কবি অলক বিশ্বাসের নতুন কাব্য-সংকলনের নাম ‘মন
খারাপের গল্প’ । প্রকাশিত হয় এবছরের কলকাতা বইমেলায়, প্রকাশক বাংলার মুখ প্রকাশন ।
কবি অলক বিশ্বাস এই সময়ের এক প্রতিষ্ঠিত কবি, নানান পত্র-পত্রিকায় ও অন্তর্জাল পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয় । ‘মন খারাপের গল্প’ তাঁর পঞ্চম কাব্য-গ্রন্থ । প্রথম কাব্য সংকলন ‘জলবিছানা’ প্রকাশিত হয়েছিল ২০০৭এ । অলকের আগের কাব্য-গ্রন্থ ‘ঈশ্বরবাড়ি’ প্রকাশিত হয়েছিল জানুয়ারি ২০১২তে , সুতরাং ধরে নিতে পারি আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলির রচনাকাল ২০১২তেই ।
কবি অলক বিশ্বাস এই সময়ের এক প্রতিষ্ঠিত কবি, নানান পত্র-পত্রিকায় ও অন্তর্জাল পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয় । ‘মন খারাপের গল্প’ তাঁর পঞ্চম কাব্য-গ্রন্থ । প্রথম কাব্য সংকলন ‘জলবিছানা’ প্রকাশিত হয়েছিল ২০০৭এ । অলকের আগের কাব্য-গ্রন্থ ‘ঈশ্বরবাড়ি’ প্রকাশিত হয়েছিল জানুয়ারি ২০১২তে , সুতরাং ধরে নিতে পারি আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলির রচনাকাল ২০১২তেই ।
ছত্রিশটি কবিতা নিয়ে অলকের এই কবিতা সংকলন। আবার
সাতচল্লিশটি কবিতার সংকলনও বলতে পারি । শুরুতেই – ‘মন খারাপের গল্প’ শিরোনামে যে দীর্ঘ কবিতাটি
রেখেছেন, সেটি ১২টি খন্ড কবিতার মালা । ‘মন খারাপের গল্প’ নামটি বেশ ইঙ্গিতবাহী ,
এই নামটির মধ্যেই লুকিয়ে আছে বিষন্নতা , সংশয়, ক্লান্তি । আর এখান থেকেই পাঠক কবির
বিষন্নতার, ক্লান্তির সূত্র সন্ধান করবেন ।
‘মন খারাপের গল্প’ নামে দীর্ঘ কবিতাটি অথবা তাঁর
শরীরে গাঁথা ১২টি খন্ড কবিতার পংক্তিমালায়, কবির প্রচ্ছন্ন বিষাদ বোধ - “চাদের
কাছে বেদনার কথা বলা বৃথা, তবুও - / আঁধারে লুকোলে সে কেন যে নিঃসঙ্গ হই খুঁজে
খুঁজে মরি অতলান্ত আকাশে/কেন গো সই” ? ... সারাটা দিনের হিসেবের খাতা দেখি প্রত্যহ
/ ঝুড়ি ঝুড়ি মাখা অবসাদ, দিনশেষে ওড়ে বিশ্বময়” । তবুও এই কবিতাটি বা সংকলিত
কবিতাগুলি কখনোই একান্ত নিজস্ব ‘বিষাদ গাথা’ হয়ে ওঠেনি । বরং “যে বৃষ্টি
ভিজিয়েছিল, এতদিন পরেও থেকে গেছি ঋণী তার কাছে / সে কারণেই এই গল্প বলা । একা একা
পথ চলা”। সেই পথেই কবি দেখেন “নতুন ধানের গন্ধে বাঁধ ভাঙা হাওয়া লেখে নতুন
স্বরবর্ণ”...কবি দেখেন “রাজপথে ঘুম ভাঙা ইতিহাস । সমবেত মানুষেরা হাসছে-কাঁদছে-গাইছে
হৃদয়ের কলি” । তাহলে ‘মন খারাপের গল্প’কে কবির একান্ত ব্যক্তিক বিষাদগাথা বলি কি
করে !
সংকলনটিতে ‘গল্পকথা’ শিরোনামে নটি বাক্যের অতি
ক্ষুদ্র ভুমিকায় কবি বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত জানিয়েছেন “মন খারাপের গল্প’র মূল ভাবনা
প্রেম । এই প্রেমের সঙ্গে কবি কোথাও কোথাও জারিত করেছেন প্রকৃতিকে , লিপ্সাকে এবং
গোপন পাপকেও” । কবিতাগুলির মূল ভাবনা প্রেম অবশ্যই, তা কিন্তু ব্যক্তিক প্রেম নয় বরং
প্রকৃতির রহস্যের মাঝে আমাদের পারিপার্শ্ব ও চলমান সময়ের অনুষঙ্গে মহত্তর জীবনের
যে বোধ, ব্যঞ্জনাময় পংক্তিমালায় উজাড় করা প্রেম সেই বোধ’এর জন্যেও । আমি এভাবেই
বুঝেছি সংকলিত কবিতাগুলিকে । “বিষাদ যেটুকু নিজেকে ভেঙে / সুচতুর গিলেছে
দেহতাপ,...”(‘চাদর’)। তবুও কবির প্রত্যয়ী উচ্চারণ “যে মিছিলে হেঁটে হেঁটে হয়েছি
বড়ো / অন্ধকার সমুদ্র পার করে আমাকে দিয়েছে রদ্দুর / সেই গঙ্গায় রেখেছি বিশ্বাস”
(‘শঙ্খচূড়’) । সুতরাং ‘প্রকৃতি’ , ‘লিপ্সা’ বা ‘গোপন পাপ’ সংকলিত কবিতাগুলির ভাব
বীজ নয় । বরং বইটির শেষ প্রচ্ছদ-লিপির বয়ানটিকেই মান্যতা দেব,' যা থেকে জানতে পারি “কুয়াশা রোদ্দুর
ভেঙে পলে পলে স্বপ্নের সেতু ছোঁয়া । এই ভাবে সকাল-দুপুর সন্ধ্যায় নিজেকে জড়ানো ।
দুচোখের ছবি ছবি নৈঃশব্দ চৌচির করে । কবি থাকেন মানুষের কাছাকাছি”। এখানেই যেমন
কবির মন খারাপের উপকরণ , এখানেই কবির অন্ধকার ভেঙে দেখা আলোর বীজ । কবি বলেন
“অন্ধকার ভেঙে দেখি যাকে দিয়েছি সব / হয়েছে আলোর বীজ, আমি কৌরব” (‘কৌরব’) । আমি এ
ভাবেই কবিতাগুলিকে বুঝতে চেয়েছি ।
বস্তুত আমরা কেউই ভালো নেই । না কি ভালো আছি ? এই রকম ভালো থাকা - প্রয়াত পূর্নেন্দু পত্রীর পংক্তিতে যেমন,
“চারকোণা সংসারের চতুর্দিকে গ্রীল এঁটে খুশী ...যে বাতাসে কাশের কথ্বক /
এয়ারকুলারে সেই বাতাসের বাসী গন্ধ পেয়ে বড় খুশী” । আমাদের বিষণ্ণতা লেখেন অলক একই
রকম ভাবে । “ ঘুমে আচ্ছন্ন মানুষ জানালায় হাওয়া খায় বটে / দক্ষিণের সেই পথে, ...
কালবৈশাখী আসে না এখানে” । (‘অর্ধেক তুমি’) । সংবেদনশীল কবি আমাদের যাপনের বিষাদ
গাথা লিখেছেন (না কি এঁকেছেন ?) ।
পাঠক কবিতার কাছে আসেন শব্দ সুষমার নিবিড় আকর্ষণে
। আলোচ্য সংকলনটিতে পাঠক বারবার ফিরে যেতে চাইবেন কবিতার শরীরে ধরা নিবিড় অর্থময়
অনেক পংক্তির কাছে, ‘ডুবু ডুবু সূর্য ছুঁয়ে যে মানুষ হারিয়েছে সাগর গভীরে’ (পয়লা
বৈশাখ), ‘ভালোবাসা কাছে এলে সমুদ্র দূরে চলে যায়’(ভালোবাসা কাছে এলে), ‘যে শব্দেরা
মিথ্যা কথা বলে / ধর্মকথা অকারণে/রদ্দুর ঠেলে দেয় দূরে’ (ঘুড়ি),’জোতদার সাজায়
তোমাকে পঁচিশে বৈশাখ’ (পঁচিশে বৈশাখ), এ গান সাহস লেখে, হৃদয়ের পতাকা ওড়ায়’মে
মাসের গান) । এরকম অনেক ব্যঞ্জনাময়
পংক্তি্র গভীরে ডুব দেবেন পাঠক ।
‘মন খারাপের গল্প’ আমাদের একলা যাপনের বিষাদগাথা
এবং একই সঙ্গে বিষন্নতা সংশয়, ক্লান্তি কে অতিক্রম করারও কাব্যগাথা । আমি একাত্ম
হই কবির ভাষায় – “মৃত্তিকা দিয়েছে জল, মহাভারতের ভাঁজে ভাঁজে ফসিল কথা/এত ফুল এত
ফল হৃদয় তরঙ্গে / স্পর্ধিত আমার পাহাড়” (‘স্বদেশ’) ।
বইটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন মেঘ অদিতি । মেঘ অদিতি
অত্যন্ত দক্ষ ও কুশলী শিল্পী তাঁর আঁকা উজ্বল প্রচ্ছদ বইটির আকর্ষণ বাড়িয়েছে ।
পরিপাটি মুদ্রনে বইটির মূল্য ৬৫টাকা ।
প্রথম কবিতা
এসো, এসো ঝর্ণাতলায় করি স্নান
এমন সুগন্ধবেলা ফুল ছুঁয়ে ছুঁয়ে
সাঁতারে ছোটাব জল
নদী হয়ে এসো নীল ...
তাকে রাখা ইচ্ছেকে বলো
ওখানে ফুটুক ফুল এ সময়
আমাদের চারপাশ সুশোভিত
মৌমাছি আয় আয় ...
সাজানো সংসারে পূর্ণ চাঁদের আলো
দুচোখে সমুদ্রে রাত জাগা রাত পোড়ে
সোহাগ নৌকা হারাবে হারাবে উদবেল
ঠোটে রেখে যা চুমু আজ অভিসারে ...
খুলে দাও বাঁশরী তুলোর বালিশ
বিষণ্ণ ভিজুক বৃষ্টিতে,
প্লাবন নদীর জলে
আমার প্রথম কবিতা ... ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন