বুকের পাঁজর
দহনতায় খেলা করে অনাহুত সুখ ।
কালনাগিনীর নিঃশ্বাসের কালো বিষ
পান করে উন্মাদনায় মত্ত অধর,
কাপালিকের লাল বস্ত্রের উল্লাস
শ্মশান-ভূমিতে গুঞ্জে রাত্রি প্রহর ।
প্রতিকুলতার পরকাষ্ঠায় মুখ গুজে
আহত হৃদয় তবু বলে যায়,
চাঁদের রূপোলী জলে শোয়ানো আছে প্রেম
অহল্যার মত আমার প্রতীক্ষায়

Posted by:-গোপা ভট্টাচার্য্য

শনিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১২

প্রেম


 প্রেম
আমার পায়ের তলার মাটি থাক বা না থাক
আমার মাথার ওপরে আকাশ থাক বা না থাক
আমার হৃদয়ে, তোমার জন্য প্রেম আছে এবং থাকবে
যাকনা এ দুনিয়াটা বদলে যাক
তবুও আমার মনের জানলাতে উঁকি মারবে
কেবলি তুমি তুমি আর তুমি !!!!

ত্রিভুবনজিৎ মুখারজী

Aaj khunji tomay

Song written by: Avik Chakraborty
Song.
SONG:
KUASHA JARANO RAATE
GHUM BHENGE JAY ,
MAJH RAATE MON AAJ
KHOJE TOMAY.(2)
GHUM CHOKHE MONE HOLO
DARIYE TUMI ,
DU HATH BARIE DAKCHO TUMI.

ANDHAR GHORE ABCHA ALO
UKI DICHCHE CHADER ALO
ASHA NIRASHAR MAJHE AMI
ASBE KI TUMI BHABCHI AMI.(2)

KUASHA TE GHEME GACHE
JANALAR KANCH
SHITER MAJHE O AMI
GHEME GACHI AAJ.(2)
FAGUNER AAGUN LEGECHE MONE
AGUN JELECHO TUMI AMAR MONE.

ভালবাসা

আঁধার আমার ভাল লাগে
ভাল লাগে নিকষ কালো রঙ,
সুরেলা জীবন রাখে না কোন মানে
ছন্দহীনতায় বেহায়া বেঢঙ্গ ।
জঙ্গধরা ভালবাসা দরজাতে
ভাষাহীনতায় জর্জর পাংশু মুখ,
তৃষ্ণায় ফেটে যায় বুকের পাঁজর
দহনতায় খেলা করে অনাহুত সুখ ।
কালনাগিনীর নিঃশ্বাসের কালো বিষ
পান করে উন্মাদনায় মত্ত অধর,
কাপালিকের লাল বস্ত্রের উল্লাস
শ্মশান-ভূমিতে গুঞ্জে রাত্রি প্রহর ।
প্রতিকুলতার পরকাষ্ঠায় মুখ গুজে
আহত হৃদয় তবু বলে যায়,
চাঁদের রূপোলী জলে শোয়ানো আছে প্রেম
অহল্যার মত আমার প্রতীক্ষায় ।

গোপা ভট্টাচার্য্য

শুক্রবার, ২০ এপ্রিল, ২০১২


কাটি পতঙ্গ  
          
ঝর্না চ্যাটাজী

নীল রঙের ঘুড়িটা টপ করে এসে পড়ল
পায়ের কাছে
নীলের ওপর গোলাপী দাগ কাটা
লযাজের কাছে মাছের পাখনা

ছোটবেলার বানধবী সরস্তিয়া হেসে ব্ললে
“কাটি পতঙ, দেখ লো, মেরি তরহা “

সরস্তিয়ার বর তিন বছর হল চলে গেছে
ভোর রাতে ওকে একা ফেলে দিয়ে
বাডীতে কেঊ ছিল না তখন
কোথাও কোন মেলা ছিল, বেচা-কেনা করতে
বাডীসুদধ হাজির সেখানে
বর ও ফেলে দিয়ে চলে যায়, কে জানে কোন্খানে !

বাবুজীর মুখ লাল, মাইজীর ও আঁখমে পানি
একটা ছোট বোন ছিল,
সেও বলে নানা কথা, নানা কহানী

সরস্তিয়াকে দেখলে পাড়ার লোকে করে ফিস ফিস
স্রস্তিয়া হঁআটলে পাড়ার ছেলেরা করে হিস হিস
ধরতে যায় সবাই
খেলার মাঠে কাটা ঘুড়ির মতন।

গোলাপী দাগ কাটা নীল ঘুড়িটা হাতে নিয়ে সরস্তিয়া হেসে ব্লে
“দেখ লো, ্যায়সে মেরা বদন ‘
চেয়ে দেখি,
স্রস্তিয়ার শযামলা গায়ে
লাল লাল আঁচড়ের দাগ,
আবিকল কাটি পতঙ

রবিবার, ৮ এপ্রিল, ২০১২

দুরত্ব

দুরত্ব 

আকাশকে দেখে ভাবি
সত্তি বুঝি কাছে আছে আমার !
জডিয়ে ধরবো কি তাকে
দুহাতে পাঁজকোলা কোরে ?
কিন্তু দু হাত বাডিয়ে দেখি
কোলে করা ত দূরে থাক ,
হাত বাডিয়ে ছোঁআও অবাস্তব !!
জানালা দিয়ে দেখি চাঁদ
তাকেওকি ধরা যায় ?
অহেতুক চেষ্টা! চাঁদ কি ধরাযায়?
পৃথিবীতে আছে এমন অনেক কিছু
যা শুধু অনুভব করাযায়
কিন্তু তা নাগালের বাইরে
ধরাত দুরের কথা
হাত বাডিয়ে ছোঁআও অবাস্তব !!

ত্রিভুবনজিৎ মুখারজ্জী

পলাশ


পলাশ




শুন্ন শাখায় পলাশ ফুটেছে

স্বপ্নের মত ডালে ,

গন্ধ বিহীন রুপ লাবন্যে

সরমেতে ফোটে ডালে ।

বন্য তবুও সুন্দর সে

অনাদরে ঝরে পডে ,

অগম্য বনানী সরু বাঁকা পথে

পথিকের চোখে পডে ।

জানেনা কার অভিশাপে সে

ধরায় লুটিয়া পডে ,

বিরহ বৈশাখের উত্তপ্ত যৌবনে

অবহেলায় ঝরিয়া পডে ।

কেউ তারে দেয়না স্নেহের পরশ

কেউ রাখেনা ফুলদানিতে ,

বুনো ফুলের শোভা আছে শুধু

গন্ধ নেইত তাতে ।

তাইত অভিমানে পলাশ

গাইছে তার ই গাথা ,

মনে রেখ এই শ্যামল বনানিতে

আমি আছি তুলে মাথা ।

***/ত্রিভুবনজিৎ মুখাজী /***


প্রেম

আমার পায়ের তলার মাটি থাক বা না থাক
আমার মাথার ওপরে আকাশ থাক বা না থাক
আমার হৃদয়ে, তোমার জন্য প্রেম আছে এবং থাকবে
যাকনা এ দুনিয়াটা বদলে যাক
তবুও আমার মনের জানলাতে উঁকি মারবে
কেবলি তুমি তুমি আর তুমি !!!!

গুন গুন করে ....চট পট ছডা


গুন গুন করে গান গাই তবু পাই না কোথাউ কাহারে

সন সন করে হাওয়া বয় তবু পাই না আহার; আহারে !

ফুস ফুস করে কথা বলে সব কেউ যেন আছে বাইরে

ঘস ঘস করে ঘোষে মেজে দেয় চক চক করে আহারে !!

টুক টুক করে কাটে যে ইঁদুর চট পট ছোটে দেখরে

খস খস করে লেখে যে ছেলেটা মুখ টিপে মা’ হাঁসেরে !!!

ঠক ঠক করে কাঁপে যে জরে অসুধ ত কাজ দেয় নারে

সোঁ সোঁ করে ট্রেন টা ছুটেছে ওই দেখ দূর পারে রে !

ঝপ ঝপ করে বৃষটি নামলো দুম দাম পডে তালরে

খোঁজ খোঁজ কোথা গেল যে মিলি এই বৃষটি তে বাইরে !!

পোঁ পোঁ করে ছুটছে ছেলেরা বল হাতে করে মাঠেরে

ধপ ধপ করে বুকটা কাঁপে যে মিলি এল কিনা দেখরে !!!

টুক টুক করে মিলি এল চলে মুখে তার হাঁসি দেখরে

টক টক করে কথা যে বলে চন মন করে মন হায়রে

হুস হুস করে হুলকে তাডায়, রান্নাঘরে কে ?দেখরে

হাম হাম করে, মাছ ভাত খায় ডর ভয় তার নেইরে

প্রিয়া


প্রিয়া

স্বপ্নের আকাশে তুমি যে মোর প্রিয়া
দেখি তাই তোমারে দু চোখ ভরিয়া
মনের পিপাসা ভুলাই তারে চেয়ে                          
তুমি যে আমার অতি আপনার প্রিয়ে
দু হাত তুলিয়া চাহি আকাশ পানে
আছ তুমি যদিও আমারি প্রাণে
দু চোখ ভরিয়া দেখি তোমার’ ই ছবি
হৃদয়ে মোর আছে যে তোমার ই ছবি
নির্জন নিশীথের তুমি যে  তারা
নিস্পাপ হৃদয়ের তুমি সুক্তারা
:// ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী//
Posted by TRIBHUBANJIT MUKHERJEE at 5:28 AM 0 comments  

TAGORE'S FREE-VERSE TRANSLATION.


আমার এ গান ছেড়েছে তার
সকল অলংকার
তোমার কাছে রাখে নি আর
সাজের অহংকার।
অলংকার যে মাঝে প'ড়ে
মিলনেতে আড়াল করে,
তোমার কথা ঢাকে যে তার
মুখর ঝংকার।

তোমার কাছে খাটে না মোর
কবির গরব করা-
মহাকবি, তোমার পায়ে
দিতে চাই যে ধরা।
জীবন লয়ে যতন করি
যদি সরল বাঁশি গড়ি,
আপন সুরে দিবে ভরি
সকল ছিদ্র তার।
Amar e gan chheŗechhe tar shôkol ôlongkar
Tomar kachhe rakhe ni ar shajer ôhongkar
Ôlongkar je majhe pôŗe milônete aŗal kôre,
Tomar kôtha đhake je tar mukhôro jhôngkar.

Tomar kachhe khaţe na mor kobir gôrbo kôra,
Môhakobi, tomar paee dite chai je dhôra.
Jibon loe jôton kori jodi shôrol bãshi goŗi,
Apon shure dibe bhori sôkol chhidro tar.

Tagore's free-verse translation:

My song has put off her adornments.
She has no pride of dress and decoration.
Ornaments would mar our union; they would come
between thee and me; their jingling would drown thy whispers.
My poet's vanity dies in shame before thy sight.
O master poet, I have sat down at thy feet.
Only let me make my life simple and straight,
like a flute of reed for thee to fill with music.[126


ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভু,
পথে যদি পিছিয়ে পড়ি কভু॥
এই-যে হিয়া থরোথরো কাঁপে আজি এমনতরো
এই বেদনা ক্ষমা করো, ক্ষমা করো, ক্ষমা করো প্রভু॥
এই দীনতা ক্ষমা করো প্রভু,
পিছন-পানে তাকাই যদি কভু।
দিনের তাপে রৌদ্রজ্বালায় শুকায় মালা পূজার থালায়,
সেই ম্লানতা ক্ষমা করো, ক্ষমা করো, ক্ষমা করো প্রভু॥
Klanti amar khôma kôro probhu,
Pôthe jodi pichhie poŗi kobhu.
Ei je hia thôro thôro kãpe aji êmontôro,
Ei bedona khôma kôro khôma kôro probhu.

Ei dinota khôma kôro probhu,
Pichhon-pane takai jodi kobhu.
Diner tape roudrojalae shukae mala pujar thalae,
Shei mlanota khôma kôro khôma kôro, probhu.
Gloss by Tagore scholar Reba Som:

Forgive me my weariness O Lord
Should I ever lag behind
For this heart that this day trembles so
And for this pain, forgive me, forgive me, O Lord
For this weakness, forgive me O Lord,
If perchance I cast a look behind
And in the day's heat and under the burning sun
The garland on the platter of offering wilts,
For its dull pallor, forgive me, forgive me O Lord.[127]


চির সঙ্গিনী ...



চির সঙ্গিনী ...

ফাগুন এসেছে আজ
রং এর ডালি মেলে
রং আবীরেতে মাতওালা
 সকলের মন ভুলে
প্রীতির পাপডি মেলে
বিশ্বতে চলে বন্ধুত্যের
ডানা  মেলে মন উডে চলে
দিগ দিগন্ত থেকে আসা
কত অভিনন্দন আমার
বুক আলোঢ়ন করে
যেন উজাড করে
দিয়েছে কেউ আপনারে
এক হৃদয় আরেক কে বোঝে
বোঝে যানে সে কে?
সেই বন্ধু যাকে দেখিনি
সে যেন অতি আপনার
বোঝায় সে আমার কে !
এ যেন এক অদম্য অনুভূতি
স্নেহ ভালোবাসা পরশের অনুভূতি
সব একাকার হোয়ে যায়
মণে হয় সে আমার চির সঙ্গিনী
তারে আমি চিনি সে আমার চির সঙ্গিনী !!!!!
****ত্রিভুবনজিৎ মুখারজ্জী ****

শনিবার, ৭ এপ্রিল, ২০১২

দুরত্ব

দুরত্ব 

আকাশকে দেখে ভাবি
সত্তি বুঝি কাছে আছে আমার !
জডিয়ে ধরবো কি তাকে
দুহাতে পাঁজকোলা কোরে ?
কিন্তু দু হাত বাডিয়ে দেখি
কোলে করা ত দূরে থাক ,
হাত বাডিয়ে ছোঁআও অবাস্তব !!
জানালা দিয়ে দেখি চাঁদ
তাকেওকি ধরা যায় ?
অহেতুক চেষ্টা! চাঁদ কি ধরাযায়?
পৃথিবীতে আছে এমন অনেক কিছু
যা শুধু অনুভব করাযায়
কিন্তু তা নাগালের বাইরে
ধরাত দুরের কথা
হাত বাডিয়ে ছোঁআও অবাস্তব !!

ত্রিভুবনজিৎ মুখারজ্জী



কাজী নজরুল ইসলাম :-
গণমানুষের কবি, সাম্যবাদী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবন হাজার রকম বৈচিত্র্যে ভরা। তার জীবনের নানা অংশ জুড়ে আষ্টে-পৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে বঞ্চনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ আর গণমানুষের অধিকার আদায়ের তীব্র আকাক্সক্ষা। ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষ তখন ইংরেজদের কুশাসনের দাবানলে পুড়ছিল। আর তাই কবি কাজী নজরুল ইসলামের সবচেয়ে বড় বৈরীপক্ষ ছিল ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী। সঙ্গত কারনেই ব্রিটিশদের সইতে পারতেন না নজরুল। অন্যায়ের বিপক্ষে- সত্যের পক্ষে ও শোষিত মানুষের জন্য কথা বলতে গিয়ে নজরুল ব্রিটিশ শাসকের রোষানলে পড়ে জেল পর্যন্ত খেটেছেন। শুধু তাই নয় নজরুলের লেখার ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করে ব্রিটিশ সরকার। কাজী নজরুলের লেখা যুগবাণী, বিষের বাঁশি, ভাঙ্গার গান, প্রলয় শিখা ও চন্দ্রবিন্দুসহ মোট ৫টি গ্রন্থ ব্রিটিশ সরকার বাজেয়াপ্ত করে। বলা বাহুল্য বাংলা সাহিত্যে সমকালীন অন্য কোনো কবি বা সাহিত্যিকের এত গ্রন্থ একত্রে কখনও বাজেয়াপ্ত হয়নি। তাই নজরুলের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ রাজরোষের মাত্রা এখান থেকেই অনুমান করা যায়। নজরুলের প্রতিবাদ আর তাঁর লেখনীর অন্যতম দিক হলো নজরুলই ভারতবর্ষে প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতার কথা উচ্চারণ করেন। নানা সৃষ্টিতে বৈচিত্র্যমণ্ডিত নজরুলের কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্ত হয় পত্রিকা সম্পাদনাও। ১৯২২ সালে নজরুল 'ধূমকেতু' নামের একটি পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন। পত্রিকাটি সপ্তাহে দু'বার প্রকাশ পেত। ১২ সেপ্টেম্বর ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ধূমকেতু'র দ্বাদশ সংখ্যায় 'আনন্দময়ীর আগমন' নামক একটি কবিতা প্রকাশিত হয়। কবিতাটি ব্রিটিশ শাসকদের ভিত কাঁপিয়ে দেয়। ফলে এই কবিতায় নজরুলের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম রাজদ্রোহের মামলা হয়। একই বছরের ৮ নভেম্বর রাজদ্রোহের অপরাধে নজরুলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। দেশদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত নজরুলের বিচার হয়েছিল কলকাতার আলীপুর চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে। পরবর্তীতে এই মামলার রায়ে ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ১০ জানুয়ারি নজরুল এক বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। রায় ঘোষণার পরের দিন তাকে আলীপুর সেন্ট্রাল জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আগে থেকেই নজরুলের কাব্য চেতনা আর সৃষ্টিশীল দ্রোহের সঙ্গে পরিচিত ছিল সাধারন মানুষ। এবার কারাবরণ করে নজরুল সমগ্র দেশবাসীর কাছে শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে ওঠেন। এমনকি স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ নজরুলের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তার 'বসন্ত' নাটকটি কবির নামে উৎসর্গ করেন। দিনটি ছিল ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ২২ ফেব্রুয়ারি। এদিকে ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ১৪ এপ্রিল নজরুলকে আলীপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে হুগলী জেলে স্থানান্তর করা হয়। আলীপুরে নজরুল ছিলেন বিশেষ শ্রেণীর কয়েদি। কিন্তু হুগলিতে স্থানান্তরের পর নজরুলকে বিশেষ শ্রেণীর কয়েদির মর্যাদার পরিবর্তে সাধারণ শ্রেণীর কয়েদির অবস্থানে নামিয়ে দেওয়া হয়। হুগলী জেল সুপার মিস্টার আর্সটন ছিলেন নির্যাতন ও দুর্ব্যবহারের জন্য কুখ্যাত। বিশেষ করে রাজবন্দীদের সঙ্গে জেলের ভেতর অমানবিক নির্যাতন ও দুর্ব্যবহার করতেন তিনি। এ সময় নজরুল তার বিখ্যাত 'শিকল পরার গান' জেলে বসেই রচনা করেন। জেলখানার ভেতর অকথ্য নির্যাতন আর বৈষম্যের শিকার হয়ে নজরুল এখানেও বিদ্রোহী হয়ে ওঠলেন। শুরু করলেন আন্দোলন। আন্দোলনের সূত্র জেলখানায় পায়ে ডান্ডা বেড়ি, ভাতের বদলে মাড় ভাত ও রাজবন্দীদের নির্যাতনের প্রতিবাদ। এসব বন্ধের দাবিতে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ১৪ এপ্রিল হুগলী জেলে অনশন ধর্মঘট শুরু করেন। দিনের পর দিন তিনি অনশন চালিয়ে যেতে থাকেন।
সে সময়কার কবির জেল জীবন সম্পর্কে খুব পরিষ্কার ধারনা পাওয়া না গেলেও নজরুলের জেল জীবনের করুণ মর্মান্তিক চিত্র তুলে ধরে কলকাতার আনন্দবাজার ও দেশ পত্রিকা। সেখানে বিভিন্ন সময় প্রকাশিত একাধিক বিশ্লেষণী লেখায় নজরুলের সেই সময়কার অনশনসঙ্গীদের ভাষ্যে ফুটে ওঠে নজরুলের জেল জীবন। হুগলি জেলে কবি নজরুলের সঙ্গে মৌলভী সিরাজউদ্দীন এবং বাবু গোপাল চন্দ্র সেনও অনশনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেই সূত্র মতে অনশনের কয়েকদিনের মধ্যেই নজরুল প্রবল জ্বরে আক্রান্ত হন। সেই সঙ্গে অযত্ন অনাহারে শরীরের ওজন প্রায় ১৩ কেজি কমে যায়। এভাবে নজরুল একটানা অনশন করে যান ৩৯ দিন। আশে-পাশের শুভাকাক্সক্ষী ও সাধারন মানুষ নজরুলের পরিণতির কথা চিন্তা করে আঁতকে ওঠলেও নজরুল তার সিদ্ধান্তে ছিলেন অবিচল। সেই সময় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বয়ং নজরুলকে চিঠি লিখে অনশন ভঙ্গ করার অনুরোধ জানান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিলং থেকে এ বিষয়ে তাকে টেলিগ্রাম পাঠান। রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন- 'Live up hunger strike. Our Literature claims you' কিন্তু টেলিগ্রামটি নজরুলের হাতে পৌঁছায়নি। জেল কর্তৃপক্ষ 'Address is not found' লিখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে টেলিগ্রামটি ফেরত পাঠান। জেল কর্তৃপক্ষ প্রকৃত ঠিকানা জানলেও ইচ্ছে করেই টেলিগ্রামটি নজরুলের কাছে না পাঠিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে ফেরত পাঠান। রবীন্দ্রনাথ এ ঘটনায় দারুণ মর্মাহত হন। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও নজরুলের অনশনে খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তিনি শিবপুর থেকে ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ১৭ মে হুগলী জেলে গিয়ে নজরুলের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেন। কিন্তু জেল কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতা ও অনীহার কারণে তিনি দেখা করতে পারেননি। ফলে রবীন্দ্রনাথের চেয়েও বেশি হতাশ হতে হয়েছিল তাকে। চুরুলিয়া থেকে নজরুলের মা জাহেদা খাতুনও নজরুলের সঙ্গে দেখা করতে ব্যর্থ হন। এসব সংবাদ খুব দ্রুতই চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে সমগ্র দেশবাসী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। অতঃপর শেষ পর্যন্ত অনশনের ৩৯ দিন পর কুমিল্লার মাতৃসম বিরজা সুন্দরী দেবীর অনুরোধে তারই হাতে লেবুর রস পান করে নজরুল অনশন ভঙ্গ করেন। তিনি ছিলেন কখনো রাজনীতিবিদ, কখনো কবি, ব্রিটিশদের কাছে তিনি ছিলেন এক প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। বার বার কারাভোগ করেছেন, নির্যাতিত হলেও আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি, পিছিয়ে আসেননি কখনই। লড়াই চালিয়ে গেছেন সারা জীবন। এরপর উপমহাদেশ ব্রিটিশ শাসনমুক্ত হলো। বাংলাদেশ স্বাধীন হলো। জাতীয় কবির সম্মাণ দিয়ে নজরুলকে ঢাকায় আনা হলো। একসময় সমস্ত ভক্তদের কাঁদিয়ে কবি চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
সৃষ্টি সুখের উল্লাসে কাঁপা এক মহান পুরুষ। ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো চিরপ্রেমিক। দ্রোহ ও প্রেমের চিরবিদ্রোহী। তিনি কাজী নজরুল ইসলাম। বাঙালির জাগরণের কবি। বাংলা সাহিত্যের মুকুটহীন রাখালরাজা। বাংলাদেশের জাতীয় কবি। আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ কবির জন্মদিন। ১১২তম জন্মবার্ষিকী।
এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরি, আর বাকি হাতে রণ-তুর্য নিয়ে প্রেম ও দ্রোহের সম্মিলন ঘটাতে ১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ নিখিল ভারতের অবিভক্ত   বাংলার (বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ) বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কবি নজরুল। বাবা কাজী ফকির আহমদ, মা জায়েদা খাতুন তার ডাক নাম রেখেছিলেন দুখুমিয়া। চুরুলিয়ার বালক দুখুর শৈশবের কিছু সময় কাটে বাংলাদেশে। ময়মনসিংহের ত্রিশালে দরিরামপুর স্কুলে লেখাপড়া করেন। কিছুদিন কাটান চট্টগ্রামে। বিয়ে করেন কুমিল্লায়। প্রথমে দৌলতপুরের নার্গিস। সে বিয়ে টেকেনি। পরে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন কুমিল্লার কান্দিরপাড়ের প্রমিলা সেনকে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাকরুদ্ধ অসুস্থ কবিকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দিয়ে জাতীয় কবির মর্যাদা দেন।
ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সার্বজনীন মুক্তি ও মানবতার কবি নজরুল বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির এক ক্ষণজন্মা প্রতিভা। বাংলা সাহিত্যাকাশে ধূমকেতু রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন তিনি। চিরপ্রেমিক চিরবিদ্রোহী কবি তার নাতিদীর্ঘ সাহিত্য সাধনার মাধ্যমে নিজকালের মাটি ও মানুষের জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে গেছেন বাংলাকাব্যকে। পরাধীন শৃক্সখলিত জাতির স্বাধীনতার স্পৃহাকে জাগ্রত করতে বিদ্রোহের গান শুনিয়েছেন এ ভূখণ্ডের আপামর জনসাধারণকে। 'কারার-ই লৌহ কপাট, ভেঙ্গে ফেল কর রে লোপাট, রক্ত জমাট শিকল পূজার পাষাণ বেদি। ওরে ও তরুণ ঈশান বাজা তোর প্রলয় বিষাণ, ধ্বংস নিষাণ, উড়ুক তারার প্রাচীর ভেদী'। বাঙালির ইতিহাস ঐতিহ্যের অহংবোধকে উত্তরসূরির মননে নাড়া দিতে নিজের লেখনী শক্তি দিয়ে বাজিয়েছেন আজন্ম প্রেমের মোহন বাঁশি_ 'তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয় সে কি মোর অপরাধ'?। কখনো গানে, কখনো বা কবিতায় বুনেছেন অসাম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনার বীজ_ 'মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মসলমান' কবিতায়। অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে, মানবপ্রেমের পক্ষে আজীবন ছিলেন চিরজাগরুক তিনি। মানবকল্যাণ ও শান্তির চিরন্তন জয়গান গেয়েছেন আজীবন। মাত্র ২২ বছরের সাহিত্য জীবনে অসংখ্য কবিতা, গান, উপন্যাস, নাটক রচনার পাশাপাশি বেশ সম্পাদিত করেছেন বেশ কিছু পত্রিকা। ব্রিটিশ শাসনবিরোধী লেখার জন্য কয়েকবার কারারুদ্ধও হয়েছেন সাংবাদিক-কবি নজরুল ইসলাম। তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার তার কয়েকটি বইও নিষিদ্ধ করে। অজ্ঞাত রোগে বাকরুদ্ধ ও লেখনি শক্তি হারিয়ে অকালে সাহিত্যাকাশ থেকে ঝরে পড়ার আগে সৈনিক-কবি এভাবেই তার শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করেছিলেন কাব্যলক্ষ্মীকে_'অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে/প্রদীপ শিখা সম/, কাঁপিছে প্রাণ মম/তোমার সুন্দর ভঙ্গিতে। ... /
আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে, এবং জাতির ক্রান্তিকালে সমস্যা সংকটের সময় সব বাধা অতিক্রমের প্রেরণা হয়ে আছেন কবি নজরুল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে শক্তি ও সাহস যুগিয়েছিল তার লেখা কবিতা আর গান। এ বছর কবির অমরসৃষ্টি 'বিদ্রোহী' কবিতাটি রচনার ৯০ বছর পূর্তি হচ্ছে। ঔপনিবেশিকতার নাগপাশ থেকে দেশমাতৃকার মুক্তির লক্ষ্যে নিপীড়িত-নির্যাতিত-বঞ্চিতদের সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করতে কবির কলমের কালিতে অক্ষর আর শব্দের সম্মিলন ঘটেছিল যেন বিদ্রোহের আগুন। রচনা করেছিলেন কালজয়ী বিদ্রোহী_'বল বীর... / বল উন্নত মম শির।/ শির নেহারি আমারি নত শির ঐ শিখর হিমাদ্রির!/বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাঁড়ি/চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি/ ভূলোক, দূ্যলোক, গোলক ভেদিয়া,/ খোদার আসন আরস ছেদিয়া /উঠিয়াছে চির-বিস্ময়, আমি বিশ্ব বিধাত্রির!/মম ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে/ রাজ রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!/বল বীর/আমি চির-উন্নত শির!'।
আজ জন্মদিনে কবির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছে জাতি। রাষ্ট্রীয় আচার অনুষ্ঠানে পালন করা হচ্ছে ১১২তম জন্মবার্ষিকী। সকালে ফুলে ফুলে ছেয়ে যাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গণে কবির মাজার। আয়োজন করা হয়েছে তিন দিনব্যাপী রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান মালার। সকালে জাতীয় কবির স্মৃতিবিজড়িত ত্রিশালে নজরুল মেলার উদ্বোধন করবেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া পৃথক বাণীতে কবির অমর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। নানা কর্মসূচির মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নজরুল ইনস্টিটিউট, নজরুল একাডেমী, বাংলা একাডেমী, শিল্পকলা একাডেমীসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিবসটি পালন করছে। গণমাধ্যমও দিনটি উপলক্ষে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ ও অনুষ্ঠান প্রচার করছে।
সৃষ্টি সুখের উল্লাসে কাঁপা এক মহান পুরুষ। ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো চিরপ্রেমিক। দ্রোহ ও প্রেমের চিরবিদ্রোহী। তিনি কাজী নজরুল ইসলাম। বাঙালির জাগরণের কবি। বাংলা সাহিত্যের মুকুটহীন রাখালরাজা। বাংলাদেশের জাতীয় কবি। আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ কবির জন্মদিন। ১১২তম জন্মবার্ষিকী।
এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরি, আর বাকি হাতে রণ-তুর্য নিয়ে প্রেম ও দ্রোহের সম্মিলন ঘটাতে ১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ নিখিল ভারতের অবিভক্ত   বাংলার (বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ) বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কবি নজরুল। বাবা কাজী ফকির আহমদ, মা জায়েদা খাতুন তার ডাক নাম রেখেছিলেন দুখুমিয়া। চুরুলিয়ার বালক দুখুর শৈশবের কিছু সময় কাটে বাংলাদেশে। ময়মনসিংহের ত্রিশালে দরিরামপুর স্কুলে লেখাপড়া করেন। কিছুদিন কাটান চট্টগ্রামে। বিয়ে করেন কুমিল্লায়। প্রথমে দৌলতপুরের নার্গিস। সে বিয়ে টেকেনি। পরে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন কুমিল্লার কান্দিরপাড়ের প্রমিলা সেনকে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাকরুদ্ধ অসুস্থ কবিকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দিয়ে জাতীয় কবির মর্যাদা দেন।
ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সার্বজনীন মুক্তি ও মানবতার কবি নজরুল বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির এক ক্ষণজন্মা প্রতিভা। বাংলা সাহিত্যাকাশে ধূমকেতু রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন তিনি। চিরপ্রেমিক চিরবিদ্রোহী কবি তার নাতিদীর্ঘ সাহিত্য সাধনার মাধ্যমে নিজকালের মাটি ও মানুষের জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে গেছেন বাংলাকাব্যকে। পরাধীন শৃক্সখলিত জাতির স্বাধীনতার স্পৃহাকে জাগ্রত করতে বিদ্রোহের গান শুনিয়েছেন এ ভূখণ্ডের আপামর জনসাধারণকে। 'কারার-ই লৌহ কপাট, ভেঙ্গে ফেল কর রে লোপাট, রক্ত জমাট শিকল পূজার পাষাণ বেদি। ওরে ও তরুণ ঈশান বাজা তোর প্রলয় বিষাণ, ধ্বংস নিষাণ, উড়ুক তারার প্রাচীর ভেদী'। বাঙালির ইতিহাস ঐতিহ্যের অহংবোধকে উত্তরসূরির মননে নাড়া দিতে নিজের লেখনী শক্তি দিয়ে বাজিয়েছেন আজন্ম প্রেমের মোহন বাঁশি_ 'তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয় সে কি মোর অপরাধ'?। কখনো গানে, কখনো বা কবিতায় বুনেছেন অসাম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনার বীজ_ 'মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মসলমান' কবিতায়। অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে, মানবপ্রেমের পক্ষে আজীবন ছিলেন চিরজাগরুক তিনি। মানবকল্যাণ ও শান্তির চিরন্তন জয়গান গেয়েছেন আজীবন। মাত্র ২২ বছরের সাহিত্য জীবনে অসংখ্য কবিতা, গান, উপন্যাস, নাটক রচনার পাশাপাশি বেশ সম্পাদিত করেছেন বেশ কিছু পত্রিকা। ব্রিটিশ শাসনবিরোধী লেখার জন্য কয়েকবার কারারুদ্ধও হয়েছেন সাংবাদিক-কবি নজরুল ইসলাম। তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার তার কয়েকটি বইও নিষিদ্ধ করে। অজ্ঞাত রোগে বাকরুদ্ধ ও লেখনি শক্তি হারিয়ে অকালে সাহিত্যাকাশ থেকে ঝরে পড়ার আগে সৈনিক-কবি এভাবেই তার শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করেছিলেন কাব্যলক্ষ্মীকে_'অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে/প্রদীপ শিখা সম/, কাঁপিছে প্রাণ মম/তোমার সুন্দর ভঙ্গিতে। ... /
আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে, এবং জাতির ক্রান্তিকালে সমস্যা সংকটের সময় সব বাধা অতিক্রমের প্রেরণা হয়ে আছেন কবি নজরুল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে শক্তি ও সাহস যুগিয়েছিল তার লেখা কবিতা আর গান। এ বছর কবির অমরসৃষ্টি 'বিদ্রোহী' কবিতাটি রচনার ৯০ বছর পূর্তি হচ্ছে। ঔপনিবেশিকতার নাগপাশ থেকে দেশমাতৃকার মুক্তির লক্ষ্যে নিপীড়িত-নির্যাতিত-বঞ্চিতদের সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করতে কবির কলমের কালিতে অক্ষর আর শব্দের সম্মিলন ঘটেছিল যেন বিদ্রোহের আগুন। রচনা করেছিলেন কালজয়ী বিদ্রোহী_'বল বীর... / বল উন্নত মম শির।/ শির নেহারি আমারি নত শির ঐ শিখর হিমাদ্রির!/বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাঁড়ি/চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি/ ভূলোক, দূ্যলোক, গোলক ভেদিয়া,/ খোদার আসন আরস ছেদিয়া /উঠিয়াছে চির-বিস্ময়, আমি বিশ্ব বিধাত্রির!/মম ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে/ রাজ রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!/বল বীর/আমি চির-উন্নত শির!'।
আজ জন্মদিনে কবির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছে জাতি। রাষ্ট্রীয় আচার অনুষ্ঠানে পালন করা হচ্ছে ১১২তম জন্মবার্ষিকী। সকালে ফুলে ফুলে ছেয়ে যাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গণে কবির মাজার। আয়োজন করা হয়েছে তিন দিনব্যাপী রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান মালার। সকালে জাতীয় কবির স্মৃতিবিজড়িত ত্রিশালে নজরুল মেলার উদ্বোধন করবেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া পৃথক বাণীতে কবির অমর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। নানা কর্মসূচির মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নজরুল ইনস্টিটিউট, নজরুল একাডেমী, বাংলা একাডেমী, শিল্পকলা একাডেমীসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিবসটি পালন করছে। গণমাধ্যমও দিনটি উপলক্ষে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ ও অনুষ্ঠান প্রচার করছে।


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর





উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
এই নিবন্ধটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নামক ব্যক্তি সংক্রান্ত। অন্যান্য ব্যবহারের জন্য দেখুন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (দ্ব্যর্থতা নিরসন)।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

১৯১৫ সালে কলকাতায় রবীন্দ্রনাথ
জন্ম ৭ মে, ১৮৬১
জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, কলকাতা, ব্রিটিশ ভারত (অধুনা পশ্চিমবঙ্গ, ভারত)
মৃত্যু ৭ আগস্ট, ১৯৪১ (৮০ বছর)
জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, কলকাতা, ব্রিটিশ ভারত (অধুনা পশ্চিমবঙ্গ, ভারত)
ছদ্মনাম ভানুসিংহ ঠাকুর (ভণিতা)
পেশা কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, সংগীতস্রষ্টা, চিত্রকর, গল্পকার
কার্যকাল বঙ্গীয় নবজাগরণ
উল্লেখযোগ্য
রচনাবলী গীতাঞ্জলি (১৯১০), রবীন্দ্র রচনাবলী
পুরস্কারসমূহ সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার
(১৯১৩)
যাঁদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন[দেখাও]
যাঁদের প্রভাবিত করেছেন[দেখাও]
স্বাক্ষর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (৭ই মে, ১৮৬১ - ৭ই আগস্ট, ১৯৪১)[১] (২৫ বৈশাখ, ১২৬৮ - ২২ শ্রাবণ, ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ)[১] ছিলেন অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক।[২] তাঁকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়।[৩] রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব, কবিগুরু ও বিশ্বকবি অভিধায় ভূষিত করা হয়।[৪] রবীন্দ্রনাথের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ,[৫] ৩৮টি নাটক,[৬] ১৩টি উপন্যাস[৭] ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন[৮] তাঁর জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয়। তাঁর সর্বমোট ৯৫টি ছোটগল্প[৯] ও ১৯১৫টি গান[১০] যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনা ৩২ খণ্ডে রবীন্দ্র রচনাবলী নামে প্রকাশিত হয়েছে।[১১] রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় পত্রসাহিত্য উনিশ খণ্ডে চিঠিপত্র ও চারটি পৃথক গ্রন্থে প্রকাশিত।[১২] এছাড়া তিনি প্রায় দুই হাজার ছবি এঁকেছিলেন।[১৩] রবীন্দ্রনাথের রচনা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।[১৪]
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতার এক ধনাঢ্য ও সংস্কৃতিবান ব্রাহ্ম পিরালী ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[১৫][১৬][১৭][১৮] বাল্যকালে প্রথাগত বিদ্যালয়-শিক্ষা তিনি গ্রহণ করেননি; গৃহশিক্ষক রেখে বাড়িতেই তাঁর শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।[১৯] আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন।ক[›][২০] ১৮৭৪ সালে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা-এ তাঁর "অভিলাষ" কবিতাটি প্রকাশিত হয়। এটিই ছিল তাঁর প্রথম প্রকাশিত রচনা।[২১] ১৮৭৮ সালে মাত্র সতেরো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ প্রথমবার ইংল্যান্ডে যান।[২২] ১৮৮৩ সালে মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়।[২২] ১৮৯০ সাল থেকে রবীন্দ্রনাথ পূর্ববঙ্গের শিলাইদহের জমিদারি এস্টেটে বসবাস শুরু করেন।[২২] ১৯০১ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানেই পাকাপাকিভাবে বসবাস শুরু করেন।[২৩] ১৯০২ সালে তাঁর পত্নীবিয়োগ হয়।[২৩] ১৯০৫ সালে তিনি বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন।[২৩] ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করেন।[২৩] কিন্তু ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি সেই উপাধি ত্যাগ করেন।[২৪] ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য তিনি শ্রীনিকেতন নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন।[২৫] ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠিত হয়।[২৬] দীর্ঘজীবনে তিনি বহুবার বিদেশ ভ্রমণ করেন এবং সমগ্র বিশ্বে বিশ্বভ্রাতৃত্বের বাণী প্রচার করেন।[২৫] ১৯৪১ সালে দীর্ঘ রোগভোগের পর কলকাতার পৈত্রিক বাসভবনেই তাঁর মৃত্যু হয়।[২৭]
রবীন্দ্রনাথের কাব্যসাহিত্যের বৈশিষ্ট্য ভাবগভীরতা, গীতিধর্মিতা চিত্ররূপময়তা, অধ্যাত্মচেতনা, ঐতিহ্যপ্রীতি, প্রকৃতিপ্রেম, মানবপ্রেম, স্বদেশপ্রেম, বিশ্বপ্রেম, রোম্যান্টিক সৌন্দর্যচেতনা, ভাব, ভাষা, ছন্দ ও আঙ্গিকের বৈচিত্র্য, বাস্তবচেতনা ও প্রগতিচেতনা।[২৮] রবীন্দ্রনাথের গদ্যভাষাও কাব্যিক।[২৯] ভারতের ধ্রুপদি ও লৌকিক সংস্কৃতি এবং পাশ্চাত্য বিজ্ঞানচেতনা ও শিল্পদর্শন তাঁর রচনায় গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল।[৩০] কথাসাহিত্য ও প্রবন্ধের মাধ্যমে তিনি সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে নিজ মতামত প্রকাশ করেছিলেন।[৩১] সমাজকল্যাণের উপায় হিসেবে তিনি গ্রামোন্নয়ন ও গ্রামের দরিদ্র জনসাধারণকে শিক্ষিত করে তোলার পক্ষে মতপ্রকাশ করেন।[৩২] এর পাশাপাশি সামাজিক ভেদাভেদ, অস্পৃশ্যতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধেও তিনি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।[৩৩] রবীন্দ্রনাথের দর্শনচেতনায় ঈশ্বরের মূল হিসেবে মানব সংসারকেই নির্দিষ্ট করা হয়েছে; রবীন্দ্রনাথ দেববিগ্রহের পরিবর্তে কর্মী অর্থাৎ মানুষ ঈশ্বরের পূজার কথা বলেছিলেন।[৩৪] সংগীত ও নৃত্যকে তিনি শিক্ষার অপরিহার্য অঙ্গ মনে করতেন।[৩৫] রবীন্দ্রনাথের গান তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি।[৩৬] তাঁর রচিত আমার সোনার বাংলা ও জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে গানদুটি যথাক্রমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ ও ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের জাতীয় সংগীত।[৩৭]
সূচিপত্র  [আড়ালে রাখো]
১ জীবন
১.১ প্রথম জীবন (১৮৬১–১৯০১)
১.১.১ শৈশব ও কৈশোর (১৮৬১ - ১৮৭৮)
১.১.২ যৌবন (১৮৭৮-১৯০১)
১.২ মধ্য জীবন (১৯০১–১৯৩২)
১.৩ শেষ জীবন (১৯৩২-১৯৪১)
২ বিশ্বভ্রমণ
৩ সৃষ্টিকর্ম
৩.১ কবিতা
৩.২ ছোটগল্প
৩.৩ উপন্যাস
৩.৪ প্রবন্ধ ও পত্রসাহিত্য
৩.৫ নাট্যসাহিত্য
৩.৬ সংগীত ও নৃত্যকলা
৩.৭ চিত্রকলা
৪ রাজনৈতিক মতাদর্শ ও শিক্ষাচিন্তা
৫ প্রভাব
৬ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নামাঙ্কিত স্মারক ও দ্রষ্টব্যস্থল
৭ পাদটীকা
৮ তথ্যসূত্র
৯ আরও পড়ুন
১০ বহিঃসংযোগ
জীবন

প্রথম জীবন (১৮৬১–১৯০১)
মূল নিবন্ধ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন (১৮৬১–১৯০১)
শৈশব ও কৈশোর (১৮৬১ - ১৮৭৮)


কিশোর রবীন্দ্রনাথ, ১৮৭৭; জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্কেচ অবলম্বনে গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক অঙ্কিত
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতা ছিলেন ব্রাহ্ম ধর্মগুরু দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮১৭–১৯০৫)[৩৮] এবং মাতা ছিলেন সারদাসুন্দরী দেবী (১৮২৬–১৮৭৫)।[৩৯] রবীন্দ্রনাথ ছিলেন পিতামাতার চতুর্দশ সন্তান।খ[›][৪০] জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার ছিল ব্রাহ্ম আদিধর্ম মতবাদের প্রবক্তা।[৪১][৪২]রবীন্দ্রনাথের পূর্ব পুরুষেরা খুলনা জেলার রূপসা উপজেলা পিঠাভোগে বাস করতেন।[৪৩] ১৮৭৫ সালে মাত্র চোদ্দ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথের মাতৃবিয়োগ ঘটে।[২২] পিতা দেবেন্দ্রনাথ দেশভ্রমণের নেশায় বছরের অধিকাংশ সময় কলকাতার বাইরে অতিবাহিত করতেন। তাই ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান হয়েও রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলা কেটেছিল ভৃত্যদের অনুশাসনে।[৪৪][৪৫] শৈশবে রবীন্দ্রনাথ কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নর্ম্যাল স্কুল, বেঙ্গল অ্যাকাডেমি এবং সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুলে কিছুদিন করে পড়াশোনা করেছিলেন।[৪৬] কিন্তু বিদ্যালয়-শিক্ষায় অনাগ্রহী হওয়ায় বাড়িতেই গৃহশিক্ষক রেখে তাঁর শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।[৪৭] ছেলেবেলায় জোড়াসাঁকোর বাড়িতে অথবা বোলপুর ও পানিহাটির বাগানবাড়িতে প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে বেশি স্বচ্ছন্দবোধ করতেন রবীন্দ্রনাথ।[৪৮][৪৯]
১৮৭৩ সালে এগারো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথের উপনয়ন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।[৫০] এরপর তিনি কয়েক মাসের জন্য পিতার সঙ্গে দেশভ্রমণে বের হন।[৫০] প্রথমে তাঁরা আসেন শান্তিনিকেতনে।[৫১] এরপর পাঞ্জাবের অমৃতসরে কিছুকাল কাটিয়ে শিখদের উপাসনা পদ্ধতি পরিদর্শন করেন।[৫১] শেষে পুত্রকে নিয়ে দেবেন্দ্রনাথ যান পাঞ্জাবেরই (অধুনা ভারতের হিমাচল প্রদেশ রাজ্যে অবস্থিত) ডালহৌসি শৈলশহরের নিকট বক্রোটায়।[৫১] এখানকার বক্রোটা বাংলোয় বসে রবীন্দ্রনাথ পিতার কাছ থেকে সংস্কৃত ব্যাকরণ, ইংরেজি, জ্যোতির্বিজ্ঞান, সাধারণ বিজ্ঞান ও ইতিহাসের নিয়মিত পাঠ নিতে শুরু করেন।[৫১] দেবেন্দ্রনাথ তাঁকে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের জীবনী, কালিদাস রচিত ধ্রুপদি সংস্কৃত কাব্য ও নাটক এবং উপনিষদ্‌ পাঠেও উৎসাহিত করতেন।[৫২][৫৩] ১৮৭৭ সালে ভারতী পত্রিকায় তরুণ রবীন্দ্রনাথের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা প্রকাশিত হয়। এগুলি হল মাইকেল মধুসূদনের "মেঘনাদবধ কাব্যের সমালোচনা", ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী এবং "ভিখারিণী" ও "করুণা" নামে দুটি গল্প। এর মধ্যে ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই কবিতাগুলি রাধা-কৃষ্ণ বিষয়ক পদাবলির অনুকরণে "ভানুসিংহ" ভণিতায় রচিত।[৫৪] রবীন্দ্রনাথের "ভিখারিণী" গল্পটি (১৮৭৭) বাংলা সাহিত্যের প্রথম ছোটগল্প।[৫৫][৫৬] ১৮৭৮ সালে প্রকাশিত হয় রবীন্দ্রনাথের প্রথম কাব্যগ্রন্থ তথা প্রথম মুদ্রিত গ্রন্থ কবিকাহিনী।[৫৭] এছাড়া এই পর্বে তিনি রচনা করেছিলেন সন্ধ্যাসংগীত (১৮৮২) কাব্যগ্রন্থটি। রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত কবিতা "নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ" এই কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।[৫৮]
যৌবন (১৮৭৮-১৯০১)


স্ত্রী মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ, ১৮৮৩
১৮৭৮ সালে ব্যারিস্টারি পড়ার উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ডে যান রবীন্দ্রনাথ।[৫৯] প্রথমে তিনি ব্রাইটনের একটি পাবলিক স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন।[৫৯] ১৮৭৯ সালে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে আইনবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। কিন্তু সাহিত্যচর্চার আকর্ষণে সেই পড়াশোনা তিনি সমাপ্ত করতে পারেননি।[৫৯] ইংল্যান্ডে থাকাকালীন শেকসপিয়র ও অন্যান্য ইংরেজ সাহিত্যিকদের রচনার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের পরিচয় ঘটে। এই সময় তিনি বিশেষ মনোযোগ সহকারে পাঠ করেন রিলিজিও মেদিচি, কোরিওলেনাস এবং অ্যান্টনি অ্যান্ড ক্লিওপেট্রা।[৬০] এই সময় তাঁর ইংল্যান্ডবাসের অভিজ্ঞতার কথা ভারতী পত্রিকায় পত্রাকারে পাঠাতেন রবীন্দ্রনাথ। উক্ত পত্রিকায় এই লেখাগুলি জ্যেষ্ঠভ্রাতা দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমালোচনাসহ[৫৯] প্রকাশিত হত য়ুরোপযাত্রী কোনো বঙ্গীয় যুবকের পত্রধারা নামে।[২২] ১৮৮১ সালে সেই পত্রাবলি য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র নামে গ্রন্থাকারে ছাপা হয়। এটিই ছিল রবীন্দ্রনাথের প্রথম গদ্যগ্রন্থ তথা প্রথম চলিত ভাষায় লেখা গ্রন্থ।[৫৯] অবশেষে ১৮৮০ সালে প্রায় দেড় বছর ইংল্যান্ডে কাটিয়ে কোনো ডিগ্রি না নিয়ে এবং ব্যারিস্টারি পড়া শুরু না করেই তিনি দেশে ফিরে আসেন।[৫৯]
১৮৮৩ সালের ৯ ডিসেম্বর (২৪ অগ্রহায়ণ, ১২৯০ বঙ্গাব্দ) ঠাকুরবাড়ির অধস্তন কর্মচারী বেণীমাধব রায়চৌধুরীর কন্যা ভবতারিণীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের বিবাহ সম্পন্ন হয়।[৬১] বিবাহিত জীবনে ভবতারিণীর নামকরণ হয়েছিল মৃণালিনী দেবী (১৮৭৩–১৯০২ )।[৬১] রবীন্দ্রনাথ ও মৃণালিনীর সন্তান ছিলেন পাঁচ জন: মাধুরীলতা (১৮৮৬–১৯১৮), রথীন্দ্রনাথ (১৮৮৮–১৯৬১), রেণুকা (১৮৯১–১৯০৩), মীরা (১৮৯৪–১৯৬৯) এবং শমীন্দ্রনাথ (১৮৯৬–১৯০৭)।[৬১] এঁদের মধ্যে অতি অল্প বয়সেই রেণুকা ও শমীন্দ্রনাথের মৃত্যু ঘটে।[৬২]


শিলাইদহ কুঠিবাড়ি, বর্তমান চিত্র
১৮৯১ সাল থেকে পিতার আদেশে নদিয়া (নদিয়ার উক্ত অংশটি অধুনা বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলা), পাবনা ও রাজশাহী জেলা এবং উড়িষ্যার জমিদারিগুলির তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ।[৬৩] কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে রবীন্দ্রনাথ দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেছিলেন। জমিদার রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে "পদ্মা" নামে একটি বিলাসবহুল পারিবারিক বজরায় চড়ে প্রজাবর্গের কাছে খাজনা আদায় ও আশীর্বাদ প্রার্থনা করতে যেতেন। গ্রামবাসীরাও তাঁর সম্মানে ভোজসভার আয়োজন করত।[৬৪]
১৮৯০ সালে রবীন্দ্রনাথের অপর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ মানসী প্রকাশিত হয়। কুড়ি থেকে ত্রিশ বছর বয়সের মধ্যে তাঁর আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ ও গীতিসংকলন প্রকাশিত হয়েছিল। এগুলি হলো প্রভাতসংগীত, শৈশবসঙ্গীত, রবিচ্ছায়া, কড়ি ও কোমল ইত্যাদি।[৬৫] ১৮৯১ থেকে ১৮৯৫ সাল পর্যন্ত নিজের সম্পাদিত সাধনা পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের বেশ কিছু উৎকৃষ্ট রচনা প্রকাশিত হয়। তাঁর সাহিত্যজীবনের এই পর্যায়টি তাই "সাধনা পর্যায়" নামে পরিচিত।[৪৪] রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছ গ্রন্থের প্রথম চুরাশিটি গল্পের অর্ধেকই এই পর্যায়ের রচনা।[৫৫] এই ছোটগল্পগুলিতে তিনি বাংলার গ্রামীণ জনজীবনের এক আবেগময় ও শ্লেষাত্মক চিত্র এঁকেছিলেন।[৬৬]
মধ্য জীবন (১৯০১–১৯৩২)
মূল নিবন্ধ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন (১৯০১–১৯৩২)


১৯১২ সালে হ্যাম্পস্টেডে রবীন্দ্রনাথ; বন্ধু উইলিয়াম রোদেনস্টাইনের শিশুপুত্র জন রোদেনস্টাইন কর্তৃক গৃহীত ফটোগ্রাফ।
১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ সপরিবারে শিলাইদহ ছেড়ে চলে আসেন বীরভূম জেলার বোলপুর শহরের উপকণ্ঠে শান্তিনিকেতনে।[৬৭] এখানে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৮৮ সালে একটি আশ্রম ও ১৮৯১ সালে একটি ব্রহ্মমন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।[৬৮] আশ্রমের আম্রকুঞ্জ উদ্যানে একটি গ্রন্থাগার নিয়ে রবীন্দ্রনাথ চালু করলেন "ব্রহ্মবিদ্যালয়" বা "ব্রহ্মচর্যাশ্র" নামে একটি পরীক্ষামূলক স্কুল।[৬৯] ১৯০২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মাত্র ত্রিশ বছর বয়সে কবিপত্নী মৃণালিনী দেবী মারা যান।[৭০] এরপর ১৯০৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর কন্যা রেণুকা,[৭১] ১৯০৫ সালের ১৯ জানুয়ারি পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর[৭২] ও ১৯০৭ সালের ২৩ নভেম্বর কনিষ্ঠ পুত্র শমীন্দ্রনাথের মৃত্যু হয়।[৭২]
এসবের মধ্যেই ১৯০৫ সালে রবীন্দ্রনাথ বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী স্বদেশী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন।[৭৩] ১৯০৬ সালে রবীন্দ্রনাথ তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠান আধুনিক কৃষি ও গোপালন বিদ্যা শেখার জন্য।[৭৪] ১৯০৭ সালে কনিষ্ঠা জামাতা নগেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়কেও কৃষিবিজ্ঞান শেখার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ।[৭৫]
এই সময় শান্তিনিকেতনের ব্রহ্মবিদ্যালয়ে অর্থসংকট তীব্র হয়ে ওঠে। পাশাপাশি পুত্র ও জামাতার বিদেশে পড়াশোনার ব্যয়ভারও রবীন্দ্রনাথকে বহন করতে হয়।[৭৫] এমতাবস্থায় রবীন্দ্রনাথ স্ত্রীর গয়না ও পুরীর বসতবাড়িটি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন।[৭৬]
ইতিমধ্যেই অবশ্য বাংলা ও বহির্বঙ্গে রবীন্দ্রনাথের কবিখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। ১৯০১ সালে নৈবেদ্য ও ১৯০৬ সালে খেয়া কাব্যগ্রন্থের পর ১৯১০ সালে তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ গীতাঞ্জলি প্রকাশিত হয়।[৭৭][৭৮] ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি (ইংরেজি অনুবাদ, ১৯১২) কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য সুইডিশ অ্যাকাডেমি রবীন্দ্রনাথকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার প্রদান করে।গ[›][৭৯] ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে 'স্যার' উপাধি (নাইটহুড) দেয়।[৮০]
১৯২১ সালে শান্তিনিকেতনের অদূরে সুরুল গ্রামে মার্কিন কৃষি-অর্থনীতিবিদ লেনার্ড নাইট এলমহার্স্ট, রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং শান্তিনিকেতনের আরও কয়েকজন শিক্ষক ও ছাত্রের সহায়তায় রবীন্দ্রনাথ "পল্লীসংগঠন কেন্দ্র" নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন।[৮১] এই সংস্থার উদ্দেশ্য ছিল কৃষির উন্নতিসাধন, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি রোগ নিবারণ, সমবায় প্রথায় ধর্মগোলা স্থাপন, চিকিৎসার সুব্যবস্থা এবং সাধারণ গ্রামবাসীদের মধ্যে স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধি করা।[৮১] ১৯২৩ সালে রবীন্দ্রনাথ এই সংস্থার নাম পরিবর্তন করে রাখেন "শ্রীনিকেতন"।[৮২] শ্রীনিকেতন ছিল মহাত্মা গান্ধীর প্রতীক ও প্রতিবাদসর্বস্ব স্বরাজ আন্দোলনের একটি বিকল্প ব্যবস্থা। উল্লেখ্য, রবীন্দ্রনাথ, গান্ধীর আন্দোলনের পন্থা-বিরোধী ছিলেন।[৮৩] পরবর্তীকালে দেশ ও বিদেশের একাধিক বিশেষজ্ঞ, দাতা ও অন্যান্য পদাধিকারীরা শ্রীনিকেতনের জন্য আর্থিক ও অন্যান্য সাহায্য পাঠিয়েছিলেন।[৮৪][৮৫]
১৯৩০-এর দশকের প্রথম ভাগে একাধিক বক্তৃতা, গান ও কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ভারতীয় সমাজের বর্ণাশ্রম প্রথা ও অস্পৃশ্যতার তীব্র সমালোচনা করেছিলেন।[৮৬][৮৭]
শেষ জীবন (১৯৩২-১৯৪১)
মূল নিবন্ধ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন (১৯৩২–১৯৪১)


১৯৩০ সালে বার্লিনে রবীন্দ্রনাথ
জীবনের শেষ দশকে (১৯৩২-১৯৪১) রবীন্দ্রনাথের মোট পঞ্চাশটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।[৮৮] তাঁর এই সময়কার কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য পুনশ্চ (১৯৩২), শেষ সপ্তক (১৯৩৫), শ্যামলী ও পত্রপুট (১৯৩৬) – এই গদ্যকবিতা সংকলন তিনটি।[৫] জীবনের এই পর্বে সাহিত্যের নানা শাখায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর এই পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফসল হলো তাঁর একাধিক গদ্যগীতিকা ও নৃত্যনাট্য চিত্রাঙ্গদা (১৯৩৬; চিত্রাঙ্গদা (১৮৯২) কাব্যনাট্যের নৃত্যাভিনয়-উপযোগী রূপ) [৮৯], শ্যামা (১৯৩৯) ও চণ্ডালিকা (১৯৩৯) নৃত্যনাট্যত্রয়ী।[৯০] এছাড়া রবীন্দ্রনাথ তাঁর শেষ তিনটি উপন্যাসও (দুই বোন (১৯৩৩), মালঞ্চ (১৯৩৪) ও চার অধ্যায় (১৯৩৪)) এই পর্বে রচনা করেছিলেন।[৭] তাঁর অধিকাংশ ছবি জীবনের এই পর্বেই আঁকা।[১৩] এর সঙ্গে সঙ্গে জীবনের শেষ বছরগুলিতে বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর বিজ্ঞান-বিষয়ক প্রবন্ধ সংকলন বিশ্বপরিচয়।[৯১] এই গ্রন্থে তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞানের আধুনিকতম সিদ্ধান্তগুলি সরল বাংলা গদ্যে লিপিবদ্ধ করেছিলেন।[৯১] পদার্থবিদ্যা ও জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কে তাঁর অর্জিত জ্ঞানের প্রভাব পরিলক্ষিত হয় তাঁর কাব্যেও।[৯২] সে (১৯৩৭), তিন সঙ্গী (১৯৪০) ও গল্পসল্প (১৯৪১) গল্পসংকলন তিনটিতে তাঁর বিজ্ঞানী চরিত্র-কেন্দ্রিক একাধিক গল্প সংকলিত হয়েছে।[৯৩]
জীবনের এই পর্বে ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তীব্রতম প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৯৩৪ সালে ব্রিটিশ বিহার প্রদেশে ভূমিকম্পে শতাধিক মানুষের মৃত্যুকে গান্ধীজি "ঈশ্বরের রোষ" বলে অভিহিত করলে, রবীন্দ্রনাথ গান্ধীজির এহেন বক্তব্যকে অবৈজ্ঞানিক বলে চিহ্নিত করেন এবং প্রকাশ্যে তাঁর সমালোচনা করেন।[৯৪] কলকাতার সাধারণ মানুষের আর্থিক দুরবস্থা ও ব্রিটিশ বাংলা প্রদেশের দ্রুত আর্থসামাজিক অবক্ষয় তাঁকে বিশেষভাবে বিচলিত করে তুলেছিল। গদ্যছন্দে রচিত একটি শত-পংক্তির কবিতায় তিনি এই ঘটনা চিত্রায়িতও করেছিলেন।[৯৫][৯৬]
জীবনের শেষ চার বছর ছিল তাঁর ধারাবাহিক শারীরিক অসুস্থতার সময়।[৯৭] এই সময়ের মধ্যে দুইবার অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় শয্যাশায়ী থাকতে হয়েছিল তাঁকে।[৯৭] ১৯৩৭ সালে একবার অচৈতন্য হয়ে গিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থা হয়েছিল কবির।[৯৭] সেবার সেরে উঠলেও ১৯৪০ সালে অসুস্থ হওয়ার পর আর তিনি সেরে উঠতে পারেননি।[৯৭] এই সময়পর্বে রচিত রবীন্দ্রনাথের কবিতাগুলি ছিল মৃত্যুচেতনাকে কেন্দ্র করে সৃজিত কিছু অবিস্মরণীয় পংক্তিমালা।[৯৭][৯৮] মৃত্যুর সাত দিন আগে পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ সৃষ্টিশীল ছিলেন।[২৭] দীর্ঘ রোগভোগের পর ১৯৪১ সালে জোড়াসাঁকোর বাসভবনেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।[৯৯][১০০]
বিশ্বভ্রমণ

মূল নিবন্ধ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্বভ্রমণ


আইনস্টাইনের সঙ্গে, ১৯৩০
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মোট বারো বার বিশ্বভ্রমণে বেরিয়েছিলেন।[১০১] ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সালের মধ্যে তিনি পাঁচটি মহাদেশের ত্রিশটিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন।[১০২] প্রথম জীবনে দুই বার (১৮৭৮ ও ১৮৯০ সালে) তিনি ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন।[১০১] ১৯১২ সালে ব্যক্তিগত চিকিৎসার জন্য তৃতীয়বার ইংল্যান্ডে গিয়ে ইয়েটস প্রমুখ কয়েকজন ইংরেজ কবি ও বুদ্ধিজীবীদের কাছে সদ্যরচিত গীতাঞ্জলি কাব্যের ইংরেজি অনুবাদ পাঠ করে শোনান।[১০১] কবিতাগুলি শুনে তাঁরাও মুগ্ধ হয়েছিলেন।[১০১] ইয়েটস স্বয়ং উক্ত কাব্যের ইংরেজি অনুবাদের ভূমিকাটি লিখে দিয়েছিলেন।[১০৩] এই ভ্রমণের সময়েই "দীনবন্ধু" চার্লস ফ্রিয়ার অ্যান্ড্রুজের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের পরিচয় ঘটে।[১০৪] ১৯১৩ সালে সুইডিশ অ্যাকাডেমি তাঁকে নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত করে।[১০১] ১৯১৬-১৭ সালে জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ সাম্রাজ্যবাদ ও উগ্র জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে কতকগুলি বক্তৃতা দেন।[১০৫][১০৬][১০৭] এই বক্তৃতাগুলি সংকলিত হয় তাঁর ন্যাশনালিজম (১৯১৭) গ্রন্থে।[১০১][১০৮] তবে জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের বিরূপ মতামত উক্ত দুই দেশে সেই সফরকালে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল।[১০১] ১৯২০-২১ সাল নাগাদ আবার ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান কবি।[১০১] এই সফরের সময় পাশ্চাত্য দেশগুলিতে তিনি সংবর্ধিত হয়েছিলেন।[১০১] ১৯২৪ সালে রবীন্দ্রনাথ যান চীন সফরে।[১০১] এরপর চীন থেকে জাপানে গিয়ে সেখানেও জাতীয়তাবাদবিরোধী বক্তৃতা দেন কবি।[১০১] ১৯২৪ সালের শেষের দিকে পেরু সরকারের আমন্ত্রণে সেদেশে যাওয়ার পথে আর্জেন্টিনায় অসুস্থ হয়ে কবি ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর আতিথ্যে তিন মাস কাটান।[১০৯] স্বাস্থ্যের কারণে পেরু ভ্রমণ তিনি স্থগিত করে দেন।[১১০] পরে পেরু ও মেক্সিকো উভয় দেশের সরকারই বিশ্বভারতীকে ১,০০,০০০ মার্কিন ডলার অর্থসাহায্য প্রদান করেছিল।[১১১] ১৯২৬ সালে বেনিতো মুসোলিনির আমন্ত্রণে ইতালি সফরে গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ।[১১২] প্রথমে মুসোলিনির আতিথেয়তায় মুগ্ধ হলেও, পরে লোকমুখে তাঁর স্বৈরাচারের কথা জানতে পেরে, মুসোলিনির কাজকর্মের সমালোচনা করেন কবি। এর ফলে উভয়ের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে ছেদ পড়ে।[১১৩] এরপর রবীন্দ্রনাথ গ্রিস, তুরস্ক ও মিশর ভ্রমণ করে ভারতে ফিরে আসেন।[১০১]


তেহরানের মজলিশে, ১৯৩২[১১৪]
১৯২৭ সালে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়সহ চার সঙ্গীকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ গিয়েছিলেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরে। এই সময় তিনি ভ্রমণ করেন বালি, জাভা, কুয়ালালামপুর, মালাক্কা, পেনাং, সিয়াম ও সিঙ্গাপুর।[১১৫] ১৯৩০ সালে কবি শেষবার ইংল্যান্ডে যান অক্সফোর্ডে হিবার্ট বক্তৃতা দেওয়ার জন্য।[১০১] এরপর তিনি ভ্রমণ করেন ফ্রান্স, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, সোভিয়েত রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।[১১৬][১১৭][১১৮] ১৯৩২ সালে ইরাক ও পারস্য ভ্রমণে গিয়েছিলেন কবি।[১০১] এরপর ১৯৩৪ সালে সিংহলে যান রবীন্দ্রনাথ। এটিই ছিল তাঁর সর্বশেষ বিদেশ সফর।[১১৯][১২০]
রবীন্দ্রনাথ যেসকল বইতে তাঁর বিদেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতাগুলি লিপিবদ্ধ করে রাখেন সেগুলি হল: য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র (১৮৮১), য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি (১৮৯১, ১৮৯৩), জাপান-যাত্রী (১৯১৯), যাত্রী (পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি ও জাভা-যাত্রীর পত্র, ১৯২৯), রাশিয়ার চিঠি (১৯৩১), পারস্যে (১৯৩৬) ও পথের সঞ্চয় (১৯৩৯)।[১০১] ব্যাপক বিশ্বভ্রমণের ফলে রবীন্দ্রনাথ তাঁর সমসাময়িক অরিঁ বের্গসঁ, আলবার্ট আইনস্টাইন, রবার্ট ফ্রস্ট, টমাস মান, জর্জ বার্নার্ড শ, এইচ জি ওয়েলস, রোম্যাঁ রোলাঁ প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পেয়েছিলেন।[১২১][১২২] জীবনের একেবারে শেষপর্বে পারস্য, ইরাক ও সিংহল ভ্রমণের সময় মানুষের পারস্পরিক ভেদাভেদ ও জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে তাঁর বিতৃষ্ণা আরও তীব্র হয়েছিল মাত্র।[১২৩] অন্যদিকে বিশ্বপরিক্রমার ফলে ভারতের বাইরে নিজের রচনাকে পরিচিত করে তোলার এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে রাজনৈতিক মতবিনিময়ের সুযোগও পেয়েছিলেন তিনি।[১০১]
সৃষ্টিকর্ম

এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকর্ম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন মূলত এক কবি। মাত্র আট বছর বয়সে তিনি কাব্যরচনা শুরু করেন। তাঁর প্রকাশিত মৌলিক কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ৫২। তবে বাঙালি সমাজে তাঁর জনপ্রিয়তা প্রধানত সংগীতস্রষ্টা হিসেবে। রবীন্দ্রনাথ প্রায় দুই হাজার গান লিখেছিলেন। কবিতা ও গান ছাড়াও তিনি ১৩টি উপন্যাস, ৯৫টি ছোটগল্প, ৩৬টি প্রবন্ধ ও গদ্যগ্রন্থ এবং ৩৮টি নাটক রচনা করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের সমগ্র রচনা রবীন্দ্র রচনাবলী নামে ৩২ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া তাঁর সামগ্রিক চিঠিপত্র উনিশ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর প্রবর্তিত নৃত্যশৈলী "রবীন্দ্রনৃত্য" নামে পরিচিত।[১২৪]
কবিতা


কবির হস্তাক্ষরে কবিতা, হাঙ্গেরিতে লিখিত, ১৯২৬: বাংলা ও ইংরেজিতে
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম জীবনে ছিলেন বিহারীলাল চক্রবর্তীর (১৮৩৫-১৮৯৪) অনুসারী কবি।[১২৫] তাঁর কবিকাহিনী, বনফুল ও ভগ্নহৃদয় কাব্য তিনটিতে বিহারীলালের প্রভাব সুস্পষ্ট।[১২৬] সন্ধ্যাসংগীত কাব্যগ্রন্থ থেকে রবীন্দ্রনাথ নিজের বক্তব্য প্রকাশ করতে শুরু করেন।[১২৬] এই পর্বের সন্ধ্যাসংগীত, প্রভাতসংগীত, ছবি ও গান ও কড়ি ও কোমল কাব্যগ্রন্থের মূল বিষয়বস্তু ছিল মানব হৃদয়ের বিষণ্ণতা, আনন্দ, মর্ত্যপ্রীতি ও মানবপ্রেম।[১২৬] ১৮৯০ সালে প্রকাশিত মানসী এবং তার পর প্রকাশিত সোনার তরী (১৮৯৪), চিত্রা (১৮৯৬), চৈতালি (১৮৯৬), কল্পনা (১৯০০) ও ক্ষণিকা (১৯০০) কাব্যগ্রন্থে ফুটে উঠেছে রবীন্দ্রনাথের প্রেম ও সৌন্দর্য সম্পর্কিত রোম্যান্টিক ভাবনা।[১২৬] ১৯০১ সালে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠার পর রবীন্দ্রনাথের কবিতায় আধ্যাত্মিক চিন্তার প্রাধান্য লক্ষিত হয়। এই চিন্তা ধরা পড়েছে নৈবেদ্য (১৯০১), খেয়া (১৯০৬), গীতাঞ্জলি (১৯১০), গীতিমাল্য (১৯১৪) ও গীতালি (১৯১৪) কাব্যগ্রন্থে।[১২৬] ১৯১৫ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা ঘটলে বলাকা (১৯১৬) কাব্যে রবীন্দ্রনাথের কবিতায় আধ্যাত্মিক চিন্তার পরিবর্তে আবার মর্ত্যজীবন সম্পর্কে আগ্রহ ফুটে ওঠে।[১২৬] পলাতকা (১৯১৮) কাব্যে গল্প-কবিতার আকারে তিনি নারীজীবনের সমসাময়িক সমস্যাগুলি তুলে ধরেন।[১২৬] পূরবী (১৯২৫) ও মহুয়া (১৯২৯) কাব্যগ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ আবার প্রেমকে উপজীব্য করেন।[১২৬] এরপর পুনশ্চ (১৯৩২), শেষ সপ্তক (১৯৩৫), পত্রপুট (১৯৩৬) ও শ্যামলী (১৯৩৬) নামে চারটি গদ্যকাব্য প্রকাশিত হয়।[১২৬] জীবনের শেষ দশকে কবিতার আঙ্গিক ও বিষয়বস্তু নিয়ে কয়েকটি নতুন পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ।[১২৬] এই সময়কার রোগশয্যায় (১৯৪০), আরোগ্য (১৯৪১), জন্মদিনে (১৯৪১) ও শেষ লেখা (১৯৪১, মরণোত্তর প্রকাশিত) কাব্যে মৃত্যু ও মর্ত্যপ্রীতিকে একটি নতুন আঙ্গিকে পরিস্ফুট করেছিলেন তিনি।[১২৬] শেষ কবিতা "তোমার সৃষ্টির পথ" মৃত্যুর আট দিন আগে মৌখিকভাবে রচনা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।[১২৬]
রবীন্দ্রনাথের কবিতায় মধ্যযুগীয় বৈষ্ণব পদাবলি, উপনিষদ্‌, কবীরের দোঁহাবলি, লালনের বাউল গান ও রামপ্রসাদ সেনের শাক্ত পদাবলি সাহিত্যের প্রভাব লক্ষিত হয়।[১২৭][১২৮][১২৯] তবে প্রাচীন সাহিত্যের দুরূহতার পরিবর্তে তিনি এক সহজ ও সরস কাব্যরচনার আঙ্গিক গ্রহণ করেছিলেন। আবার ১৯৩০-এর দশকে কিছু পরীক্ষামূলক লেখালেখির মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতা ও বাস্তবতাবোধের প্রাথমিক আবির্ভাব প্রসঙ্গে নিজ প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেছিলেন কবি।[১৩০] বহির্বিশ্বে তাঁর সর্বাপেক্ষা সুপরিচিত কাব্যগ্রন্থটি হল গীতাঞ্জলি। এ বইটির জন্যই তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছিলেন।[১৩১] নোবেল ফাউন্ডেশন তাঁর এই কাব্যগ্রন্থটিকে বর্ণনা করেছিল একটি "গভীরভাবে সংবেদনশীল, উজ্জ্বল ও সুন্দর কাব্যগ্রন্থ" রূপে।[১৩২]
ছোটগল্প


১৯১৩ সালে ম্যাকমিলান প্রকাশিত দ্য ক্রেসেন্ট মুন (শিশু ভোলানাথ) অনুবাদগ্রন্থের দ্য হিরো (বীরপুরুষ) আখ্যানকবিতার নন্দলাল বসুকৃত অলংকরণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ছোটগল্পকার।[১৩৩][১৩৪] মূলত হিতবাদী, সাধনা, ভারতী, সবুজ পত্র প্রভৃতি মাসিক পত্রিকাগুলির চাহিদা মেটাতে তিনি তাঁর ছোটগল্পগুলি রচনা করেছিলেন।[১৩৫] এই গল্পগুলির উচ্চ সাহিত্যমূল্য-সম্পন্ন।[১৩৫] রবীন্দ্রনাথের জীবনের "সাধনা" পর্বটি (১৮৯১–৯৫) ছিল সর্বাপেক্ষা সৃষ্টিশীল পর্যায়। তাঁর গল্পগুচ্ছ গল্পসংকলনের প্রথম তিন খণ্ডের চুরাশিটি গল্পের অর্ধেকই রচিত হয় এই সময়কালের মধ্যে।[৫৫] গল্পগুচ্ছ সংকলনের অন্য গল্পগুলির অনেকগুলিই রচিত হয়েছিল রবীন্দ্রজীবনের সবুজ পত্র পর্বে (১৯১৪–১৭; প্রমথ চৌধুরী সম্পাদিত পত্রিকার নামানুসারে) [৫৫] তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গল্প হল "কঙ্কাল", "নিশীথে", "মণিহারা", "ক্ষুধিত পাষাণ", "স্ত্রীর পত্র", "নষ্টনীড়", "কাবুলিওয়ালা", "হৈমন্তী", "দেনাপাওনা", "মুসলমানীর গল্প" ইত্যাদি।[১৩৫] শেষ জীবনে রবীন্দ্রনাথ লিপিকা, সে ও তিনসঙ্গী গল্পগ্রন্থে নতুন আঙ্গিকে গল্পরচনা করেছিলেন।[১৩৬]
রবীন্দ্রনাথ তাঁর গল্পে পারিপার্শ্বিক ঘটনাবলি বা আধুনিক ধ্যানধারণা সম্পর্কে মতামত প্রকাশ করতেন। কখনও তিনি মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বের বৌদ্ধিক বিশ্লেষণকেই গল্পে বেশি প্রাধান্য দিতেন।[১৩৭]
রবীন্দ্রনাথের একাধিক ছোটগল্প অবলম্বনে চলচ্চিত্র, নাটক ও টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মিত হয়েছে। তাঁর গল্পের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রায়ণ হল সত্যজিৎ রায় পরিচালিত তিন কন্যা ("মনিহারা", "পোস্টমাস্টার" ও "সমাপ্তি" অবলম্বনে)[১৩৮] ও চারুলতা ("নষ্টনীড়" অবলম্বনে) [১৩৯], তপন সিংহ পরিচালিত অতিথি, কাবুলিওয়ালা ও ক্ষুধিত পাষাণ[১৪০], পূর্ণেন্দু পত্রী পরিচালিত স্ত্রীর পত্র[১৪১] ইত্যাদি।
উপন্যাস


কাঠের সিলে খোদিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামের আদ্যক্ষরদ্বয় ("র-ঠ")। প্রাচীন হাইদা খোদাই লিপির সঙ্গে এর শৈলীগত মিল লক্ষণীয়। রবীন্দ্রনাথ প্রায়ই তাঁর পাণ্ডুলিপিগুলিতে এই ধরণের নকশা অঙ্কন করতেন।[১৪২]
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মোট তেরোটি উপন্যাস রচনা করেছিলেন।[১৩৫] এগুলি হল: বৌ-ঠাকুরাণীর হাট (১৮৮৩), রাজর্ষি (১৮৮৭), চোখের বালি (১৯০৩), নৌকাডুবি (১৯০৬), প্রজাপতির নির্বন্ধ (১৯০৮), গোরা (১৯১০), ঘরে বাইরে (১৯১৬), চতুরঙ্গ (১৯১৬), যোগাযোগ (১৯২৯), শেষের কবিতা (১৯২৯), দুই বোন (১৯৩৩), মালঞ্চ (১৯৩৪) ও চার অধ্যায় (১৯৩৪)।[১৩৫] বৌ-ঠাকুরাণীর হাট ও রাজর্ষি ঐতিহাসিক উপন্যাস। এদুটি রবীন্দ্রনাথের প্রথম উপন্যাস রচনার প্রচেষ্টা।[১৩৫] এরপর থেকে ছোটগল্পের মতো তাঁর উপন্যাসগুলিও মাসিকপত্রের চাহিদা অনুযায়ী নবপর্যায় বঙ্গদর্শন, প্রবাসী, সবুজ পত্র, বিচিত্রা প্রভৃতি পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়।[১৩৫]
চোখের বালি উপন্যাসে দেখানো হয়েছে সমসাময়িককালে বিধবাদের জীবনের নানা সমস্যা।[১৩৫] নৌকাডুবি উপন্যাসটি আবার লেখা হয়েছে জটিল পারিবারিক সমস্যাগুলিকে কেন্দ্র করে।[১৩৫] গোরা রবীন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস।[১৩৫] এই উপন্যাসে দেখানো হয়েছে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধের হিন্দু ও ব্রাহ্মসমাজের সংঘাত ও ভারতের তদানীন্তন সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যাগুলি।[১৩৫] ঘরে বাইরে উপন্যাসের বিষয়বস্তু ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে নারী ও পুরুষের সম্পর্কের জটিলতা।[১৪৩][১৪৪][১৪৫] স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের জটিলতা আরও সূক্ষ্মভাবে উঠে এসেছে তাঁর পরবর্তী যোগাযোগ উপন্যাসেও।[১৩৫] চতুরঙ্গ উপন্যাসটি রবীন্দ্রনাথের “ছোটগল্পধর্মী উপন্যাস”।[১৩৫] স্ত্রীর অসুস্থতার সুযোগে স্বামীর অন্য স্ত্রীলোকের প্রতি আসক্তি – এই বিষয়টিকে উপজীব্য করে রবীন্দ্রনাথ দুই বোন ও মালঞ্চ উপন্যাসদুটি লেখেন।[১৩৫] এর মধ্যে প্রথম উপন্যাসটি মিলনান্তক ও দ্বিতীয়টি বিয়োগান্তক।[১৩৫] রবীন্দ্রনাথের শেষ উপন্যাস চার অধ্যায় সমসাময়িক বিপ্লবী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে একটি বিয়োগান্তক প্রেমের উপন্যাস।[১৩৫]
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস অবলম্বনে কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য সত্যজিৎ রায়ের ঘরে বাইরে)[১৪৬] ও ঋতুপর্ণ ঘোষের চোখের বালি।
প্রবন্ধ ও পত্রসাহিত্য
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় অসংখ্য প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন। [১৪৭] এইসব প্রবন্ধে তিনি সমাজ, রাষ্ট্রনীতি, ধর্ম, সাহিত্যতত্ত্ব, ইতিহাস, ভাষাতত্ত্ব, ছন্দ, সংগীত ইত্যাদি নানা বিষয়ে নিজস্ব মতামত প্রকাশ করেন।[১৪৭] রবীন্দ্রনাথের সমাজচিন্তামূলক প্রবন্ধগুলি সমাজ (১৯০৮) সংকলনে সংকলিত হয়েছে।[১৪৭] রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন সময়ে লেখা রাজনীতি-সংক্রান্ত প্রবন্ধগুলি সংকলিত হয়েছে কালান্তর (১৯৩৭) সংকলনে।[১৪৭] রবীন্দ্রনাথের ধর্মভাবনা ও আধ্যাত্মিক অভিভাষণগুলি সংকলিত হয়েছে ধর্ম (১৯০৯) ও শান্তিনিকেতন (১৯০৯-১৬) অভিভাষণমালায়।[১৪৭] রবীন্দ্রনাথের ইতিহাস-সংক্রান্ত প্রবন্ধগুলি স্থান পেয়েছে ভারতবর্ষ (১৯০৬), ইতিহাস (১৯৫৫) ইত্যাদি গ্রন্থে।[১৪৭] সাহিত্য (১৯০৭), সাহিত্যের পথে (১৯৩৬) ও সাহিত্যের স্বরূপ (১৯৪৩) গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যতত্ত্ব আলোচনা করেছেন।[১৪৭] রবীন্দ্রনাথ ধ্রুপদি ভারতীয় সাহিত্য ও আধুনিক সাহিত্যের সমালোচনা করেছেন যথাক্রমে প্রাচীন সাহিত্য (১৯০৭) ও আধুনিক সাহিত্য (১৯০৭) গ্রন্থদুটিতে।[১৪৭] লোকসাহিত্য (১৯০৭) প্রবন্ধমালায় তিনি আলোচনা করেছেন বাংলা লোকসাহিত্যের প্রকৃতি।[১৪৭] ভাষাতত্ত্ব নিয়ে রবীন্দ্রনাথের চিন্তাভাবনা লিপিবদ্ধ রয়েছে শব্দতত্ত্ব (১৯০৯), বাংলা ভাষা পরিচয় (১৯৩৮) ইত্যাদি গ্রন্থে।[১৪৭] ছন্দ ও সংগীত নিয়ে তিনি আলোচনা করেছেন যথাক্রমে ছন্দ (১৯৩৬) ও সংগীতচিন্তা (১৯৬৬) গ্রন্থে।[১৪৭] বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠাতা রবীন্দ্রনাথ তাঁর শিক্ষা-সংক্রান্ত ভাবনাচিন্তার কথা প্রকাশ করেছেন শিক্ষা (১৯০৮) প্রবন্ধমালায়।[১৪৭] ন্যাশনালিজম (ইংরেজি: Nationalism, ১৯১৭) গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ উগ্র জাতীয়তাবাদের বিশ্লেষণ করে তার বিরোধিতা করেছেন।[১৪৭] অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি দর্শন বিষয়ে যে বিখ্যাত বক্তৃতাগুলি দিয়েছিলেন সেগুলি রিলিজিয়ন অফ ম্যান (ইংরেজি: Religion of Man, ১৯৩০; বাংলা অনুবাদ মানুষের ধর্ম, ১৯৩৩) নামে সংকলিত হয়।[১৪৭] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে লেখা জন্মদিনের অভিভাষণ সভ্যতার সংকট (১৯৪১) তাঁর সর্বশেষ প্রবন্ধগ্রন্থ।[১৪৭] জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ বিশ্বপরিচয় (১৯৩৭) নামে একটি তথ্যমূলক প্রবন্ধগ্রন্থ রচনা করেছিলেন।[১৪৭] জীবনস্মৃতি (১৯১২), ছেলেবেলা (১৯৪০) ও আত্মপরিচয় (১৯৪৩) তাঁর আত্মকথামূলক গ্রন্থ।[১৪৭]
রবীন্দ্রনাথের সামগ্রিক পত্রসাহিত্য আজ পর্যন্ত উনিশটি খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে।[১২] এছাড়া ছিন্নপত্র ও ছিন্নপত্রাবলী (ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণীকে লেখা), ভানুসিংহের পত্রাবলী (রানু অধিকারীকে (মুখোপাধ্যায়) লেখা) ও পথে ও পথের প্রান্তে (নির্মলকুমারী মহলানবিশকে লেখা) বই তিনটি রবীন্দ্রনাথের তিনটি উল্লেখযোগ্য পত্রসংকলন।[১২]
নাট্যসাহিত্য


বাল্মীকি-প্রতিভা নাটকের দৃশ্য, কলকাতার একটি দুর্গাপূজা মণ্ডপের দেওয়ালচিত্রে
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধারে ছিলেন নাট্যকার ও নাট্যাভিনেতা।[১৪৮] জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির পারিবারিক নাট্যমঞ্চে মাত্র ষোলো বছর বয়সে অগ্রজ জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত হঠাৎ নবাব নাটকে (মলিয়ের লা বুর্জোয়া জাঁতিরোম অবলম্বনে রচিত) [১৪৯] ও পরে জ্যোতিরিন্দ্রনাথেরই অলীকবাবু নাটকে নামভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।[১৪৮] ১৮৮১ সালে তাঁর প্রথম গীতিনাট্য বাল্মীকি-প্রতিভা মঞ্চস্থ হয়।[১৪৮][১৫০] এই নাটকে তিনি ঋষি বাল্মীকির ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।[১৪৮][১৫০] ১৮৮২ সালে রবীন্দ্রনাথ রামায়ণের উপাখ্যান অবলম্বনে কালমৃগয়া নামে আরও একটি গীতিনাট্য রচনা করেছিলেন।[১৪৮][১৫০] এই নাটক মঞ্চায়নের সময় তিনি অন্ধমুনির ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।[১৪৮][১৫০]
গীতিনাট্য রচনার পর রবীন্দ্রনাথ কয়েকটি কাব্যনাট্য রচনা করেন।[১৪৮][১৫০] শেকসপিয়রীয় পঞ্চাঙ্ক রীতিতে রচিত তাঁর রাজা ও রাণী (১৮৮৯)[১৫১] ও বিসর্জন (১৮৯০)[১৫২] বহুবার সাধারণ রঙ্গমঞ্চে অভিনীত হয় এবং তিনি নিজে এই নাটকগুলিতে অভিনয়ও করেন।[১৪৮] ১৮৮৯ সালে রাজা ও রাণী নাটকে বিক্রমদেবের ভূমিকায় অভিনয় করেন রবীন্দ্রনাথ।[১৪৮] বিসর্জন নাটকটি দুটি ভিন্ন সময়ে মঞ্চায়িত করেছিলেন তিনি।[১৪৮] ১৮৯০ সালের মঞ্চায়নের সময় যুবক রবীন্দ্রনাথ বৃদ্ধ রঘুপতির ভূমিকায় এবং ১৯২৩ সালের মঞ্চায়নের সময় বৃদ্ধ রবীন্দ্রনাথ যুবক জয়সিংহের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।[১৪৮] কাব্যনাট্য পর্বে রবীন্দ্রনাথের আরও দুটি উল্লেখযোগ্য নাটক হল চিত্রাঙ্গদা (১৮৯২)[১৫৩] ও মালিনী (১৮৯৬)।[১৫৪][১৪৮]
কাব্যনাট্যের পর রবীন্দ্রনাথ প্রহসন রচনায় মনোনিবেশ করেন।[১৪৮] এই পর্বে প্রকাশিত হয় গোড়ায় গলদ (১৮৯২), বৈকুণ্ঠের খাতা (১৮৯৭), হাস্যকৌতুক (১৯০৭) ও ব্যঙ্গকৌতুক (১৯০৭)।[১৪৮] বৈকুণ্ঠের খাতা নাটকে রবীন্দ্রনাথ কেদারের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।[১৪৮] ১৯২৬ সালে তিনি প্রজাপতির নির্বন্ধ উপন্যাসটিকেও চিরকুমার সভা নামে একটি প্রহসনমূলক নাটকের রূপ দেন।[১৪৮][১৫৫]


তাসের দেশ নাটকের একটি আধুনিক উপস্থাপনা
১৯০৮ সাল থেকে রবীন্দ্রনাথ রূপক-সাংকেতিক তত্ত্বধর্মী নাট্যরচনা শুরু করেন।[১৪৮] ইতিপূর্বে প্রকৃতির প্রতিশোধ (১৮৮৪) নাটকে তিনি কিছুটা রূপক-সাংকেতিক আঙ্গিক ব্যবহার করেছিলেন।[১৪৮] কিন্তু ১৯০৮ সালের পর থেকে একের পর এক নাটক তিনি এই আঙ্গিকে লিখতে শুরু করেন।[১৪৮] এই নাটকগুলি হল: শারদোৎসব (১৯০৮), রাজা (১৯১০), ডাকঘর (১৯১২), অচলায়তন (১৯১২), ফাল্গুনী (১৯১৬), মুক্তধারা (১৯২২), রক্তকরবী (১৯২৬), তাসের দেশ (১৯৩৩), কালের যাত্রা (১৯৩২) ইত্যাদি।[১৪৮] এই সময় রবীন্দ্রনাথ প্রধানত শান্তিনিকেতনে মঞ্চ তৈরি করে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে অভিনয়ের দল গড়ে মঞ্চস্থ করতেন।[১৪৮] কখনও কখনও কলকাতায় গিয়েও ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে নাটক মঞ্চস্থ করতেন তিনি।[১৪৮] এই সব নাটকেও একাধিক চরিত্রে অভিনয় করেন রবীন্দ্রনাথ।[১৪৮] তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য: ১৯১১ সালে শারদোৎসব নাটকে সন্ন্যাসী এবং রাজা নাটকে রাজা ও ঠাকুরদাদার যুগ্ম ভূমিকায় অভিনয়; ১৯১৪ সালে অচলায়তন নাটকে অদীনপুণ্যের ভূমিকায় অভিনয়; ১৯১৫ সালে ফাল্গুনী নাটকে অন্ধ বাউলের ভূমিকায় অভিনয়; ১৯১৭ সালে ডাকঘর নাটকে ঠাকুরদা, প্রহরী ও বাউলের ভূমিকায় অভিনয়।[১৪৮] নাট্যরচনার পাশাপাশি এই পর্বে ছাত্রছাত্রীদের অভিনয়ের প্রয়োজনে রবীন্দ্রনাথ পুরোন নাটকগুলি সংক্ষিপ্ত সংস্করণ করে নতুন নামে প্রকাশ করেন।[১৪৮] শারদোৎসব নাটকটি হয় ঋণশোধ (১৯২১), রাজা হয় অরূপরতন (১৯২০), অচলায়তন হয় গুরু (১৯১৮), গোড়ায় গলদ হয় শেষরক্ষা (১৯২৮), রাজা ও রাণী হয় তপতী (১৯২৯) এবং প্রায়শ্চিত্ত হয় পরিত্রাণ (১৯২৯)।[১৪৮]
১৯২৬ সালে নটীর পূজা নাটকে অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে নাচ ও গানের প্রয়োগ ঘটিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ।[১৪৮] এই ধারাটিই তাঁর জীবনের শেষ পর্বে “নৃত্যনাট্য” নামে পূর্ণ বিকাশ লাভ করে।[১৪৮] নটীর পূজা নৃত্যনাট্যের পর রবীন্দ্রনাথ একে একে রচনা করেন শাপমোচন (১৯৩১), তাসের দেশ (১৯৩৩), নৃত্যনাট্য চিত্রাঙ্গদা (১৯৩৬), নৃত্যনাট্য চণ্ডালিকা (১৯৩৮) ও শ্যামা (১৯৩৯)।[১৪৮] এগুলিও শান্তিনিকেতনের ছাত্রছাত্রীরাই প্রথম মঞ্চস্থ করেছিলেন।[১৪৮]
সংগীত ও নৃত্যকলা


"ড্যান্সিং গার্ল", রবীন্দ্রনাথ অঙ্কিত একটি তারিখবিহীন চিত্র
মূল নিবন্ধ: রবীন্দ্রসংগীত
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৫টি গান রচনা করেছিলেন।[১০] ধ্রুপদি ভারতীয় সংগীত, বাংলা লোকসংগীত ও ইউরোপীয় সংগীতের ধারা তিনটিকে আত্মস্থ করে তিনি একটি স্বকীয় সুরশৈলীর জন্ম দেন।[১৫৬] রবীন্দ্রনাথ তাঁর বহু কবিতাকে গানে রূপান্তরিত করেছিলেন।[১৫৭] রবীন্দ্র-বিশেষজ্ঞ সুকুমার সেন রবীন্দ্রসংগীত রচনার ইতিহাসে চারটি পর্ব নির্দেশ করেছেন।[১৫৮] প্রথম পর্বে তিনি জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্ট গীতের অনুসরণে গান রচনা শুরু করেছিলেন।[১৫৮] দ্বিতীয় পর্যায়ে (১৮৮৪-১৯০০) পল্লীগীতি ও কীর্তনের অনুসরণে রবীন্দ্রনাথ নিজস্ব সুরে গান রচনা শুরু করেন।[১৫৮] এই পর্বের রবীন্দ্রসংগীতে ঊনবিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট সংগীতস্রষ্টা মধুকান, রামনিধি গুপ্ত, শ্রীধর কথক প্রমুখের প্রভাবও সুস্পষ্ট।[১৫৮] এই সময় থেকেই তিনি স্বরচিত কবিতায় সুর দিয়ে গান রচনাও শুরু করেছিলেন।[১৫৮] ১৯০০ সালে শান্তিনিকেতনে বসবাস শুরু করার পর থেকে রবীন্দ্রসংগীত রচনার তৃতীয় পর্বের সূচনা ঘটে।[১৫৮] এই সময় রবীন্দ্রনাথ বাউল গানের সুর ও ভাব তাঁর নিজের গানের অঙ্গীভূত করেন।[১৫৮] প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর রবীন্দ্রনাথের গান রচনার চতুর্থ পর্বের সূচনা হয়।[১৫৮] কবির এই সময়কার গানের বৈশিষ্ট্য ছিল নতুন নতুন ঠাটের প্রয়োগ এবং বিচিত্র ও দুরূহ সুরসৃষ্টি।[১৫৮] তাঁর রচিত সকল গান সংকলিত হয়েছে গীতবিতান গ্রন্থে।[১৫৯] এই গ্রন্থের "পূজা", "প্রেম", "প্রকৃতি", "স্বদেশ", "আনুষ্ঠানিক" ও "বিচিত্র" পর্যায়ে মোট দেড় হাজার গান সংকলিত হয়।[১৫৯] পরে গীতিনাট্য, নৃত্যনাট্য, নাটক, কাব্যগ্রন্থ ও অন্যান্য সংকলন গ্রন্থ থেকে বহু গান এই বইতে সংকলিত হয়েছিল।[১৫৯] ইউরোপীয় অপেরার আদর্শে বাল্মীকি-প্রতিভা, কালমৃগয়া গীতিনাট্য এবং চিত্রাঙ্গদা, চণ্ডালিকা, ও শ্যামা সম্পূর্ণ গানের আকারে লেখা।[১৫৯]
রবীন্দ্রনাথের সময় বাংলার শিক্ষিত পরিবারে নৃত্যের চর্চা নিষিদ্ধ ছিল।[১২৪] কিন্তু রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতীর পাঠক্রমে সংগীত ও চিত্রকলার সঙ্গে সঙ্গে নৃত্যকেও অন্তর্ভুক্ত করেন।[১২৪] ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের লোকনৃত্য ও ধ্রুপদি নৃত্যশৈলীগুলির সংমিশ্রণে তিনি এক নতুন শৈলীর প্রবর্তন করেন।[১২৪] এই শৈলীটি "রবীন্দ্রনৃত্য" নামে পরিচিত।[১২৪] রবীন্দ্রনাথের গীতিনাট্য ও নৃত্যনাট্যগুলিতে গানের পাশাপাশি নাচও অপরিহার্য।[১২৪] বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী উদয় শংকর যে আধুনিক ভারতীয় নৃত্যধারার প্রবর্তন করেছিলেন, তার পিছনেও রবীন্দ্রনাথের প্রেরণা ছিল।[১২৪]
চিত্রকলা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিয়মিত ছবি আঁকা শুরু করেন প্রায় সত্তর বছর বয়সে।[১৩] চিত্রাঙ্কনে কোনো প্রথাগত শিক্ষা তাঁর ছিল না।[১৩] প্রথমদিকে তিনি লেখার হিজিবিজি কাটাকুটিগুলিকে একটি চেহারা দেওয়ার চেষ্টা করতেন।[১৩] এই প্রচেষ্টা থেকেই তাঁর ছবি আঁকার সূত্রপাত ঘটে।[১৩] ১৯২৮ থেকে ১৯৩৯ কালপরিধিতে অঙ্কিত তাঁর স্কেচ ও ছবির সংখ্যা আড়াই হাজারের ওপর, যার ১৫৭৪টি শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্রভবনে সংরক্ষিত আছে।[১৬০] দক্ষিণ ফ্রান্সের শিল্পীদের উৎসাহে ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে তাঁর প্রথম চিত্র প্রদর্শনী হয় প্যারিসের পিগাল আর্ট গ্যালারিতে।[১৬১] এরপর সমগ্র ইউরোপেই কবির একাধিক চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।[১৩] ছবিতে রং ও রেখার সাহায্যে রবীন্দ্রনাথ সংকেতের ব্যবহার করতেন।[১৩] রবীন্দ্রনাথ প্রাচ্য চিত্রকলার পুনরুত্থানে আগ্রহী হলেও, তাঁর নিজের ছবিতে আধুনিক বিমূর্তধর্মিতাই বেশি প্রস্ফুটিত হয়েছে। মূলত কালি-কলমে আঁকা স্কেচ, জলরং ও দেশজ রঙের ব্যবহার করে তিনি ছবি আঁকতেন।[১৩] তাঁর ছবিতে দেখা যায় মানুষের মুখের স্কেচ, অনির্ণেয় প্রাণীর আদল, নিসর্গদৃশ্য, ফুল, পাখি ইত্যাদি। তিনি নিজের প্রতিকৃতিও এঁকেছেন।[১৩] নন্দনতাত্ত্বিক ও বর্ণ পরিকল্পনার দিক থেকে তাঁর চিত্রকলা বেশ অদ্ভুত ধরণেরই বলে মনে হয়।[১৩] তবে তিনি একাধিক অঙ্কনশৈলী রপ্ত করেছিলেন।[১৩] তন্মধ্যে, কয়েকটি শৈলী হল- নিউ আয়ারল্যান্ডের হস্তশিল্প, কানাডার (ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশ) পশ্চিম উপকূলের "হাইদা" খোদাইশিল্প ও ম্যাক্স পেকস্টাইনের কাঠখোদাই শিল্প।[১৪২]
রাজনৈতিক মতাদর্শ ও শিক্ষাচিন্তা

মূল নিবন্ধ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাজনৈতিক মতাদর্শ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাজনৈতিক দর্শন অত্যন্ত জটিল। তিনি সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ও ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের সমর্থন করতেন।[১৬২][১৬৩][১৬৪] ১৮৯০ সালে প্রকাশিত মানসী কাব্যগ্রন্থের কয়েকটি কবিতায় রবীন্দ্রনাথের প্রথম জীবনের রাজনৈতিক ও সামাজিক চিন্তাভাবনার পরিচয় পাওয়া যায়।[১৬৫] হিন্দু-জার্মান ষড়যন্ত্র মামলার তথ্যপ্রমাণ এবং পরবর্তীকালে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, রবীন্দ্রনাথ গদর ষড়যন্ত্রের কথা শুধু জানতেনই না, বরং উক্ত ষড়যন্ত্রে জাপানি প্রধানমন্ত্রী তেরাউচি মাসাতাকি ও প্রাক্তন প্রিমিয়ার ওকুমা শিগেনোবুর সাহায্যও প্রার্থনা করেছিলেন।[১৬৬] আবার ১৯২৫ সালে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে স্বদেশী আন্দোলনকে "চরকা-সংস্কৃতি" বলে বিদ্রুপ করে রবীন্দ্রনাথ কঠোর ভাষায় তার বিরোধিতা করেন।[১৬৭] ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ তাঁর চোখে ছিল "আমাদের সামাজিক সমস্যাগুলির রাজনৈতিক উপসর্গ"। তাই বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে বৃহত্তর জনসাধারণের স্বনির্ভরতা ও বৌদ্ধিক উন্নতির উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। ভারতবাসীকে অন্ধ বিপ্লবের পন্থা ত্যাগ করে দৃঢ় ও প্রগতিশীল শিক্ষার পন্থাটিকে গ্রহণ করার আহ্বান জানান রবীন্দ্রনাথ।[১৬৮][১৬৯]


শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের আতিথেয়তায় মহাত্মা গান্ধী ও তাঁর পত্নী কস্তুরবা গান্ধী, ১৯৪০।
রবীন্দ্রনাথের এই ধরনের মতাদর্শ অনেককেই বিক্ষুব্ধ করে তোলে। ১৯১৬ সালের শেষ দিকে সানফ্রান্সিসকোয় একটি হোটেলে অবস্থানকালে একদল চরমপন্থী বিপ্লবী রবীন্দ্রনাথকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ উপস্থিত হওয়ায় তাঁদের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছিল।[১৭০] ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথের গান ও কবিতার ভূমিকা অনস্বীকার্য। ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি নাইটহুড বর্জন করেন।[১৭১] নাইটহুড প্রত্যাখ্যান-পত্রে লর্ড চেমসফোর্ডকে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, "আমার এই প্রতিবাদ আমার আতঙ্কিত দেশবাসীর মৌনযন্ত্রণার অভিব্যক্তি।" রবীন্দ্রনাথের "চিত্ত যেথা ভয়শূন্য" ও "একলা চলো রে" রাজনৈতিক রচনা হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। "একলা চলো রে" গানটি গান্ধীজির বিশেষ প্রিয় ছিল।[১৭২] যদিও মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক ছিল অম্লমধুর। হিন্দু নিম্নবর্ণীয় জন্য পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে গান্ধীজি ও আম্বেডকরের যে মতবিরোধের সূত্রপাত হয়, তা নিরসনেও রবীন্দ্রনাথ বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। ফলে গান্ধীজিও তাঁর অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন।[১৭৩][১৭৪]
রবীন্দ্রনাথ তাঁর "তোতা-কাহিনী" গল্পে বিদ্যালয়ের মুখস্ত-সর্বস্ব শিক্ষাকে প্রতি তীব্রভাবে আক্রমণ করেন। এই গল্পে রবীন্দ্রনাথ দেখিয়েছিলেন, দেশের ছাত্রসমাজকে খাঁচাবদ্ধ পাখিটির মতো শুকনো বিদ্যা গিলিয়ে কিভাবে তাদের বৌদ্ধিক মৃত্যুর পথে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।[১৭৫][১৭৬] ১৯১৭ সালের ১১ অক্টোবর ক্যালিফোর্নিয়ার সান্টা বারবারা ভ্রমণের সময় রবীন্দ্রনাথ শিক্ষা সম্পর্কে প্রথাবিরুদ্ধ চিন্তাভাবনা শুরু করেন। শান্তিনিকেতন আশ্রমকে দেশ ও ভূগোলের গণ্ডীর বাইরে বের করে ভারত ও বিশ্বকে একসূত্রে বেঁধে একটি বিশ্ব শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনাও এই সময়েই গ্রহণ করেছিলেন কবি।[১৭০] ১৯১৮ সালের ২২ অক্টোবর বিশ্বভারতীη[›] নামাঙ্কিত তাঁর এই বিদ্যালয়ের শিলান্যাস করা হয়েছিল। এরপর ১৯২২ সালের ২২ ডিসেম্বর উদ্বোধন হয়েছিল এই বিদ্যালয়ের।[১৭৭] বিশ্বভারতীতে কবি সনাতন ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থার ব্রহ্মচর্য ও গুরুপ্রথার পুনর্প্রবর্তন করেছিলেন। এই বিদ্যালয়ের জন্য অর্থসংগ্রহ করতে কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন তিনি। নোবেল পুরস্কারের অর্থমূল্য হিসেবে প্রাপ্ত সম্পূর্ণ অর্থ তিনি ঢেলে দিয়েছিলেন এই বিদ্যালয়ের পরিচালন খাতে।[১৭৮] নিজেও শান্তিনিকেতনের অধ্যক্ষ ও শিক্ষক হিসেবেও অত্যন্ত ব্যস্ত থাকতেন তিনি। সকালে ছাত্রদের ক্লাস নিতেন এবং বিকেল ও সন্ধ্যায় তাদের জন্য পাঠ্যপুস্তক রচনা করতেন।[১৭৯] ১৯১৯ সাল থেকে ১৯২১ সালের মধ্যে বিদ্যালয়ের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে তিনি একাধিকবার ইউরোপ ও আমেরিকা ভ্রমণ করেন।[১৮০]
প্রভাব



প্রাগের রবীন্দ্রমূর্তি
বিংশ শতাব্দীর বাঙালি সংস্কৃতিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রভাব অত্যন্ত ব্যাপক। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ তথা দার্শনিক অমর্ত্য সেন রবীন্দ্রনাথকে এক "হিমালয়প্রতিম ব্যক্তিত্ব" ও "গভীরভাবে প্রাসঙ্গিক ও বহুমাত্রিক সমসাময়িক দার্শনিক" হিসেবে বর্ণনা করেছেন।[১৮১] বত্রিশ খণ্ডে প্রকাশিত রবীন্দ্র রচনাবলী বাংলা সাহিত্যের একটি বিশেষ সম্পদ হিসেবে পরিগণিত হয়। রবীন্দ্রনাথকে "ভারতের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ কবি" হিসেবেও বর্ণনা করা হয়ে থাকে।[১৮২] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী "পঁচিশে বৈশাখ" ও প্রয়াণবার্ষিকী "বাইশে শ্রাবণ" আজও বাঙালি সমাজে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে পালিত হয়ে থাকে। এই উপলক্ষ্যে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, শান্তিনিকেতন আশ্রম ও শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে প্রচুর জনসমাগম হয়। শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রনাথ-প্রবর্তিত ধর্মীয় ও ঋতুউৎসবগুলির মাধ্যমেও তাঁকে শ্রদ্ধা নিবেদনের রীতি অক্ষুন্ন আছে। এছাড়াও বিভিন্ন উৎসবে ও অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রসংগীত গাওয়া বা রবীন্দ্ররচনা পাঠের রেওয়াজও দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এগুলি ছাড়াও কবির সম্মানে আরও কতকগুলি বিশেষ ও অভিনব অনুষ্ঠান পালন করা হয়। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় রাজ্যের আরবানাতে আয়োজিত বার্ষিক "রবীন্দ্র উৎসব", কলকাতা-শান্তিনিকেতন তীর্থ-পদযাত্রা "রবীন্দ্র পথপরিক্রমা" ইত্যাদি।[১০৫][১৮৩][১৮১]


জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, বর্তমানে কবির নামাঙ্কিত রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষাপ্রাঙ্গন
জীবদ্দশাতেই ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও পূর্ব এশিয়ায় প্রভূত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ইংল্যান্ডে ডার্টিংটন হল স্কুল নামে একটি প্রগতিশীল সহশিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান স্থাপনে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন তিনি।[১৮৪] অনেজ জাপানি সাহিত্যিককে তিনি প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এঁদের মধ্যে ইয়াসুনারি কাওয়াবাতার নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।[১৮৫] রবীন্দ্রনাথের গ্রন্থাবলি অনূদিত হয় ইংরেজি, ওলন্দাজ, জার্মান, স্প্যানিশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায়। চেক ভারততত্ত্ববিদ ভিনসেন্স লেনসি সহ একাধিক ইউরোপীয় ভাষায় তাঁর গ্রন্থ অনুবাদ করেন।[১৮৬] ফরাসি নোবেলজয়ী সাহিত্যিক আন্দ্রে জিদ্, রাশিয়ান কবি আনা আখমাতোভা [১৮৭], প্রাক্তন তুর্কি প্রধানমন্ত্রী বুলেন্ত একেভিত[১৮৮], মার্কিন ঔপন্যাসিক জোনা গেইল সহ অনেকেই অনুপ্রেরণা লাভ করেন রবীন্দ্রনাথের রচনা থেকে। ১৯১৬-১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে দেওয়া তাঁর ভাষণগুলি বিশেষ জনপ্রিয়তা ও প্রশংসা পায়। তবে কয়েকটি বিতর্ককে কেন্দ্র করে ১৯২০-এর দশকের শেষদিকে জাপান ও উত্তর আমেরিকায় তাঁর জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। কালক্রমে বাংলার বাইরে রবীন্দ্রনাথ "প্রায় অস্তমিত" হয়ে পড়েছিলেন।[১৮৯]
চিলিয়ান সাহিত্যিক পাবলো নেরুদা ও গ্যাব্রিয়েলা মিস্ত্রাল, মেক্সিকান লেখক অক্টাভিও পাজ ও স্প্যানিশ লেখক হোসে অরতেগা ওয়াই গ্যাসেৎ, থেনোবিয়া কামপ্রুবি আইমার, ও হুয়ান রামোন হিমেনেথ প্রমুখ স্প্যানিশ-ভাষী সাহিত্যিকদেরও অনুবাদের সূত্রে অনুপ্রাণিত করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৯১৪ থেকে ১৯২২ সালের মধ্যে হিমেনেথ-কামপ্রুবি দম্পতি রবীন্দ্রনাথের বাইশটি বই ইংরেজি থেকে স্প্যানিশে অনুবাদ করেছিলেন। দ্য ক্রেসেন্ট মুন (শিশু ভোলানাথ) সহ রবীন্দ্রনাথের বেশ কিছু রচনার বিস্তারিত পর্যালোচনা ও স্প্যানিশ সংস্করণ প্রকাশও করেছিলেন তাঁরা। উল্লেখ্য, এই সময়েই হিমেনেথ "নগ্ন কবিতা" (স্প্যানিশ: «poesia desnuda») নামে এক বিশেষ সাহিত্যশৈলীর উদ্ভাবন ঘটান।[১৯০]
রবীন্দ্রনাথের মূল বাংলা কবিতা পড়েননি এমন বহু পাশ্চাত্য সাহিত্যিক ও সাহিত্য সমালোচক রবীন্দ্রনাথের গুরুত্ব অস্বীকারও করেছিলেন। গ্রাহাম গ্রিন সন্দিগ্ধচিত্তে মন্তব্য করেছিলেন, "ইয়েটস সাহেব ছাড়া আর কেউই রবীন্দ্রনাথের লেখাকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন না।"[১৮৯] রবীন্দ্রনাথের সম্মানের কিছু পুরনো লাতিন আমেরিকান খণ্ডাংশ সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে। নিকারাগুয়া ভ্রমণের সময় সালমান রুশদি এই জাতীয় কিছু উদাহরণ দেখে অবাক হন।[১৯১]
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নামাঙ্কিত স্মারক ও দ্রষ্টব্যস্থল

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষাপ্রাঙ্গন।
রবীন্দ্র পুরস্কার — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার।
রবীন্দ্রসদন — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত কলকাতার একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাগৃহ ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রধান কার্যালয়।
রবীন্দ্র সেতু — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত হাওড়া ও কলকাতা শহরের মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী সেতু।
রবীন্দ্র সরোবর, কলকাতা — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত ভারতের একটি জাতীয় হ্রদ। এটি কলকাতার বৃহত্তম হ্রদ।[১৯২]
রবীন্দ্রনাথ সড়ক, যশোর, বাংলাদেশ । 'মনিহার' সিনেমা হল থেকে চৌরাস্তার (চার রাস্তা) মোড় এর মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী রাস্তা ।
পাদটীকা

^ ক:  তাঁর প্রথম রচনা, "মীনগণ দীন হয়ে ছিল সরোবরে / এখন তাহারা সুখে জলে ক্রীড়া করে।"
^ খ: রবীন্দ্রনাথের জন্ম হয়েছিল ৬ নং দ্বারকানাথ লেনের জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির মূল বাসভবনে। এই বাড়িতেই বাস করতেন ঠাকুর পরিবারের জোড়াসাঁকো শাখাটি। পারিবারিক বিবাদের কারণে এই শাখাটি মূল পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। জোড়াসাঁকো বর্তমানে উত্তর কলকাতার রবীন্দ্র সরণির (তৎকালীন চিৎপুর রোড) নিকটস্থ।[১৯৩]
^ গ:  স্টকহোমে সুইডিশ একাডেমী নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করেছিল ১৩ নবেম্বর ১৯১৩ তারিখে।[১৯৪]
^ ঘ:  যেমন বেহাগ বা খাম্বাজ রাগিনীতে কোমল ধৈবত প্রয়োগ সিদ্ধ হয় না ; কিন্তু "আমার নিশীথ-রাতের বাদল-ধারা / এসো হে গোপনে / আমার স্বপন-লোকে দিশাহারা" গানটিতে রবীন্দ্রনাথ উদ্দীষ্ট আবেগ ফুটিয়ে তুলতে কোমল ধৈবত লাগিয়েছেন।
↑ ১.০ ১.১ "সংক্ষিপ্ত রবীন্দ্র-বর্ষপঞ্জি", রবীন্দ্রজীবনকথা, প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা, ১৩৮৮ ব. সংস্করণ, পৃ. ১৯১ ও ১৯৭
↑ সর্বজনের রবীন্দ্রনাথ, অধ্যাপক শুভঙ্কর চক্রবর্তী সম্পাদিত, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা, ১৪১২ ব., পৃ. ৭
↑ বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস, চতুর্থ খণ্ড, সুকুমার সেন, আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা, ১৯৯৬ সংস্করণ, পৃ. ১
↑ বঙ্গসাহিত্যাভিধান, তৃতীয় খণ্ড, হংসনারায়ণ ভট্টাচার্য, ফার্মা কেএলএম প্রাঃ লিঃ, কলকাতা, ১৯৯২, পৃ. ৫০
↑ ৫.০ ৫.১ সর্বজনের রবীন্দ্রনাথ, পৃ. ২৫
↑ সর্বজনের রবীন্দ্রনাথ, পৃ. ২৮
↑ ৭.০ ৭.১ সর্বজনের রবীন্দ্রনাথ, পৃ. ৩১
↑ সর্বজনের রবীন্দ্রনাথ, পৃ. ৩৩
↑ "গ্রন্থপরিচয়", গল্পগুচ্ছ, চতুর্থ খণ্ড, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিশ্বভারতী গ্রন্থণবিভাগ, কলকাতা, ১৩৭০ সং, পৃ. ৮৭৭-৭৯
↑ ১০.০ ১০.১ "রবীন্দ্রনাথের গানের সংখ্যা", গীতবিতানের জগৎ, সুভাষ চৌধুরী, প্যাপিরাস, কলকাতা, ২০০৬, পৃ. ১৭১
↑ সংসদ বাংলা সাহিত্যসঙ্গী, ড. শিশিরকুমার দাশ, সাহিত্য সংসদ, ২০০৩, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, পৃ. ১৮৫
↑ ১২.০ ১২.১ ১২.২ সর্বজনের রবীন্দ্রনাথ, পৃ. ৩৪-৩৫
↑ ১৩.০০ ১৩.০১ ১৩.০২ ১৩.০৩ ১৩.০৪ ১৩.০৫ ১৩.০৬ ১৩.০৭ ১৩.০৮ ১৩.০৯ ১৩.১০ ১৩.১১ সর্বজনের রবীন্দ্রনাথ, পৃ. ৪১
↑ O'Connell, KM (December 2008), "Red Oleanders (Raktakarabi) by Rabindranath Tagore—A New Translation and Adaptation: Two Reviews", Parabaas, r হয়েছে: 13 August 2009
↑ Datta, Pradip Kumar (2003), Introduction, Rabindranath Tagore's The Home and the World: A Critical Companion, প্রকাশক: Orient Longman, p. 2, আইএসবিএন 8-1782-4046-7
↑ Kripalani, Krishna (1971), Ancestry, Tagore: A Life, প্রকাশক: Orient Longman, pp. 2–3, আইএসবিএন 8-1237-1959-0
↑ Kripalani, Krishna (1980), Dwarkanath Tagore (1st সম্পাদিত), pp. 6, 8
↑ Thompson 1926, p. 12
↑ "রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর", প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, ভারতকোষ, পঞ্চম খণ্ড, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, কলকাতা, ১৯৭৩, পৃ. ৪০৫
↑ Some Songs and Poems from Rabindranath Tagore, প্রকাশক: East-West Publications, 1984, p. xii, আইএসবিএন 0-8569-2055-X
↑ রবীন্দ্রজীবনকথা, পৃ. ১৯১
↑ ২২.০ ২২.১ ২২.২ ২২.৩ ২২.৪ সর্বজনের রবীন্দ্রনাথ, পৃ. ৮
↑ ২৩.০ ২৩.১ ২৩.২ ২৩.৩ সর্বজনের রবীন্দ্রনাথ, পৃ. ৯
↑ সর্বজনের রবীন্দ্রনাথ, পৃ. ১০
↑ ২৫.০ ২৫.১ ভারতকোষ, পঞ্চম খণ্ড, পৃ. ৪০৬
↑ রবীন্দ্রজীবনকথা, পৃ. ১৯৫
↑ ২৭.০ ২৭.১ রবীন্দ্রজীবনকথা, পৃ. ১৮৫-৮৬
↑ বঙ্গসাহিত্যাভিধান, তৃতীয় খণ্ড, পৃ. ৪৯-৫০
↑ বঙ্গসাহিত্যাভিধান, তৃতীয় খণ্ড, পৃ. ৫০
↑ সর্বজনের রবীন্দ্রনাথ, পৃ. ৪৩-৪৪
↑ সর্বজনের রবীন্দ্রনাথ, পৃ. ৩২
↑ সর্বজনের রবীন্দ্রনাথ, পৃ. ৪৫
↑ সর্বজনের রবীন্দ্রনাথ, পৃ. ৪৬
↑ সর্বজনের রবীন্দ্রনাথ, পৃ. ৪৭-৪৮
↑ রবীন্দ্রনাথের পূর্ণাঙ্গ শিক্ষাদর্শে সঙ্গীত ও নৃত্য, শান্তিদেব ঘোষ, আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা, ১৯৭৮, পৃ. ৯
↑ সর্বজনের রবীন্দ্রনাথ, পৃ. ৩৬
↑ রবীন্দ্র-সঙ্গীত-কোষ, সুরেন মুখোপাধ্যায়, সাহিত্যপ্রকাশ, কলকাতা, ১৪১৬, পৃ. ৪৮ ও ১৫৪
↑ সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, ২০০২, পৃ. ২১৯
↑ রবিজীবনী, প্রথম খণ্ড, প্রশান্তকুমার পাল, ভুর্জপত্র, কলকাতা, ১৩৮৯, পৃ. ২১ ও ২৫
↑ Dutta & Robinson 1995, p. 37
↑ "ব্রাহ্মধর্ম, ব্রাহ্মসমাজ", প্রভাত বসু, ভারতকোষ, পঞ্চম খণ্ড, পৃ. ১৯৬-৯৭
↑ "দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর", রবিজীবনী, প্রথম খণ্ড, প্রশান্তকুমার পাল, পৃ. ১৯
↑ Archeologists track down Tagore’s ancestral home in Khulna, The News Today,, 28 April 2011, http://www.newstoday.com.bd/index.php?option=details&news_id=26140&date=2011-04-29, r হয়েছে: 20 July 2011, "Archeologists tracked down the ancestral home of Nobel Laureate Rabindranath Tagore at Pithabhog village under Rupsha Upazila of Khulna, Bangladesh."
↑ ৪৪.০ ৪৪.১ Thompson 1926, p. 20
↑ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনস্মৃতি (অধ্যায়: "ভৃত্যরাজক তন্ত্র"), বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ, কলকাতা, পৃ. ২১-২৪
↑ সর্বজনের রবীন্দ্রনাথ, পৃ. ৭
↑ ভারতকোষ, পঞ্চম খণ্ড, পৃ. ৪০৫
↑ Thompson 1926, pp. 21–24
↑ Das, S (02 August 2009), Tagore’s Garden of Eden, r হয়েছে: 14 August 2009, "[...] the garden in Panihati where the child Rabindranath along with his family had sought refuge for some time during a dengue epidemic. That was the first time that the 12-year-old poet had ever left his Chitpur home to come face-to-face with nature and greenery in a Bengal village."
↑ ৫০.০ ৫০.১ রবীন্দ্রজীবনকথা, পৃ. ১৯১
↑ ৫১.০ ৫১.১ ৫১.২ ৫১.৩ রবীন্দ্রজীবনকথা, পৃ. ১০-১১
↑ Dutta & Robinson 1995, pp. 55–56
↑ Stewart & Twichell 2003, p. 91
↑ Stewart & Twichell 2003, p. 3
↑ ৫৫.০ ৫৫.১ ৫৫.২ ৫৫.৩ Chakravarty 1961, p. 45
↑ Dutta & Robinson 1997, p. 265
↑ প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, রবীন্দ্রজীবনকথা, পৃ. ১৬
↑ সর্বজনের রবীন্দ্রনাথ, পৃ. ২৩
↑ ৫৯.০ ৫৯.১ ৫৯.২ ৫৯.৩ ৫৯.৪ ৫৯.৫ রবীন্দ্রজীবনকথা, পৃ. ১৮-১৯
↑ Thompson 1926, p. 31
↑ ৬১.০ ৬১.১ ৬১.২ "জীবনপঞ্জি: মৃণালিনী দেবী", চিঠিপত্র, প্রথম খণ্ড, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ, কলকাতা, ১৪০০ সং, পৃ. ১৭৯-৮১
↑ Dutta & Robinson 1995, p. 373
↑ শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথ, প্রমথনাথ বিশী, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ, কলকাতা, ১৩৯৫ সংস্করণ, পৃ. ১৮
↑ Dutta & Robinson 1995, pp. 109–111
↑ Scott, J., (2009.), Bengali Flower, p. 10, আইএসবিএন 144863931X, "In 1890 Tagore wrote Manasi, a collection of poems that contains some of his best known poetry. The book has innovations in Bengali forms of poetry, as well as Tagore's first social and political poems. He published several books of poetry while in his 20s."
↑ Dutta & Robinson 1995, p. 109
↑ রবীন্দ্রজীবনকথা, পৃ. ৫৬-৫৭
↑ "শান্তিনিকেতন", প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, ভারতকোষ, পঞ্চম খণ্ড, পৃ. ৪৭৮-৭৯
↑ Dutta & Robinson 1995, p. 133
↑ রবীন্দ্রজীবনকথা, পৃ. ৫৯-৬০
↑ রবীন্দ্রজীবনকথা, পৃ. ১৯৩
↑ ৭২.০ ৭২.১ রবীন্দ্রজীবনকথা, পৃ. ১৯৪
↑ রবীন্দ্রজীবনকথা, পৃ. ৬৩-৬৬
↑ রবীন্দ্রজীবনকথা, পৃ. ৬৭ ও ১৯৪
↑ ৭৫.০ ৭৫.১ রবীন্দ্রজীবনকথা, পৃ. ৬৯
↑ Dutta & Robinson 1995, pp. 139–140
↑ রবীন্দ্রজীবনকথা, পৃ. ২০২-০৪
↑ সর্বজনের রবীন্দ্রনাথ, পৃ. ২৫
↑ Hjärne, H (10 December 1913), The Nobel Prize in Literature 1913:Presentation Speech, প্রকাশক: The Nobel Foundation, r হয়েছে: 13 August 2009, "Tagore's Gitanjali: Song Offerings (1912), a collection of religious poems, was the one of his works that especially arrested the attention of the selecting critics."
↑ Rabindranath Tagore - Calcuttaweb
↑ ৮১.০ ৮১.১ শ্রীনিকেতনের গোড়ার কথা, সত্যদাস চক্রবর্তী, সুবর্ণরেখা, কলকাতা, ২০০১, পৃ. ২-১২
↑ অনাথনাথ দাস, শান্তিনিকেতন ও শ্রীনিকেতন: সংক্ষিপ্ত পরিচয়, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ১৯৮৮, পৃ. ৫৩
↑ Dutta & Robinson 1995, pp. 239–240
↑ Dutta & Robinson 1995, p. 242
↑ Dutta & Robinson 1995, pp. 308–309
↑ Dutta & Robinson 1995, p. 303
↑ Dutta & Robinson 1995, p. 309
↑ রবীন্দ্রজীবনকথা, পৃ. ২০৬-০৮
↑ "Chitra at Project Gutenberg"
↑ সর্বজনের রবীন্দ্রনাথ, পৃ. ২৭
↑ ৯১.০ ৯১.১ বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস, চতুর্থ খণ্ড, পৃ. ৪১৫
↑ রবীন্দ্রকল্পনায় বিজ্ঞানের অধিকার, ড. ক্ষুদিরাম দাস, আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা, ১৯৮৪, পৃ. ৪-৫
↑ "Tagore, Rabindranath", Banglapedia (Asiatic Society of Bangladesh), r হয়েছে: 13 August 2009
↑ Dutta & Robinson 1995, pp. 312–313
↑ Dutta & Robinson 1995, pp. 335–338
↑ Dutta & Robinson 1995, p. 342
↑ ৯৭.০ ৯৭.১ ৯৭.২ ৯৭.৩ ৯৭.৪ Dutta & Robinson 1995, p. 338
↑ "Recitation of Tagore's poetry of death", Hindustan Times (Indo-Asian News Service), 2005
↑ Dutta & Robinson 1995, p. 367
↑ Dutta & Robinson 1995, p. 363
↑ ১০১.০০ ১০১.০১ ১০১.০২ ১০১.০৩ ১০১.০৪ ১০১.০৫ ১০১.০৬ ১০১.০৭ ১০১.০৮ ১০১.০৯ ১০১.১০ ১০১.১১ ১০১.১২ ১০১.১৩ ১০১.১৪ ১০১.১৫ সর্বজনের রবীন্দ্রনাথ, পৃ. ২০-২২

শুক্রবার, ৬ এপ্রিল, ২০১২











পলাশ



পলাশ




শুন্ন শাখায় পলাশ ফুটেছে

স্বপ্নের মত ডালে ,

গন্ধ বিহীন রুপ লাবন্যে

সরমেতে ফোটে ডালে ।

বন্য তবুও সুন্দর সে

অনাদরে ঝরে পডে ,

অগম্য বনানী সরু বাঁকা পথে

পথিকের চোখে পডে ।

জানেনা কার অভিশাপে সে

ধরায় লুটিয়া পডে ,

বিরহ বৈশাখের উত্তপ্ত যৌবনে

অবহেলায় ঝরিয়া পডে ।

কেউ তারে দেয়না স্নেহের পরশ

কেউ রাখেনা ফুলদানিতে ,

বুনো ফুলের শোভা আছে শুধু

গন্ধ নেইত তাতে ।

তাইত অভিমানে পলাশ

গাইছে তার ই গাথা ,

মনে রেখ এই শ্যামল বনানিতে

আমি আছি তুলে মাথা ।

***/ত্রিভুবনজিৎ মুখাজী /***

প্রেম


আমার পায়ের তলার মাটি থাক বা না থাক
আমার মাথার ওপরে আকাশ থাক বা না থাক
আমার হৃদয়ে, তোমার জন্য প্রেম আছে এবং থাকবে
যাকনা এ দুনিয়াটা বদলে যাক
তবুও আমার মনের জানলাতে উঁকি মারবে
কেবলি তুমি তুমি আর তুমি !!!!

ঝর্না চ্যাটার্জি

আয়োজনের কমতি ছিলনা কোথাও
সেই বাঁধানো ঘাট, বকুল গাছ
চাতালে বসে অভিমান
এমনকি জলে ডোবা গাছের নীচ্য ডালে
শিশুদের চীৎকার ও
শুধু, শৈবলিনী কথা রাখেনি
ছিল না সে কোথাও ।

তারপরেও কেটে গেছে অনেকগুলো বছর
চন্দ্রশেখর এখনও পড়ায় এই গ্রামেরই স্কুলে
ছেলেবেলার বন্ধুরা সব আছে যে যার মতন
মেয়েরা শ্বশুরঘরে

সেদিন দুপুরবেলায়

হঠাৎ ই মাঝপথে
ইস্কুলের খাতা হাতে ছোট্ট এক মেয়ে
গুটি গুটি এসে ঢোকে পুরোন সেই ঘরে
বাঁধানো চাতাল ধারে
চন্দ্রশেখর চেয়ে দ্যাখে সেদিনের সেই নারীর
হাতের আঙ্গুল ধরা আছে ছোট্ট এই মেয়ের
চোখ তুলে কথা বলার আগেই,
দু-হাত তুলে মাফ চেয়ে নারী বলে,
‘এখনো আছে বকুল গাছ,বাঁধানো সেই ঘাট,এখনো আছ তুমি
সেদিন যেটা পারিনি,আজকে শুধব আমি’...

চোখের সামনে উথাল-পাথাল ঢেউ
লোক, লস্কর সবাই এলো ছুটে
বিস্তর হলো খোঁজা
পেল না তাকে কেউ
শৈবালিনী রাখলো কথা অনেকবছর পরে......

ঝর্না চ্যাটার্জি


প্রিয়া

স্বপ্নের আকাশে তুমি যে মোর প্রিয়া
দেখি তাই তোমারে দু চোখ ভরিয়া
মনের পিপাসা ভুলাই তারে চেয়ে
তুমি যে আমার অতি আপনার প্রিয়ে
দু হাত তুলিয়া চাহি আকাশ পানে
আছ তুমি যদিও আমারি প্রাণে
দু চোখ ভরিয়া দেখি তোমার’ ই ছবি
হৃদয়ে মোর আছে যে তোমার ই ছবি
নির্জন নিশীথের তুমি যে তারা
নিস্পাপ হৃদয়ের তুমি সুক্তারা ।

:// ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী//

আজব দেশের আজব রাজা
আজব দেশের আজব কান্ড .. আজব তাদের চাল
আম গাছেতে জাম ফলেছে ..জাম গাছেতে তাল
আজব দেশের আজব রাজা .
কথায় কথায় দেন যে সাজা
রাজার রাতে ঘুম হয়না
রাজ্য জুড়ে বাজে বাজনা
রাতের ব্যালায় কাজ করো
দিনের ব্যালায় ঘুমিয়ে মর
গানের তালে মাথা নড়ে
সুরের লয়ে কান যে নড়ে
রানীর ভাগ্যে রাজা আছে
গোম্ফ দুটো যা আস্ত আছে
রানী গেলেন বাপের বডি
রাজার মাথায় পড়লো বাডি
পাত্র মন্ত্রী কেউ আসেনা
বডি হোল গোসল খানা
রাতে সবাই ঘুমিয়ে বাঁচলো
দিনের বেলায় কাজ করলো
আজব দেশে ফুটল হাঁসি
তাই দেখে আমি মুচকি হাঁসি
/ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জি/

টুক টুক খুট খাট করে যেন বাজি মাত

গুন গুন করে গান গাই তবু পাই না কোথাউ কাহারে

সন সন করে হাওয়া বয় তবু পাই না আহার; আহারে !

ফুস ফুস করে কথা বলে সব কেউ যেন আছে বাইরে

ঘস ঘস করে ঘোষে মেজে দেয় চক চক করে আহারে !!

টুক টুক করে কাটে যে ইঁদুর চট পট ছোটে দেখরে

খস খস করে লেখে যে ছেলেটা মুখ টিপে মা’ হাঁসেরে !!!

ঠক ঠক করে কাঁপে যে জরে অসুধ ত কাজ দেয় নারে

সোঁ সোঁ করে ট্রেন টা ছুটেছে ওই দেখ দূর পারে রে !

ঝপ ঝপ করে বৃষটি নামলো দুম দাম পডে তালরে

খোঁজ খোঁজ কোথা গেল যে মিলি এই বৃষটি তে বাইরে !!

পোঁ পোঁ করে ছুটছে ছেলেরা বল হাতে করে মাঠেরে

ধপ ধপ করে বুকটা কাঁপে যে মিলি এল কিনা দেখরে !!!

টুক টুক করে মিলি এল চলে মুখে তার হাঁসি দেখরে

টক টক করে কথা যে বলে চন মন করে মন হায়রে

হুস হুস করে হুলকে তাডায়, রান্নাঘরে কে ?দেখরে

হাম হাম করে, মাছ ভাত খায় ডর ভয় তার নেইরে



কবিতাগুচ্ছ - বাংলা
কবিতার ই-পত্রিকা
কবিতা হৃদয়ের স্পন্দন , কিছু চাওয়া পাওয়ার অভিব্যক্তি্‌ ,মানুসের কল্পনাকে কাগাজে তুলে ধরা নানাচিত্র । তাতে কল্পনা বাস্তব দুটর ই সম্মিশ্রন থাকে । থাকে কিছু অনুভুতি ,প্রেরনা আর অবসাদ । কবিতাগুচ্ছ সেই রকম কিছু মানুসের সন্ধানে যারা ভালবাসেন নিজের ভাষা ,মাত্রিভুমি এবম নিজের মাত্রিভাষাকে । ...। ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জি । ...